ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের আমলে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন ও শেখ ফজলে নুর তাপসের প্রতিহিংসায় বিনা দোষে কারানির্যাতিত এবং টানা ১১ বছরে চাকরি থেকে বরখাস্ত ছিলেন বিএনপির কর্মী, স্প্রেম্যান মোঃ শরীফ হোসেন ওরফে ভোলা শরীফ। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে পাঠানো হয় কারাগারে। একই সাথে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর গত বছর ১৭ মে তাকে চাকরী থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়।
তবে ছাত্র জনতার গণআন্দোলনে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আর এর আগেই ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস সপরিবারে পালিয়েছেন। এরপরই ভাগ্য পরিবর্তন হয়, বিএনপি কর্মী শরীফ হোসেন ভোলার।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টদের পতনের পর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্ত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে আইনী প্রক্রিয়ায় যথাযর্থ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে চাকরিতে পুনরবহাল হয়েছেন । তিনি বর্তমান সরকার ও প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ছবিতে- শরীফ হোসেন ভোলা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ঢাকা সিটির সাবেক সফল মেয়র (বর্তমানে মরহুম) সাদেক হোসেন খোকার সাথে।
ডিএসসিসির কর্মচারী স্প্রেম্যান মোঃ শরীফ হোসেন বলেন, ছাত্রজীবন থেকে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় তিনি। ছাত্রজীবনে প্রথমে ছাত্রদল করতেন, বর্তমানে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন।
আজকের দৈনিক পত্রিকার এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি ১১ বছরের নির্যাতন এবং চাকরি থেকে বরখাস্তসহ আওয়ামী সরকারের আমলে অমানবিক হয়রানীর ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন। এক পর্যায়ে চোখের পানি ফেলতে থাকেন। গত ১১ টি বছর পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে কেটেছে তার জীবন। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটির দুই একজন বড় ভাইয়ের আন্তরিক সহযোগিতায় এ পর্যন্ত টিকে আছেন তিনি। ওই বড় ভাইদের আন্তরিক সহযোগিতায় চাকরিতে পুনর বহাল হয়েছেন। এখন ১১ বছরের বকেয়ার বেতন ভাতা পাবার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। তবে ওই বড় ভাইদের নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানান তিনি। কারণ অন্যরা হিংসা করতে পারেন। মোঃ শরীফ হোসেন তার ওই বড় ভাইদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ বলে জানান।
শরীফ হোসেন রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা বর্ননা করতে গিয়ে বলেন, ১৯৯৮ সালে অবিভক্ত ঢাকা সিটির সাবেক ৭৬ নং ওয়ার্ডের ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ওই সময়ের সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমানে ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল আলম মজনু ও হাবিবুর রশিদ হাবিব ভাইদের স্নেহে ছাত্র রাজনীতিতে আসেন শরীফ হোসেন। সেই থেকে বিএনপির রাজনীতে সক্রিয় রয়েছেন তিনি। শরীফ হোসেন প্রথমে সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সহ প্রচার সম্পাদক ছিলেন, বর্তমানে ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি’র প্রকাশনা সম্পাদক একই সাথে জিয়া স্মৃীতি পাঠাগারের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ প্রচার সম্পাদককের দায়িত্বে আছেন।
যে ভাবে তার ওপর নির্যাতন শুরু :
মোঃ শরীফ হোসেন বলেন, ২০১৫ সারে ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়, সায়দাবাদ থেকে তাকে সাদা পোশাকধারী পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এর দুইদিন পর ২৪ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে ডিএমপির যাত্রাবাডী থানায় একটি রাজনৈতিক ও মিথ্যে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নম্বর ৪৬। ওই মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের শ্রমিক দলের সহ প্রচার সম্পাদক মোঃ শরিফ হোসেন ভোলাকে ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের পাশে লামিয়া এন্টারপ্রাইজ নামে একটি দোকানের পাশ থেকে ধরা হয়। একই সাথে তার কাছ থেকে বিস্ফোরক দ্রব্য জব্দের কথা উল্লখ করা হয়। যাহা সম্পূর্ণ মিথ্যে। ও বানোয়াট ।
