বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫,
১৬ শ্রাবণ ১৪৩২
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
আন্তর্জাতিক
বাংলাদেশকে ভেঙে টুকরো টুকরো করতে চান ভারতীয় নেতা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Publish: Wednesday, 2 April, 2025, 12:10 PM  (ভিজিট : 239)

ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় ‘সেভেন সিস্টার্স’ খ্যাত সাতটি রাজ্য নিয়ে সম্প্রতি চীন সফরে গিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করা মন্তব্যে ভারতজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। 

ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় আরেক রাজ্য ত্রিপুরার রাজনৈতিক তিপরা মোথা পার্টির নেতা প্রদ্দূত মানিক্য বাংলাদেশকে টুকরো টুকরো করে ফেলার মতো বেফাঁস কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, উদ্ভাবনী এবং প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জের পেছনে বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ ব্যয়ের পরিবর্তে আমরা বাংলাদেশকে ভেঙে ফেলে সমুদ্রে নিজেদের পথ তৈরি করতে পারি। 

চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে সবসময় উপজাতিরা বসবাস করতেন, যারা ১৯৪৭ সাল থেকে ভারতের অংশ হতে চেয়েছিলেন। সেখানে ত্রিপুরা, গারো, খাসি এবং চাকমা জনগোষ্ঠীর লাখ লাখ মানুষ রয়েছেন; যারা বাংলাদেশে তাদের ঐতিহ্যবাহী ভূমিতে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বাস করেন। এটিকে আমাদের জাতীয় স্বার্থ ও তাদের কল্যাণের জন্য ব্যবহার করা উচিত।

দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের মুখ্যমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্যকে ‘আপত্তিকর’ বলে মন্তব্য করেছেন। আর দেশটির বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা পবন খেরা বলেছেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিষয়ে ঢাকার দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক এবং এই বিষয়ে কেন্দ্রের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। খবর এনডিটিভির।

চার দিনের চীন সফরে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন। 

তিনি বলেন, ‘ভারতের পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত সাতটি রাজ্য। এই রাজ্যগুলো ভারতের স্থলবেষ্টিত অঞ্চল। সমুদ্রে পৌঁছানোর জন্য তাদের যোগাযোগের কোনও উপায় নেই। এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক বাংলাদেশ।’

তিনি বলেন, ‘এটি বিশাল এক সম্ভাবনা উন্মোচন করে। এটি চীনা অর্থনীতির একটি সম্প্রসারণও হতে পারে।’ড. মূহাম্মদ ইউনূসের এই মন্তব্য নিয়ে ভারতের রাজনীতিবিদ, সাবেক আমলা ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত দিল্লি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সঞ্জীব সান্যাল প্রকাশ্যে কথা বলেছেন।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ড. ইউনূসের মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, ভারতের অন্যান্য অংশের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে সংযুক্ত করার জন্য আরও শক্তিশালী রেল ও সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা জরুরি।

তিনি বলেছেন, ‘ভারতের উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্যকে ল্যান্ডলকড (স্থলবেষ্টিত) এবং বাংলাদেশকে সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক হিসাবে উল্লেখ করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার এই মন্তব্য আপত্তিজনক এবং অত্যন্ত নিন্দনীয়। এই মন্তব্য ভারতের কৌশলগত ‘চিকেনস নেক’ করিডোর নিয়ে দীর্ঘদিনের দুর্বলতার ন্যারেটিভকেই তুলে ধরে।’

ভারতের ‘চিকেনস নেক’ খ্যাত করিডোরটি পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির এক প্রান্তে অবস্থিত, যা ওই অঞ্চলটিকে ভারতের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। চিকেনস নেক খ্যাত করিডোরের এই প্রান্তে নেপাল, বাংলাদেশ এবং ভুটানেরও অবস্থান রয়েছে।

বিশ্ব শর্মা বলেন, ঐতিহাসিকভাবে, এমনকি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন গোষ্ঠীও মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্বকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ করিডোরটি বিচ্ছিন্ন করার কথা বলছে। সুতরাং চিকেনস নেক করিডোরের নিচে এবং চারপাশে আরও শক্তিশালী রেলপথ এবং সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে। 

এছাড়া চিকেনস নেককে কার্যকরভাবে এড়িয়ে উত্তর-পূর্বকে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করে বিকল্প সড়কপথ অনুসন্ধানে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

তবে এই কাজে প্রকৌশলগত দিক থেকে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে জানিয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দৃঢ় সংকল্প এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে এটির বাস্তবায়ন সম্ভব। তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই বক্তব্যকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। কারণ তার এসব মন্তব্য গভীর কৌশলগত এবং দীর্ঘকালীন এজেন্ডা প্রতিফলিত করে।

