বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সদিচ্ছা এবং সক্ষমতা প্রমাণের জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। তারা বলেছে, ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো নির্বাচন উপহার দিবে। আমরা তাদের একটু এসিড টেস্ট দেখতে চাই। আগে স্থানীয় নিবাচন দিন। আমরা দেখি আপনাদের সদিচ্ছা ও সক্ষমতা কতটুকু। যদি এতে জনগণ সন্তুষ্ট হয়, তাহলে পরবর্তীতে আপনাদের পূর্ণ সমর্থন দেবে। এখানে যদি আপনাদের কিছু ধরা পড়ে, তাহলে জনগণ আপনাদের হলুদ ও লাল কার্ড দেখাবে।
আজ শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) সকালে ময়মনসিংহ নগরীর সার্কিট হাউস মাঠে জেলা ও মহানগর জামায়াতের কর্মীসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সকাল ৯টায় সম্মেলন শুরু হয়ে বেলা ১২টায় শেষ হয়। মহানগর জামায়াতের আমীর কামরুল আহসান এমরুলের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগীয় সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ড. ছামিউল হক ফারুকী, জেলা জামায়াতের আমীর আব্দুল করিম, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর কামরুল হাসান, মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর আসাদুজ্জামান সুহেলসহ কেন্দ্রীয়, মহানগর ও জেলা নেতৃবৃন্দ। সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের মহানগর শাখার সেক্রেটারি অধ্যাপক শহীদুল্লাহ কায়সার এবং জেলার সেক্রেটারি মাওলানা মোজাম্মেল হক আকন্দ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘অতীতে যা চলল এখনো যদি তাই চলে, তাহলে এত রক্ত কেন ঝরল। এত জীবন গেল কেন। এ জাতির কাছে আমরা কীভাবে মুখ দেখাব। জঞ্জালমুক্ত, কলুষমুক্ত, দুঃশাসনমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রয়োজনে আমরা আরেকবার জীবন দিয়ে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকব। আমরা কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ আমরা মানব না। আমরা জনগণের সুবিধা দেওয়ার সব সুপারিশ মেনে নেব।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে দল ও ধর্মের মধ্যে কোনো অধিকারের ব্যবধান থাকবে না। দেশে সবার অধিকার ভোগ করা ন্যায্যতা থাকবে। আমরা একটি বৈষম্যমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত ও দুঃশাসনমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ চাই। সেই বাংলাদেশ অবশ্যই হতে হবে আল্লাহর বিধানের ভিত্তিতে। আল কুরআনের ভিত্তিতে।’
ঐক্যের শক্তিতে বিজয় আসবে জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি বা দলকে ক্ষমতায় বসানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়। এ বিজয়ের মাধ্যমে মানবতার বিধানকে মানুষের কাছে সামাজিকভাবে উপহার দেওয়া হবে। সোনার মানুষ গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই। সমাজে ন্যায়বিচার কায়েম করতে হলে নিজের ওপর ইনসাফ তৈরি করতে হবে। আল্লাহকে ভয় করতে হবে।’
নতুন রাজনীতির উত্থানে তরুণদের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত তোমাদের ন্যায্য দাবি পূরণ না হবে তোমরা এ লড়াই থেকে বিশ্রাম নিও না। তোমরা হবে আমাদের আগামীর নেতা। আমরা হব তোমাদের কর্মী। আমরা তোমাদের দেশ ও জাতির খেদমত করার সুযোগ করে দিতে চাই।’জামায়াতে আমির বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, তাদের দোসর ও প্রশাসনে কিছু কর্মকর্তা দেশ থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। এ টাকা দেশের বাজেটের প্রায় চার থেকে পাঁচ গুণ।’
বর্তমান সরকারকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, ‘সরকারে যারা আছে সবার দৃষ্টিভঙ্গি সমান না। এটা কোনো দলীয় আদলের সরকারও না। কেউ কেউ থাকে মক্কার দিকে, আবার কেউ কেউ থাকে মস্কোর দিকে। এই দোটানা অবস্থায় জাতির মাঝে মাঝে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যায়।’
নারী অধিকার সংস্কারের প্রতিবেদনের কথা টেনে ডা. শফিকুর বলেন, ‘সে রিপোর্টের বেশ কিছু জায়গায় কুরআন ও সুন্নাতের সম্পূর্ণ খেলাপ কিছু সুপারিশমালা পেশ করা হয়েছে। আমাদের প্রথম কথা হচ্ছে, যে কয়েকজন এ সুপারিশ পেশ করেছেন তারা এ দেশের সাড়ে ৯ কোটি মায়ের প্রতিনিধিত্ব করে না। তারা সমাজকে যে জায়গায় নিয়ে যেতে চান, আমরা সে জায়গায় তাদের নিতে দেব না ইনশাল্লাহ।’ এদিকে দীর্ঘ ১৭ বছর পর ময়মনসিংহ জামায়াতে ইসলামীর এই কর্মী সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্েয ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণে নগরীর সার্কিট হাউস মাঠে ৮০ হাজার স্কয়ার ফুটের সম্মেলনস্থল পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
আ. দৈ. /কাশেম