রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫,
১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ই-পেপার

রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
বিশেষ সংবাদ
প্রশাসন নিরব, পুরো এলাকার কৃষিজমি ধ্বংস করা হচ্ছে
সাভারে ৩ ইউনিয়নে রাতের আধারে অবৈধভাবে কৃষি জমির মাটি কাটা হচ্ছে
শরিফ হাসান নিলয়, সাভার (ঢাকা)
Publish: Monday, 10 March, 2025, 3:54 PM  (ভিজিট : 296)

সাভার উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ১২টি স্থানে  দিন রাত চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। সেই মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটের ভাটায়। তিন ফসলি কৃষি জমি থেকে ৪০ থেকে ৫০ ফুট গভীর করে মাটি কাটার ফলে আশপাশের কৃষিজমিও ভেঙে পড়ছে। এতে হারিয়ে যাচ্ছে শত শত বিঘা কৃষিজমি, পরিণত হচ্ছে জলাশয়ে। কৃষিজমি রক্ষায় সরকারের কড়া নির্দেশ থাকলেও। অদৃশ্য কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে স্থানীয় প্রশাসন।

গেল কয়েক দিনের অনুসন্ধানে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন ভাকুর্তা ইউনিয়নের মধুমতি মডেল টাউনের শেষ প্রান্তে কান্দি ভাকুর্তার বড়চক এলাকায় চলছে মাটি কাটার মহাৎসব। ৫টি স্থান থেকে ভেকু দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে ড্রাম ট্রাকে করে  নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইট ভাটায়।মাসের পর মাস মাটি কেটে নেওয়ায় গভীর খাদে পরিণত হয়েছে এলাকার ফসলি জমি। গেল কেয়েক মাস ধরে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে বড় বড় ড্রাম ট্রাকে করে ইটভাটায় বিক্রি করছে বেশ কয়েকটি চক্র।বড় এক ড্রাম ট্রাক মাটির মূল ৪হাজার টাকা।গত কয়েক মাসে  প্রায় ৪০ কোটি টাকার মাটি কেটে বিক্রি করা হয়েছে এমন দাবী স্থানীদের। 
বেশ কয়েকটি স্থানে বিভক্ত হয়ে আবু সাইদ, আব্দুল হাই ও বাহারের নেতৃত্বে ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে চক্রটি।নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এভাবে মাটি কেটে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে মানচিত্র থেকে উধাও করে দিচ্ছে কৃষিজমি।মাটি কাটার ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন ফসলি জমির মালিক ও কৃষকরা। স্থানীয় প্রশাসন কঠর হলে প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে। তবে অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ মাটি কাটায় স্থানীয় পুলিশ ও কিছু সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে রেখেছে। যার ফলে  সাংবাদিকরা এসেও সংবাদ প্রচার করে না।

স্থানীয় কৃষক সিরাজুল ইসলাম আজকের দৈনিক কে বলেন, আমি আড়াই বিঘা জমিতে ধনেপাতা চাষ করেছেন। কিন্তু ভেকু দিয়ে  ৪০ থেকে ৫০ ফুট গভীর গর্তকরে মাটি ইট ভাটায় বিক্রি করছে একটি চক্র। ফলে আমার জমি হুমকির মুখে পরেছে। ফাটল ধরেছে খেতে। যে কোন সময় জমির বড় একটি অংশ ধসে পড়তে পারে।তাতে আমার অনেক ক্ষয়ক্ষতি হবে।এই সমস্যা সুধু আমার একার নয় আশপাশের অনেকের জমিতেই হয়েছে বলেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা মো এমদাত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দিন রাত মাটির বড় বড় ট্রাক চলার কারনে ধুলাবালিতে এলাকায় থাকা কষ্টকর হয়ে পরেছে। আশ পাশের জমির ফসল ধুলায় ঢেকে গেছে। গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে আশপাশের ফসলি ক্ষেত। মাটির গাড়ির দুলাবালির কারনে আমাদের এলাকার অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে।প্রশাসন কেন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না আমাদের জানা নাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন, পাশের জমিতে মাটি কাটার করনে বড় ট্রাক  আমাদের জমির পাশ দিয়ে চলা চল করায় অনেক দুলাবালি হয়।আর সেই দুলাবালির কারনে ক্ষেতের গাজর, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ধনেপাতা, লাল শাক নষ্ট হয়ে গেছে।আমাদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।কিন্তু মাটি কাটা বাহিনীর ভয়ে কিছু বলতে পারছিনা।প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

