রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫,
১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ই-পেপার

রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
বিশেষ সংবাদ
টিসিবির কর্মকর্তা হুমায়ুন আজ কোটিপতি
সিন্ডিকেট নির্ভর টিসিবি দুর্নীতির আখড়া, কাঙ্খিত সুফল আসছে না
আবুল কাশেম
Publish: Friday, 14 March, 2025, 11:24 PM  (ভিজিট : 51)

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের গরিব, অসহায় ও সাধারণ জনগণের জন্য ন্যায্যমূল্যে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য বিক্রি করে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই প্রতিষ্ঠানটি দলীয় নেতাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচাািলত হতো। সারাদেশে ডিলার নিয়োগ, সাধারণ নাগরিকদের নামে করা টিসিবি কার্ড প্রদানেও ভয়াবহ জালিয়াতি ও দুর্নীতির নজির স্থাপন করেছে।

 দেশের সাধারণ জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত সরকারি এই প্রতিষ্ঠান টিসিবিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত করেছিলেন। ইতোমধ্যে দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে দুদকের অনুসন্ধানের শুরুতেই।

সূত্র মতে, একই সাথে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন অত্যন্ত আক্ষেপ করে সাংবাদিকদের বলেছেন টিসিবির এক কোটি কার্ডের মধ্যে ৩৭ লাখ কার্ড বাতিল করা হয়েছে। এই কার্ডগুলো ভুয়া এবং জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, এনআইডি ব্যবহার করে দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে এই কার্ডগুলো করা হয়েছে। তবে এক কোটি কার্ডের মধ্যে এই ৩৭ লাখ কার্ড নেই। এই ডুপ্লিকেট ৩৭ লাখ কার্ড বাতিল করা হয়েছে।। 

 গত ৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ সচিবালয়ে তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ড. ওমর বোলাটের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে  বাণিজ্য উপদেষ্টা এই তথ্য জানান। এক কোটি বলা হলেও ৬৩ লাখ পরিবারকে কেন স্মার্ট কার্ডের আওতায় পণ্য দেওয়া হচ্ছে- এ বিষয়ে উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, এক কোটি কার্ডের মধ্যে প্রচুর দুর্নীতি ছিল। একই পরিবারে একাধিক কার্ড ছিল। এনআইডি ব্যবহার করে দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে এই কাজটা করেছে। এক কোটির মধ্যে যে ৩৭ লাখ কার্ড নেই। যারা ছিল, যারা সঠিক প্রাপক, তাদের কাছেই পণ্য পাঠানো হচ্ছে। যারা বেঠিক ছিল, ডুপ্লিকেশন ছিল তাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্য উপদেষ্টার ওই বক্তব্যের পরে দুর্নীতিবিরোধী রাষ্ট্রীয় তদন্ত সংস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়টি গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছে। একই সাথে টিসিবির ভেতরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতি জনগণের অর্থ আত্মসাৎ এবং রাতারাতি অঢেল সম্পদের মালিকদের নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সরকারের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান টিসিবির যুগ্ম পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে পিলেচমকানোর মতো দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের তথ্য উপাত্ত্ব উদঘাটিত হয়েছে।।

সূত্র মতে, টিসিবির যুগ্ম পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে সরকারি টাকা কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ, পণ্য সরবরাহ না করেই বিল পরিশোধ, ব্ল্যাকে পণ্য বিক্রি, আত্মীস্বজনের নামে ডিলারশিপ নেওয়া, ডিলারদের কাছে থেকে নিয়মিত মাসোহারা নেওয়াসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় অঢেল সম্পত্তি গড়ার অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে,ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আহসানুল হক টিটুর এলাকার এবং মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচয় দিতেন তিনি। কিন্তু সবাই বিষয়টি এড়িয়ে যেতেস। এখন তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির  অভিযোগ দুদক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং টিসিবির চেয়ারম্যানের দপ্তওে জমা হচ্ছে।

টিসিবির এই কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির তার পছন্দের ডিলারদের সঙ্গে যোগসাজশে ব্লকে টিসিবির পণ্য বিক্রি কওে আজ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন ।  তার অর্জিত সম্পদের মধ্যে রাজধানীর মিরপুর ১০ ও ১১ এর মাঝে ৭.৫০ কাঠা জমি, টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানার অন্তর্গত দুয়াজানি গ্রামে প্রায় ২০ লাখ টাকার জমি কিনে পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তার পাশেই আরও ১৫ লাখ টাকার জমি কিনেছেন। নারায়ণগঞ্জে তার স্ত্রী নূরে জান্নাতের (আশা) নামে সাড়ে ৫ শতাংশ জমি কিনেছেন।

