২৪ এপ্রিল দেশের পোশাক খাতের এক ভয়াবহ স্বরণীয় দিন আজ।২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল, রাজধানী ঢাকার সাভারের মর্মান্তিক সেই দুর্ঘটনায় ৯ তলা রানা প্লাজার ধ্বসে প্রাণ হারান ১,১৩৬ জন শ্রমিক। আহত উদ্ধার হন ২'হাজারের অধিক শ্রমিক, যাদের একটা অংশ পঙ্গু ও শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে অসহায় মানবেতর জীবন বয়ে বেড়াচ্ছেন।
ভয়াবহ এ ট্যাজেডির একযুগ পেরিয়ে গেলেও শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ও দোষীদের উপযুক্ত বিচারের দাবীতে থামেনি শ্রমিকদের হাহাকার আর করুন আর্তনাদ । ঘটনার পরই সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে নিহত শ্রমিক পরিবার আর আহত শ্রমিকদের দেয়া আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি রানা প্লাজার জমিতে তাদের পুনঃবাসনের ঘোষণাও দেয়া হয়। কিন্তু ভবন ধ্বসের ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও করা হয়নি কোন পুনঃবাসনের ব্যবস্থা। তাই রানা প্লাজার শ্রমিকদের দাবি দ্রুত শ্রমিকদের এক জীবনের ক্ষতিপূরণ ৪৮ লক্ষ টাকা, শ্রমিকদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, ২৪ এপ্রিল কে গার্মেন্টস শিল্পের শোক দিবস ঘোষনা, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, রানা প্লাজা ধসের জায়গাটি সরকার বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসন করার দাবি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে।
সুস্থ সবল শীলা, কাজ করতেন ধ্বসে পড়া রানা প্লাজার ষষ্ঠ তলার ইথার টেক্স লিমিটেড নামক গার্মেন্টস কারখানায়। নিত্যদিনের মতোই সকালে অন্যসব শ্রমিকদের সাথে কাজে যোগদেন শীলা। সেদিন সকালে বিদ্যুৎ চলে যাবার পর জেনারেটর চালু দিলে নটা বাজার কিছুসময় আগে কাঁপুনি দিয়ে ধ্বসে পড়ে ৯ তলা রানা প্লাজা। মর্মান্তিক সেই দুর্ঘটনার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন গুরুতর আহত শিলা। ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও সুস্থ হয়ে এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেননি। ডান হাত অকেজো, ভীমের নীচে চাপা পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মেরুদন্ড তার উপর শরীরে বাসা বেধেছে ভয়ানক সব শরীর। গার্মেন্টস শিল্পের কঠোর মনোবলের অধিকারী পরিশ্রমী এ যোদ্ধা শরীরের ক্ষত নিয়ে এভাবেই দাঁড়িয়ে আছেন রানা প্লাজার সামনে। অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন, অশ্রুসিক্ত নয়নে মুজছেন চোখের জল,হয়তো ভাবছেন সুস্থ জীবনের কথা । কথায় কথায় জানালেন দুর্বিসহ সে দিনের কথা, ক্ষত নিয়ে বয়ে বেড়ানো জীবনের কথা, শারীরিক অক্ষমতা, অসুস্থতা আর ক্ষোভের কথা।
সেই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে কাঁদছেন আফরোজা বেগম। নীরব স্টা্ইলের সাবেক সুইং অপারেটর। তার কণ্ঠে অশ্রুসিক্ত অভিমান, এই জায়গায় কত ভাই-বোন, সহকর্মীর রক্ত মিশে আছে জানি না। সেখানে এভাবে ময়লা ফেলা হবে, টয়লেট বানানো হবে—আমরা কখনো কল্পনাও করিনি। এটা আমাদের রক্তে ভেজা মাটি। এখানে আমাদের জন্য কিছু হোক। বারবার বলেছি, কেউ শোনেনি।
দুর্ঘটনা নয়, রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনাটিকে হত্যাকাণ্ড বলে মনে করেন শ্রমিক নেতারা। সরকারি হিসেবে ১,১৩৬ জন মারা গেলেও শ্রমিক নেতার দাবি এখনো পর্যন্ত মারা গেছে ১.১৭৫ জন শ্রমিক।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন,
আমরা জানি না কে ময়লা ফেলে, তবে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এতগুলো মানুষ মারা গেছে এখানে। এভাবে অপমানিত করা তাদের আত্মার প্রতি চরম অবহেলা। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি শ্রমিকদের এক জীবনের ক্ষতিপূরণ ৪৮ লক্ষ টাকা, শ্রমিকদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, ২৪ এপ্রিল কে গার্মেন্টস শিল্পের শোক দিবস ঘোষনা, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, রানা প্লাজা ধসের জায়গাটি সরকার বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসন করা।
ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের দাবি বিগত সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলেও সুদৃষ্টি দেননি ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের প্রতি, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষতিগ্রস্ত রানা প্লাজার শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াবেন এমনই আশায় রয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় রানা প্লাজার শ্রমিক ও শ্রমিক নেতারা।