মুসলেম উদ্দিন নামে আরেক কৃষক বলেন, মাসের পর মাস তারা অবৈধ মাটি কেটে কৃষি জমি সব জলাশয় করে ফেলছে।তাদের ভয়ে কেউ কিছু বলছে না।তিনি ক্ষোভ প্রকাশ  করে আরো  জানান, সাংবাদিকরা আসলো,আর গেল, সাক্ষাৎকার নিলো কিন্ত প্রশাসন ও মাটি বিক্রেতাদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে পরে আর আমাদের কষ্টের কথা আর প্রচার করে না।এই মাটি কাটা বাহিনীর হাত থেকে আমাদের কুষি জামি কে রক্ষা করবে ।

কৃষি জমির মাটি কাটা বাহিনীর  চক্রের সদস্য আবু সাইদ অবৈধভাবে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির কথা স্বীকার করে বলেন, সবাইতো এভাবেই ব্যবসা করে। অনুমতি নিয়ে কে মাটি কাটে বলেন। প্রশাসনসহ সবাইকে ম্যানেজ করেই মাটির ব্যবসা করছি। আপনাদের কি করতে হবে বলেন। এ সময় আবু সাঈদ সংবাদ প্রচার না করার জন্য টাকার অফার দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।গত দুই মাসে প্রায় ৪০ কোটি টাকার মাটি কেটে বিক্রি করা হয়েছে এমন দাবি স্থানীয়দের।পাশাপাশি কয়েকটি স্থানে বিভক্ত হয়ে আবু সাইদ, আব্দুল হাই ও বাহার উদ্দিন বাহারের নেতৃত্বে ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে চক্রটি। 

মাটি কাটার বিষয়ে বাহার উদ্দিন বাহারের কাছে জানতে চাইলে তিনি মোঠু ফোনে জানান, কোথাও আমার মাটি কাটি নাই। প্রতি বছর যে মাটি কাটি তা আমার নিজের জমিতে, এ বছর সেখানে পানি, ঢাকার শহরে রাতে দুইয়েক গাড়ি লাল মাটি দেই তা মিলিয়ে কাটি।

এছাড়া, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলার আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়ন এর নলাম এলাকায় ৫টি ভেকু দিয়ে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। এতে হারিয়ে যাচ্ছে শত শত বিঘা কৃষিজমি, পরিণত হচ্ছে জলাশয়ে।সম্প্রতি সরেজমিনে আশুলিয়ার নলাম এলাকার বংশী নদীর পাড়ে চতুর্দিক ৫টি ভেকু দিয়ে ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে এমন চিত্র চোখে পড়ে। এতে ফসলি জমির মাটি গুলো ড্রাম ট্রাকের করে পাঠানো হচ্ছে ইট ভাটাসহ ঢাকায়।

রাতে ২০টি মাহিন্দ্র ট্রাক্টর করে মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাটি কাটাচ্ছে কয়েকটি চক্র। ভেকু দিয়ে মাটির ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। ফসলি জমিতে ভেকু দিয়ে অর্থের বিনিময়ে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন মাটিখেকোরা। প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপের অভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন সাভার উপজেলার ধামসোনা ইউনিয়ন এর নলাম এলাকার মাটিখেকোরা।

