ময়মনসিংহে ভয়ঙ্কর রক্ত সিন্ডিকের পর এবার ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলো প্রসূতিদের গর্ভফুল পাঁচার চক্রের ৫ সদস্য। এসব গর্ভফুল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও নগরীর বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল থেকে টাকার বিনিময়ে সংগ্রহ করে গরু-ছাগলের বলে বিদেশে পাঁচার করতেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করে চক্রটি।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মাইন উদ্দিন বলছেন, গর্ভফুল পাঁচার বা বিক্রি বিষয়ে কিছুই জানা নেই। গজিয়ে উঠা এসব নতুন নতুন পাঁচার চক্রের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্বাস্থ বিভাগ। ফলে এসব সিন্ডিকেট দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। গত রোববার বিকালে আদালত প্রত্যেককে এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর আগে গত শনিবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যার পর জেলা গোয়েন্দা শাখার কার্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গর্ভফুল পাঁচার চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, জেলার তারাকান্দা উপজেলার মনির মুন্সির ছেলে নজরুল ইসলাম (৫৪), একই জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার মৃত মোখলেছুর রহমানের ছেলে মো. খুরশিদ আলম (২৫), বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার হামেদের ছেলে মো. রুহুল আমিন (৩৫), ঢাকার ধামরাই এলাকার মৃত মাহবুবুর রহমানের ছেলে মো. মুমিনুর রহমান (৩২), একই এলাকার দেওয়ান মো. আসফাকের ছেলে দেওয়ান মো. অমিত (৩১)।
ডিবি পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাতে খবর পায়, প্রসুতির গর্ভফুল পিকআপ ভ্যানে হিমায়িত প্যাকেটজাত করে প্লাস্টিকের ড্রামে ভর্তি করে ঢাকার ধামরাইয়ে নেওয়া হচ্ছে। পরে অভিযান চালিয়ে নগরীর বলাশপুর এলাকায় সন্দেহজনক একটি পিকআপ আটকে তল্লাশি চালানো হলে পিকআপ থেকে পলিথিনে মোড়ানো ৩৫০টি গর্ভফুলসদৃশ বস্তু ও বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ এবং পিকআপের চালক মো. রুহুল আমিনকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রুহুল আমিনের দেওয়া তথ্যে ধামরাই ও ঢাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের আরও চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশের কাছে স্বীকার করে যে, গ্রেপ্তার নজরুল ইসলামসহ অন্যান্যরা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতালের কর্মচারীদের মাধ্যমে অবৈধভাবে প্রসূতিদের গর্ভফুল সংগ্রহ করেন। প্রতিটি গর্ভফুল মাত্র ৫০ টাকায় আয়াদের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হতো। এরপর সেগুলো হিমায়িত করার পর পিকআপ ভ্যানের চালক রুহুল আমিনের মাধ্যমে ঢাকার ধামরাই এলাকার মুমিনুর রহমান নামে একজনের কাছে সরবরাহ করতেন। সরবরাহ করা গর্ভফুল আসামি মুমিনুর রহমান ও দেওয়ান মো. অমিত চক্রের অন্য সদস্যদের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করে ক্রয়-বিক্রয় করতেন। এগুলো তাঁরা ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে অন্য একটি গ্রুপের কাছে বিক্রি করতেন।
এ ঘটনায় ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আলমগীর বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করেন। উদ্ধার হওয়া গর্ভফুলসদৃশ আলামতগুলো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এসআই মো. আলমগীর বলেন, চক্রটি এটি দ্বিতীয় চালান সরবরাহ করছিল বলে তথ্য দিয়েছে। প্রসূতি নারীরা সন্তান জন্ম দেওয়ার পর এ গর্ভফুলগুলো ধ্বংস করার কথা। কিন্তু সেগুলো চক্রের সদস্যরা খুব সামান্য টাকায় আয়াদের মাধ্যমে কিনে নিচ্ছিল। সেগুলো কিনে গরু-ছাগলের গর্ভফুল বলে বিদেশে পাঁচার করা হতো আসামীদের ৭ দিন করে রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হলে রিমান্ড শুনানীর দিন ধার্য করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। রবিবার (৯ মার্চ) আদালত প্রত্যেক আসামীকে এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর আরও বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ মাইনউদ্দিন খান বলেন, প্রসুতির গর্ভফুল দিয়ে কি করা হয় বিষয়টি আমার জানা নেই। নিয়ম হচ্ছে, কোন বাচ্চা জন্ম নেয়ার পর গর্ভফুল ফেলে দেয়া হয়। কিন্তু, এগুলো কিভাবে পাঁচারকারীদের হাতে গেল আমার জানা নেই। এবিষয়ে ময়মনসিংহ বিভাগীয় স্বাস্থ উপ-পরিচালক ডা. প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, গর্ভফুল বা রক্ত সিন্ডিকেটের বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্প্রতি, ময়মনসিংহে বিষাক্ত রক্ত সিন্ডিকেটের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে রোগীরা সুস্থ হওয়ার বদলে মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়ে অনেক ক্ষেত্রে। পুলিশের হাতে ‘বিষাক্ত রক্ত’ সিন্ডিকেটের দু’জন গ্রেপ্তারের পর তাদের মুখেই তাদের ভয়ঙ্কর অপতৎপরতার তথ্য বেরিয়ে আসে। গ্রেপ্তারের পর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মো. সেলিম মিয়া দু’জনের নামে ও অজ্ঞাতনামা ৬/৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়।
এই সিন্ডিকেট মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করে বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে রক্ত বিক্রি করতেন এই সিন্ডিকেট সদস্যরা। তাদের নেই কোনো সরকারি ট্রেনিং বা লাইসেন্স। তারা রক্তে স্যালাইন মিশিয়ে দুই ব্যাগ থেকে তিন ব্যাগ রক্ত বানাতেন। ভুয়া ক্রসম্যাচিং রিপোর্ট বানিয়ে নিজেরাই রোগীদের শরীরে পুশ করতেন, এই বিষাক্ত রক্ত। তবে, এবিষয়ে পরে দৃশ্যমান কোন কার্যক্রম গ্রহণ করেনি স্বাস্থ বিভাগ।
আ.দৈ/আরএস