জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের ফেসবুক পোস্টের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) গণমাধ্যমে এক প্রতিক্রিয়ায় সাদিক কায়েম বলেছেন, ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা হচ্ছে।সাদিক কায়েম বলেন, ‘আমি আমার যতগুলো বক্তব্য রেখেছি, আপনারা যদি ৫ আগস্টের পর সেগুলো দেখেন; তাহলে দেখবেন আমি সব জায়গায়ই বলেছি—জুলাই বিপ্লবের যদি কোনো মাস্টারমাইন্ড থাকে, যদি কোনো নায়ক থাকে—তাহলে তারা হলেন আমাদের শহীদরা এবং আমাদের গাজীরা। তাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা একটি ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এ জুলাই বিপ্লব ছিল আপামর জনতার স্বতঃস্ফূর্ত বিস্ফোরণ। এখানে সব মতের মানুষ নিজেদের ব্যক্তিগত মতভেদ ভুলে গিয়ে একটি কমন লক্ষ্য—ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য একত্রিত হয়েছি। যখন খুনি হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যায়, সেই সময় সরকার গঠন এবং পরবর্তী সময়ে, আমি কখনও ‘‘সমন্বয়ক’’ পরিচয়ে কোথাও গিয়ে কোনো কিছু দখল বা আত্মসাৎ করেছি—এমন একটি সিঙ্গেল ডকুমেন্টও কেউ দেখাতে পারবে না।’
শিবির নেতা বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে আমাদের মূল সারির যারা সমন্বয়ক ছিলেন, তারা যখন ১৯ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত অনুপস্থিত ছিলেন—তখন আমি কিছু কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেই সত্য কিছু ঘটনা আমি মাঝেমধ্যে আমার আলাপে এনেছি। যখন ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট হয়, কারফিউ জারি হয়—তখন সব কিছু বিচ্ছিন্ন ছিল। সেই সময় নয় দফা ফরমেশন, আমাদের দ্বিতীয় সারির সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ, তাদের সেফ হাউজে রাখার ব্যবস্থা, পাশাপাশি সব মিডিয়া হাউজে নয় দফা পৌঁছে দেয়া; ১৯ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের কর্মসূচি প্রণয়ন এবং দেশি-বিদেশি অসংখ্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা—এসব করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনাগুলো যদি জাতির সামনে না আসে, তাহলে ঐতিহাসিক বিকৃতি তৈরি হবে। এমন হাজারো ঘটনা রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি আমরা জানি। ইতিহাসের দায় থেকে আমরা আশা করবো—জাতি সবকিছু জানবে। ৫ আগস্টের পর দেখা গেছে, যারা ওই গুরুত্বপূর্ণ সময়—১৯ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত—অনেকে ‘‘গুমের নাটক’’ করেছে, কেউ আত্মগোপনে ছিল, আবার কেউ আন্দোলন ম্যানেজ করে ক্যাম্পাস খোলার আন্দোলন করেছিল, তারা ৫ আগস্টের পর মহাবিপ্লবী হয়ে উঠেছে।’
তার ভাষ্য, ‘৫ আগস্টের পর থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরজুড়ে আমরা আমাদের আহত ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছি, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু একই সময়ে যারা সমন্বয়ক পরিচয়ে ছিল, তাদের দেখেছি দখলদারিত্ব নিয়ে ব্যস্ত। ৫ আগস্ট যেটা বলা হচ্ছে—সেই সময় সকল অংশীজনের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। সায়ের ভাইও সেখানে ছিলেন। আমি মাহফুজ আলমকে বলেছিলাম, সরকার গঠনের রূপরেখা কী হবে, যখন হাসিনা পালাবে। আমরা নিজেরাও বলেছিলাম—এক দফার ঘোষণা মাঠ থেকেই আসবে; কোনো সেনাবাহিনীর দপ্তর বা অন্য কোনো জায়গা থেকে নয়। সরকার গঠনের বিষয়টি আমরা সবাই মিলে আলোচনা করে ঠিক করেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘এখন এইভাবে দোষারোপ করা, ভিত্তিহীন কথা বলা—যখন আমাদের মূলসারির কিছু যোদ্ধা তা করছেন, তখন তা আমাদের ব্যথিত করে। আমরা আশা করবো, তারা যেহেতু এখন দায়িত্বশীল অবস্থানে আছেন, তারা দায়িত্বশীল আচরণ করবেন। এখন যেসব বয়ান তুলে ধরা হচ্ছে, তা সবাইকে কষ্ট দিচ্ছে, বিভাজন তৈরি করছে। তবে কেউ যদি জুলাই নিয়ে ব্যবসা করতে চায়, চেতনার রাজনীতি করতে চায়—আমরা তাদের বিরুদ্ধেও আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’
সাদিক কায়েম বলেন, ‘আমি বলতে চাই- একটা প্রমাণ দেখাক। সাদিক কায়েম সমন্বয়ক পরিচয়ে এক বছরে কারও কাছ থেকে একটা পয়সা নিয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ করছি সেটা কেউ বলতে পারবে না। কিন্তু জুলাইকে পকেটবন্দী করা, এটা নিয়ে রাজনীতি করা, নিজেদের কোরামবাজি করা, এটা নিয়ে চাঁদাবাজি করা, যারা করছে তারা খুব খারাপ কাজ করছে। কিন্তু আমরা এসব জায়গায় নাই। আমরা শহীদদের আকঙ্ক্ষা, শহীদের স্পিরিট, সে আলোকে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই।’