ভারতের হামলায় পাকিস্তানে ৭০ জন নিহত হয়েছে। ভারতের দাবি নিহতরা সবাই ‘জঙ্গি’। তারা লস্কর-ই-তৈয়বা ও জেশ-ই-মোহাম্মদের সদস্য। খবর এনডিটিভির। তবে পাকিস্তানের আইএসপিআর ২৬ জন নিহতের কথা স্বীকার করেছে। পাকিস্তান পাল্টা জবাবে ভারতের ৫টি যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত করেছে ।
সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানিয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে হামলার জবাবে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পৃথক ৯ স্থানে ২৪ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করা হয়েছে।
পাকিস্তানে চালানো হামলাকে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে আখ্যা দিয়েছে ভারত। ওই সূত্র বলেছে, ‘এ হামলা সামরিক প্রতিক্রিয়ার চেয়েও বেশি কিছু ছিল। এটি ছিল কৌশলগত সংকল্পের একটি বিবৃতি। ভারত প্রমাণ করেছে, তারা সীমান্ত সন্ত্রাসবাদ সহ্য করবে না।’
এনডিটিভি বলছে, ভারতের হামলায় ৬০ জনের বেশি ‘জঙ্গি’ আহত হয়েছে। হামলাগুলো চালানো হয়েছে, মুজাফ্ফারবাদ, কোটলি, ভাওয়ালপুর, রাওয়ালকোর্ট, চাকসওয়ারি, বিমবের, নিলুম ভ্যালি, ঝেলহুম ও চাকওয়ালে।
ওই সূত্র বলছে, হামলার স্থানগুলো ‘জঙ্গি’দের হাব হিসেবে পরিচিত। সেখানে লস্কর-ই-তৈয়বা ও জেশ-ই-মোহাম্মদের ঘাঁটি রয়েছে। হামলার ফলে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
ভারত সরকারের সূত্র মতে, জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে লজিস্টিক সার্পোট দিত পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এমন প্রমাণ ভারতের গোয়েন্দাদের কাছে রয়েছে। এ হামলার লক্ষ্য ছিল, সেনাবাহিনী ও জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর গভীর সম্পর্ক উন্মোচন এবং তা ভেঙে ফেলা।
আরেকটি সূত্র বলছে, ভারত ও পাকিস্তান উভয়কে সংযত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে বৈশ্বিক নেতারা। ভারত নিজেদের প্রতিরক্ষায় এ হামলা চালিয়েছে বলে বৈশ্বিক নেতাদের জানিয়েছে।
এদিকে, পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, হামলায় ২৬ বেসামরিক নিহত ও ৪৬ জন আহত হয়েছে।বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিআরের মুখপাত্র লে. জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, ‘বেসামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান ভূখণ্ডের ছয় পৃথক স্থানে আকাশপথে ২৪টি হামলা চালিয়েছে ভারত। ভাওয়ালপুরের আহমেদপুর অঞ্চলে হামলায় ১৩ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে তিন বছর বয়সি দুই শিশু, সাতজন নারী ও চারজন পুরুষ রয়েছেন। এছাড়া সেখানে ৩৭ জন আহত হয়েছে, যার মধ্যে ৯ জন নারী ও ২৮ জন পুরুষ।’
এই সামরিক মুখপাত্র বলেন, মুজাফ্ফারবাদের বিলাল মসজিদে হামলায় তিনজন হতাহত হয়েছে। এর মধ্যে দুজন শিশু রয়েছে। কোটলির আব্বাস মসজিদে হামলায় দুই কিশোর-কিশোরী শহীদ হয়েছে। সেখানে মা ও মেয়ে আহত হয়েছে।’
এদিকে তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। এরপর থেকেই নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গুলিবিনিময় চলছে। এলওসি হচ্ছে আজাদ জম্মু ও কাশ্মীর (এজেকে) এবং ভারতীয় নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মধ্যে একটি কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা, বহুলভাবে সামরিকীকৃত সীমান্ত। এদিকে, ভারত তার সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে এবং নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে।
পাক -ভারত যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
এই দুই দেশ ১৯৪৭ সালের রক্তক্ষয়ী বিভাজনের পর থেকে একাধিকবার সীমান্তে সংঘর্ষ এবং পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের মধ্যে জড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত দুদেশের সংঘাতের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নিয়ে এক প্রতিবেদন করেছে জিও টিভি।
১৯৪৭: দেশভাগ; দুই শতাব্দীর ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে ১৫ আগস্ট, ১৯৪৭-এ। উপমহাদেশ ভাগ হয়ে সৃষ্টি হয় মুসলিম-প্রধান পাকিস্তান ও হিন্দু-প্রধান ভারত।এই বিভাজনে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ নিহত হয় এবং প্রায় দেড় কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
কাশ্মীরের রাজ্যটি কোন দেশে অন্তর্ভুক্ত হবে—এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। জাতিসংঘ-সমর্থিত এক অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে জানুয়ারি ১৯৪৯-এ ৭৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তরেখা তৈরি হয়, যা কাশ্মীরকে বিভক্ত করে।
১৯৬৫: কাশ্মীর যুদ্ধ, পাকিস্তান ১৯৬৫ সালের আগস্টে দ্বিতীয় যুদ্ধ শুরু করে, যখন তারা কাশ্মীর পুনর্দখলের চেষ্টা চালায়। হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়, এবং সেপ্টেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়।
১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ;১৯৭১ সালে পাকিস্তান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীনতা আন্দোলন দমনে সেনা মোতায়েন করে। ৯ মাসের এই যুদ্ধে আনুমানিক ৩০ লাখ মানুষ নিহত হন এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়। ভারত এই সময় পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ায়।
১৯৮৯-৯০: কাশ্মীর বিদ্রোহ;১৯৮৯ সালে ভারতীয় নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিদ্রোহ শুরু হয়। এই দীর্ঘ সংঘাতে সেনা, স্বাধীনতাকামী এবং সাধারণ মানুষসহ হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারান।
১৯৯৯: কারগিল যুদ্ধ;পাকিস্তানি সেনারা কাশ্মীরের কারগিল পাহাড়ি অঞ্চলে ভারতের সামরিক চৌকি দখল করে। যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কায় পাকিস্তান পিছু হটে। দশ সপ্তাহের এই যুদ্ধে অন্তত ১,০০০ মানুষ প্রাণ হারায়।
২০১৯: পুলওয়ামা হামলা;কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ৪০ সদস্য নিহত হয়। ভারত সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায়।
এই হামলার জবাবে পাকিস্তান ৫টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে এবং পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে আটক করে। পরে তাকে শান্তির বার্তা হিসেবে ওয়াঘা সীমান্তে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আজ. দৈ./কাশেম