জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র সাইফুল ইসলাম লিখন (৩৩) প্রায় আড়াই ধরে নিখোঁজ। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়েও তার কোন সন্ধান পাচ্ছেন না পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের অভিযোগ পরিকল্পিতভাবে তাকে অপহরণ করা হয়েছে। আর এই ঘটনায় মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় প্রথমে জিডি এবং পরে অপহরণ মামলা করা হয়েছে।
কিন্তু মুন্সীগঞ্জ পুলিশের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা পাচ্ছেন না ভিকটিমের পরিবার। যারফলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাইফুল ইসলাম লিখনকে ফিরে পেতে সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তারা মুন্সিগঞ্জ পুলিশের রহন্যজনক ভুমিকার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পক্ষ থেকে তদন্তে অনেকটা আন্তকিতা পাচ্ছেন বলে জানান।
আজ রোববার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে বাংলাদেশ ক্র্যাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান নিখোঁজ সাইফুল ইসলাম লিখনের পরিবার। তাদের স্থায়ী ঠিকানা মুন্সিগঞ্জ টঙ্গীবাড়িতে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লিখনের ছোট ভাই বাবু হাওলাদার। সংবাদ সম্মেলনে তার মা, বোন, ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তারা ভিকটিম লিখন এখনো ফিরে না পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়.সাইফুল ইসলাম লিখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করেছে। তাকে ব্যবসায়িক টাকা আত্মসাৎ করার জন্য অপহরণ করা হয়েছে বলে ধারণা পরিবারের। এই বিষয়ে প্রথমে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি ও অপহরণ মামলা দায়েরের পরেও মুন্সীগঞ্জ পুলিশের সহযোগিতা পাচ্ছেন না তারা। এমনকি নানা ঘটনায় তাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে একজন পুলিশ কর্মকর্তা লিখনের অপহরণের ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছেন এবং প্রকৃত অপরাধীকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। সর্বশেষ এ মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই। নির্মোহ থেকে এবং দক্ষতার সঙ্গে রহস্য উদঘাটনের সুনাম রয়েছে পিবিআই।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, লিখন নিখোঁজ হবার পর থেকে এই পরিবারের সদস্যরা স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। তাদের ধারণা, লিখনকে পরিকল্পিতভাবে বন্ধুরা মুন্সিগঞ্জ সদর থেকে অপহরণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় অপহরণের মামলা হয়েছে। এর আগে জিডি করা হয়। কিন্তু পুলিশ সহযোগিতা করছে না বলে তাদের অভিযোগ। মামলায় প্রকৃত আসামির নাম সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে পুলিশ আমাদের হেনস্তা করেছে।
পরিবারের ব্ক্তব্য গত বছরের সেপ্টেম্বরে লিখন মুন্সিগঞ্জ সদর দক্ষিণ ইসলামপুরের সাদ্দাম হোসেন সম্রাটের ঘনিষ্ঠ হয়। সেই সুবাদে মুন্সীগঞ্জে প্রায় আসা-যাওয়া ছিল লিখনের। বন্ধু সাদ্দামের মাধ্যমে আরো কিছু বন্ধু হয় তার। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- ইলিয়াস, রবিন, তপু, তানভীর, রাজীব, সাদ্দাম ও দেওয়ান।
ভিকটিম লিখন বিভিন্ন সময় মুন্সিগঞ্জ সদরে তার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে আসা-যাওয়ার সুবাদে লিখনকে তার বন্ধু সাদ্দাম বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যবসার প্রলোভন দেখান। লিখনের ইতালি যাওয়ার প্রসেস চলছিল। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে একটু সময় লাগবে বিধায় লিখন সাদ্দামের সঙ্গে ব্যবসা করার জন্য রাজি হন। এক পর্যায়ে সাদ্দামকে পাঁচ লাখ টাকা দেন।
আরেরা জানানো হয়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি লিখন মাকে জানান, মুন্সিগঞ্জ যাবেন, বন্ধু সাদ্দাম তাকে দাওয়াত দিয়েছেন। দুপুরে একটি জন্মদিন, রাতে একটি মুসলমানির অনুষ্ঠানও আছে। লিখন এও জানান, আসার সময় সাদ্দামের সঙ্গে ব্যবসায়িক হিসাব করে আসবেন। ওই দিন আনুমানিক বেলা ১১টায় মুন্সিগঞ্জ যাবেন বলে ওয়ারির বাসা থেকে বের হন।
পরিবারের পক্ষ থেকে বাবু হাওলাদার তার ভাই লিখনকে রাত ১১টা ১৪ মিনিটে ফোন করেন, বাসায় আসার জন্য। কিন্তু লিখনের মোবাইল ফোন বন্ধ পান এবং তার ফেসবুক মেসেঞ্জারে কল দিতে যেয়ে দেখি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ডিএক্টিভেটেড। ওই সময় তিনি লিখনের বন্ধু সাদ্দামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন।
সাদ্দাম তকে জানান, লিখন সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছেন। এরপর থেকে তার আর কোন সন্ধান পাচ্ছেন না বলে জানান। এরই বিষয়ে থানা পুলিশের পাশাপাশি প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
আ. দৈ./ কাশেম