 প্রায় ৪ কোটি টাকা দিয়ে ছোটবোন কানিজ ফাতেমা, শ্বশুর মো. গিয়াস উদ্দিনসহ আত্মীয়স্বজনের নামে মিরপুর পলাশ নগরে ৬ কাঠা (৯.৯০শতাংশ) জমি কিনেছেন। মা লতিফা জাহানের নামে নাগরপুর উপজেলার কেদারপুরে ২০ শতাংশ জমি, সাভার আশুলিয়ায় মা, শাশুড়ি নাসরীন পারভীন, বোন কানিজ ফাতেমার স্বামীর নামে ৩১ শতাংশ জমি কিনেছেন। এ ছাড়া আশুলিয়ায় ৫ বন্ধু মিলে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি কর্মাশিয়াল জমি কিনেছেন। মামাতো ভাই নয়নের নামে এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নাম দিয়ে যৌথ মালিকানায় জমির শেয়ার কিনেছেন। রাজধানীতে আত্মীয়স্বজনের নামে একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাট কিনেছেন।

আরো অভিযোগ রয়েছে,  টিসিবির কর্মকর্তা হুমায়ুনের নিয়োগ দেওয়া কিছু ডিলাররা তার কাছে তেল, চিনি, খেজুর অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে নিয়মিত মোটা অঙ্কের কমিশন নেন। কোনো ডিলার ঘুষ দিতে না চাইলে ডিলারশিপ বাতিল করে দেওয়ার হুমকি দেন। তার অধীনস্থ মনি নামে একজন ডিলারের সঙ্গে সবচেয়ে লেনদেন করেন তিনি। ফুয়াদ এন্টারপ্রাইজ নামে হিসাব নম্বর ০০৩০-০২১০০৯৮, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড কারওয়ান বাজায় শাখায়ও কমিশনের টাকা লেনদেন করেন। ডিলার মনির সঙ্গে হুমায়ুন কবীর ২ কোটি টাকা ব্যবসায় বিনিয়োগ করে রেখেছেন। গত বছর রমজানে টিসিবির পছন্দের ডিলারের মাধ্যমে লোকাল মার্কেটে তেল, চিনি, খেজুর বিক্রি করে মোট অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। অনিয়ম দুর্নীতি করার সুবির্ধাথে মাঝে মাঝে সরকারি ছুটির দিনেও অফিস করেন।

টিসিবির এক কর্মকর্তা জানান, ২০২৩ সালে তেজগাঁওয়ে টিসিবির গুদাম থেকে সয়াবিন তেল, চিনি, খেজুর বাইরে বিক্রি করে দেন। রাতের মধ্যে এই খবর জানাজানি হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি তিনি নিজেই অবহিত করেন এবং ওই রাতেই গোডাউনে আগুন লাগে। আগুনে প্রায় প্রায় ১০ টন সয়াবিন ও ১০ থেকে ১২ টন ছোলাসহ অন্যান্য পণ্য পুড়ে যায় বলে জানানো হয়। পরিকল্পিতভাবে এই আগুন লাগানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে গণমাধ্যমের কাছে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন টিসিবির যুগ্ম পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি কোনো অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। যারাই আমার বিরুদ্ধে এসব বলছে, মিথ্যা বানোয়াট কথা বলছে। আমার সাবেক স্ত্রী ও তার পরিবার মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাকে হয়রানি করার চেষ্টা করছে। আমার নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। 

আ. দৈ. /কাশেম
   বিষয়:  সিন্ডিকেট   নির্ভর টিসিবি   দুর্নীতির আখড়া   কাঙ্খিত    সুফল    আসছে না   
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ময়মনসিংহে বাকচান্দা এএস একাডেমির সাবেক শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনীর প্রস্তুতি চলছে
এপ্রিলেই দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, সঙ্গে থাকবেন দুই পুত্রবধূ
‘শামীম ওসমান পালিয়েছে,এখনো তার দোসরদের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে’
দ্রুতই জুলাই সনদ তৈরি হবে: আলী রীয়াজ
কক্সবাজারের সাবেক এমপি জাফর ঢাকায় গ্রেফতার
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দলের সভা
পদত্যাগ করলেন আটাবের সবুজ মুন্সী
ঢাকা দুই সিটিতে আওয়ামী দোসর ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষায় বিএনপির ব্যাপক তদবির
রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১২ বছর , তবু মেলেনি বিচার, নিশ্চিত হয়নি ক্ষতিপূরণ
কাশ্মীরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, মসজিদে ঘোষণার পর বিক্ষোভ শুরু
বিশেষ সংবাদ- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik@gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