স্থানীয়রা বলছেন, ফসলি জমি ধ্বংসের জন্য শুধু মাটি ব্যবসায়ীরাই দায়ী নয়, জমির মালিকরাও দায়ী। কারণ মাটিখেকোদের নগদ টাকার লোভে পড়ে থাকেন জমির মালিকরা। এই সুযোগে কৌশলে জমির মালিকদের নগদ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ফসলি জমির মাটি কিনে নেন মাটি ব্যবসায়ীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ধামসোনা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের আবদুর রহিম,রফিকুল ইসলাম মন্টু, শাহীন,মনির হোসেন, হাফিজুর রহমান, মো: মাসুমসহ আরও অনেকই মিলে মাটি ব্যবসায়ী ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে অবাধে ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে। এই বিষয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ফসলি জমির মাটি কাটার কথা স্বীকার করেন তারা। 

স্থানীয় কৃষক আব্দুল কালাম জানান, নলাম এলাকায় এি ফসলি জাগায় আমরা বছর ফসল ফলাতাম। কিন্তু এ বছর ধার ঘেষে মানুষ নিচু করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা। এ বিষয়ে প্রশাসনকে বার বার জানিয়েও কোনই লাভ হয়নি। দিনের পর দিন মাটি কেটেই যাচ্ছে। এতে আগামী বছর এসব ফসল ফলানোর জায়গা আর থাকবে না। সব পানিতে ধুয়ে যাবে।

এবিষয়ে কিভাবে মাটি উত্তেলন করছেন জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম মন্টু কোন উত্তর না দিয়ে বার বার দেখা করার প্রস্তাব দেন।  অপরদিকে আব্দুর রহিম  এর সাথে মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন জমির মালিকের সাথে কথা বলেই মাটি কাটছি,ইটভাটার সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছে।আপনি মন্টুর সাথে দেখা করেন। 
শুধু ভাকুর্তা ও ধামসোনা ইউনিয়ন নয় আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি, ঋষিপাড়া, নৈহাটি গ্রাম জুরে চলছে মাটি কাটার মহৎসব।

অবৈধভাবে ফসলি জমির মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল আলম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত আছি। এই বিষয়ে আপনারা ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলেন। 

তবে এই বিষয়ে সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবুবকর সরকার মোঠু ফোনে জনান, তিনি মাটি কাটার বিষয়ে কিছুই জানেন না, এবং বলেন, আমি আপনার কাজ থেকে শুনলাম মাত্র। তিনি আরো বলেন, এখন ইটভাটায় অভিযান চলছে, ভাটার অভিযান শেষ হলে এসিল্যান্ড কে বলে দিব তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।

এদিকে কৃষি জমি ও নদীর বাঁধ রক্ষাসহ বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে এলাকাবাসী এবং কৃষক দের বাঁচাতে দ্রুত বংশী নদীর মাটি ও বিভিন্ন ইউনয়নের কৃষি জমির মাটি বেচাকেনার অবৈধ ব্যবসা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

আ. দৈ. /কাশেম
   বিষয়:   সাভার   ৩ ইউনিয়ন   ১২টি স্থানে   রাতের আধারে   অবৈধভাবে    কৃষি জমির   মাটি কাটা হচ্ছে   
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

নারী নির্যাতন বন্ধে আইনের সংশোধন প্রয়োজন: মামুনুল হক
৬২ জন পুলিশ সদস্য পাচ্ছেন বিপিএম ও পিপিএম পদক
ভারত-পাকিস্তান সংকট নিরসনের চেষ্টা করছে সৌদি আরব
পাঁচ বছর আগে অপহরণ হওয়া স্কুলছাত্র নিজেই ফিরল বাসায়
রাজনীতির চেয়ারে ঘুণপোকা ধরেছে, এটি সংস্কার করা প্রয়োজন: ব্যারিস্টার ফুয়াদ
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

ডিএনসিসিতে বর্জ্যব্যবস্থাপানা বিভাগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের অভিযান
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দলের সভা
কাশ্মীরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ভিডিও প্রকাশ
ঢাকা দুই সিটিতে আওয়ামী দোসর ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষায় বিএনপির ব্যাপক তদবির
পদত্যাগ করলেন আটাবের সবুজ মুন্সী
বিশেষ সংবাদ- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik@gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