দেশটির রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা পবন খেরা বলেছেন, ভারতকে অবরুদ্ধ করার জন্য চীনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বাংলাদেশ। আমাদের উত্তর-পূর্বের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত বিপজ্জনক। কেন্দ্রীয় সরকার মণিপুরকে দেখছে না এবং চীন অরুণাচল প্রদেশে একটি গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেছে। 

আমাদের পররাষ্ট্রনীতি এমন এক শোচনীয় পর্যায়ে রয়েছে যে, যার (বাংলাদেশ) সৃষ্টির জন্য আমরা প্রধান ভূমিকা পালন করেছি, এখন সেই দেশটি আমাদের ঘিরে রাখতে ব্যস্ত।

ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় আরেক রাজ্য ত্রিপুরার রাজনৈতিক তিপরা মোথা পার্টির নেতা প্রদ্দূত মানিক্যও ড. ইউনূসের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন। 

তিনি বলেছেন, এক সময় আমাদের যে আদিবাসীরা চট্টগ্রামকে শাসন করেছিল, তাদের সমর্থনে সমুদ্রে যাওয়ার জন্য ভারতের রুট তৈরি করার সময় এসেছে। আমরা আর অকৃতজ্ঞ শাসনব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল নই।

ত্রিপুরার এই রাজনীতিক বলেন, ১৯৪৭ সালে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী লোকজন ভারতীয় ইউনিয়নের অংশ হতে চাইলেও বন্দরটি ছেড়ে দেওয়াটা ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় ভুল।

বাংলাদেশকে টুকরো টুকরো করে ফেলার মতো বেফাঁস কথা বলেছেন তিপরা মোথা পার্টির এই নেতা। তিনি বলেন, উদ্ভাবনী এবং প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জের পেছনে বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ ব্যয়ের পরিবর্তে আমরা বাংলাদেশকে ভেঙেও ফেলে সমুদ্রের নিজেদের পথ তৈরি করতে পারি। 

চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে সবসময় উপজাতিরা বসবাস করতেন, যারা ১৯৪৭ সাল থেকে ভারতের অংশ হতে চেয়েছিলেন। সেখানে ত্রিপুরা, গারো, খাসি এবং চাকমা জনগোষ্ঠীর লাখ লাখ মানুষ রয়েছেন; যারা বাংলাদেশে তাদের ঐতিহ্যবাহী ভূমিতে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বাস করেন। এটিকে আমাদের জাতীয় স্বার্থ ও তাদের কল্যাণের জন্য ব্যবহার করা উচিত।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সঞ্জীব সান্যাল চীন সফরে গিয়ে ড. ইউনুস উত্তর-পূর্ব ভারতের কথা কেন উল্লেখ করেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সঞ্জীব সান্যাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘ভারতের সাতটি রাজ্য স্থলবেষ্টিত হওয়ার তাৎপর্য আসলে কী?’

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাই কমিশনার বীণা সিক্রিও প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য অত্যন্ত হতাশাজনক। এ জাতীয় বক্তব্য দেওয়ার কোনও অধিকার তার নেই। তিনি জানেন উত্তর-পূর্ব ভারত হলো ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং উত্তর–পূর্ব ভারতের বঙ্গোপসাগরে প্রবেশের বিষয়ে বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আলোচনা হয়েছে এবং এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তিও আছে।

আ.দৈ/আরএস


   বিষয়:  বাংলাদেশকে   ভেঙে   টুকরো   টুকরো   করতে   চান   ভারতীয়   নেতা  
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

প্রাইম ব্যাংকের ‘এসএমই ক্লাস্টার ফাইন্যান্সিং’ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত
ইসির আরও ৫২ কর্মকর্তা বদলি
এবি ব্যাংকের এএমএল ও সিএফটি অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত
ইসলামী ব্যাংকের অর্ধ-বার্ষিক ব্যবসায় উন্নয়ন সম্মেলন অনুষ্ঠিত
এমটিবি’র অর্ধ-বার্ষিক ব্যবসা পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

কমার্স ব্যাংকের এমডি মোশারফ হোসেনকে অপসারণ
দুর্নীতির দায়ে বহিষ্কৃত ওমর ফারুক এমডি হতে মরিয়া
কুষ্টিয়ায় শিক্ষার্থী সাজিদের মৃত্যুর কারণ উদঘাটনের পক্ষে ইবি উপাচার্য
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে সংসদ: সালাহউদ্দিন
জুলাই শুধু স্বৈরাচার মুক্তির নয়, পুনর্জন্মেরও মাস: প্রধান উপদেষ্টা
আন্তর্জাতিক- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik@gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