তিনি বলেন, পুলিশ ২০১৫ সালে ২২ ফেব্রুয়ারি তাকে গ্রেপ্তারের সময় তার স্ত্রী চার মাসের প্রেগন্যান্ট ছিলেন। দীর্ঘ সাড়ে ৫ মাস কারাগারে থাকার পর শশুর বাড়ির লোকজন গরু বিক্রি করে ওই টাকা দিয়ে আদালতে তার জামিন করান। পরে তিনি মুক্তি লাভ করেন। অথচ কারাগারে থাকাকালে তার নামে কেউ কেউ টাকা কালেকশন করেছেন। কিন্তু তিনি ওই সময় কোন টাকা পাননি ।
ছবিতে- শরীফ হোসেন ভোলা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে ।
শুধু তাইনয়, ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ শরীফ হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করে। ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এই বিভাগীয় মামলাটি ট্রাফিক সার্কেলে ইঞ্জিনিয়ার রাজীব খাদেম স্যারকে তদন্ত করে ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। কিন্ত দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরেও বিভাগীয় মামলার তদন্ত রিপোর্টটি জমা দেননি ওই কর্মকর্তা। তাকে রাজনৈতিক ভাবে ফাঁসানোর জন্য তৎকালীন ডিএসসিসির কর্মচারী লীগ নেতা ইব্রাহিম বিভাগীয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। শরীফ হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দিতে অনেক চাপ সৃষ্টি করেছেন ইব্রাহিম।
শরীফ হোসেন বলেন, পরে মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপসের নির্দেশে ডিএসসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান বিভাগীয় মামলাটি তদন্ত করেন। অত্যন্ত প্রতিহিংসা পরায়ন প্রকৌশলী আসিকুর রহমান। চতুর্থর্ শ্রেনির একজন কর্মচারী শরীফ হোসেনকে সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই এক তরফা রিপোর্টের ভিত্তিতে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যূত করার সুপারিশ করেন প্রকৌশলী আসিকুর রহমান। তার মতামতের ভিত্তিতেই গত বছর ১৭ মে স্প্রেম্যান শরীফ হোসেন ভোলাকে মেয়র তাপসের নির্দেশে ডিএসসিসির সচিব আকরামুজ্জামানের স্বাক্ষরে চাকরী থেকে স্থায়ী বরখাস্ত করা হয়।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ২০১৫ সালে তাকের সাময়িক বরখাস্তের পরই নিরুপায় হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জনাব তারেক রহমানের সাথে স্টাইপিতে কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই বিষয়ে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাহেবের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। এরপর মামলার নথিপত্র নিয়ে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাহেবের সাথে যোগাযোগ করলে,তিনি শরীফ হোসেনকে শান্তনা দেন এবং চাকরি ফেরত পাবার বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। কিন্তু এরপর শরীফ হোসেনকে আর কোন সহযোগিতা করেননি ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। এমনকি বিএনপির আইনজীবী নেতারাও।
ছবিতে- শরীফ হোসেন ভোলা, বিএনপির আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের সাথে
শরীফ হোসেন বলেন, ডিএসসিসিতে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন ও সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপসের আমলে বিএনপি সমর্থিত অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে নানা ভবে হয়রানী করা হয়েছে। ডিএসসিসিকে একটা দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত করেছেন তারা। এখনো আওয়ামীপন্থি কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী দাপটের সাথে সুবিধাজনক পদে আছেন বহাল আছেন। তারা বিএনপি সমর্থিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে বর্তামান প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। যারফলে তারা আরো সাহস পেয়ে যাচ্ছেন ।
তিনি বলেন, ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে আগের দায়ের হওয়া রাজনৈতিক ও হয়রানী মূলক মামলার অভিযোগ থেকে মুক্তির জন্য গত ১ জুন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। তার আবেদনটি আমলে নিয়ে শুনানি গ্রহণ করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব স্যার। শুনানিতে তাকে নির্দোষ ঘোষণা করেন এবং চাকরিতে পুনরবহালের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশনার পর শরীফ হোসেন গত ৯ মার্চ (২০২৫ সাল) ডিএসসিসির অঞ্চল-১ স্প্রেম্যান পদে চাকরিতে যোগদান করেন। বর্তমান প্রশাসন তাকে সমুদ্বয় বকেয়া প্রদানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
আ. দৈ. / কাশেম