সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫,
১৫ বৈশাখ ১৪৩২
ই-পেপার

সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
ব্যাংক-বীমা
দু:শ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন পদ্মা ব্যাংকের কর্মীরা
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিকে তাকিয়ে পদ্মা ব্যাংক
রমজান আলী
Publish: Monday, 24 February, 2025, 8:10 PM  (ভিজিট : 375)

দু:শ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন পদ্মা ব্যাংকের কর্মীরা। পদ্মা ব্যাংকের কি হবে। আসলে কি পদ্মা ব্যাংক থাকবে, না আবারও কোনো ব্যাংকের সাথে একীভূত হবে ? এ নিয়ে ব্যাংকের গ্রাহক ও চাকরিজীবীদের মধ্যে এক ধরনের অশান্তি বিরাজ করছে। যার ফলে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিকে তাকিয়ে আছে ব্যাংকের গ্রাহক ও কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্ধারণ করা হবে ব্যাংকটি কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে। তাই নির্দেশনা না পেয়ে ধুকছে ব্যাংকটি।  এতে একদিকে আমানতকারীরা ফেরত পাচ্ছে না তাদের আমানত, অন্যদিকে কর্মকর্তারা পাচ্ছে না ঠিক মতো বেতন।  

গত ২৩ ডিসেম্বর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে গত বছরের ১৮ মার্চ এক্সিম ব্যাংকের পর্ষদ পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণে একটি চুক্তি হয়েছিলো। গতবছরের শুরুতে দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে উদ্যোগ নেয়, তারপর এটিই ছিল দুটি ব্যাংকের একীভূত হওয়ার প্রথম সিদ্ধান্ত। এরপর একীভূতকরণ-সংক্রান্ত নীতিমালাও জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি বছরের ১৪ মার্চ এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় পদ্মা ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। এরপর ১৮ মার্চ সিদ্ধান্তের বিষয়টি দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানিয়েছিল এক্সিম ব্যাংক। কিন্তু ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পরিবর্তিত বাস্তবতায় সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এল এক্সিম ব্যাংক। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পদ্মা ব্যাংককে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বর্তমান পর্ষদ বেশ কিছু পদক্ষেপ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা দিয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে কাজ করা হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া হতে পারে এর কোনো সময় নির্ধারণ করা হয়নি। ব্যাংকটি কিভাবে কাজ করবে সেই ব্যাপারে এখনো কোনো সিন্ধান্ত আমাদের হাতে আসেনি। তাই সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত কিছুই বলতে পারবো না। 

পদ্মা ব্যাংকের বর্তমান পর্ষদ থেকে জানা গেছে, ব্যাংকটিকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা তারল্য সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য দশ বছর সময় চাওয়া হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু পদক্ষেপ দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। 

জানা গেছে, গত সোমবার ২৩ ডিসেম্বর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে গত বছরের ১৮ মার্চ এক্সিম ব্যাংকের পর্ষদ পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণে একটি চুক্তি হয়েছিলো। গতবছরের শুরুতে দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে উদ্যোগ নেয়, তারপর এটিই ছিল দুটি ব্যাংকের একীভূত হওয়ার প্রথম সিদ্ধান্ত। এরপর একীভূতকরণ–সংক্রান্ত নীতিমালাও জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পরিবর্তিত বাস্তবতায় সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এল এক্সিম ব্যাংক।  

২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে এক আলোচনাতেও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দুর্বল ব্যাংক একীভূত হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। একীভূত হওয়ার লক্ষ্যে ভালো ও দুর্বল ব্যাংকের এমডিদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরুরও পরামর্শ দেয়া হয় ওই বৈঠকে।

এরপর ৪ মার্চ ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠকে তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, চলতি বছরের মধ্যে ৭ থেকে ১০টি দুর্বল ব্যাংককে সবল বা ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হতে পারে। এই সময়ের মধ্যে দুর্বল ব্যাংকগুলো নিজেদের ইচ্ছায় একীভূত না হলে আগামী বছর থেকে তাদের চাপ দিয়ে একীভূত করা হবে। এরপর বেশ কয়েকটি ব্যাংকের একীভূতকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। 
পদ্মা ব্যাংক পিএলসির জন্ম ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল। শুরুতে ব্যাংকটির নাম ছিল দ্য ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড। 

নজিরবিহীন ঋণ জালিয়াতি ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে কার্যক্রম শুরুর তিন বছরের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ে ব্যাংকটি। ধারাবাহিকভাবে গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২০১৭ সালে ফারমার্স ব্যাংকে হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুনর্গঠন করা হয় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। ওই সময় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে বাধ্য হন। একই সময় অপসারণ করা হয় ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও। এরপর চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। 

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে দ্য ফারমার্স থেকে পদ্মা ব্যাংকে রূপান্তর করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে পদ্মা ব্যাংকের ৬৮ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা নিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। বিনিময়ে এসব প্রতিষ্ঠানকে জোগান দিতে হয়েছে ৭১৫ কোটি টাকার পুঁজি। বর্তমানে ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা।

২০১৮ সালের এপ্রিলে দেয়া পুঁজির বিপরীতে এখন পর্যন্ত কোনো মুনাফা পায়নি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। উল্টো ধারাবাহিক লোকসানের কারণে ব্যাংকটির পুঞ্জীভূত লোকসান মূলধনের চেয়েও বেশি হয়ে গেছে। প্রায় ছয় বছর চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালনের পর চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে পদ্মা ব্যাংকের পর্ষদ থেকে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত পদত্যাগ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুন শেষে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত ঋণের ৬৫ শতাংশ খেলাপি। এমন বাস্তবতায় ঝুঁকিতে পড়েছেন ব্যাংকটির সাধারণ আমানতকারীরা। 

বর্তমানে ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ কার্যক্রমও সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। মূলত ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ থেকে যে আয় করে, তা দিয়েই আমানতকারীদের সুদ পরিশোধ করে। পদ্মা ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ঋণ থেকে আয়েরও কোনো সুযোগ নেই। ফলে আমানতের সুদ পরিশোধও করা হচ্ছে না। ফলে ব্যাংকটির লোকসানের অঙ্কই কেবল বাড়ছে। আর আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে না পারায় গ্রাহকের আস্থা তলানিতে পৌঁছেছে। 


পদ্মা ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ তালহা (ভারপ্রাপ্ত) বলেছেন, ‘ব্যাংকটিকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য  সর্বাত্মক চেষ্টা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পেলেই আগের মতো গ্রাহকের সর্বাত্মক সেবা দেয়ার চেষ্টা অবহ্যত থাকবে।’

র/আ

আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

টঙ্গীতে পোশাক কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
টঙ্গীতে ঝুটের গুদামে ভয়াবহ আগুন, আধাঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে
ইউনিয়ন ব্যাংকেরও শীর্ষ খেলাপি দেশবন্ধু গ্রুপ
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির ৮৯৬তম সভা অনুষ্ঠিত
ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দলের সভা
ঢাকা দুই সিটিতে আওয়ামী দোসর ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষায় বিএনপির ব্যাপক তদবির
পদত্যাগ করলেন আটাবের সবুজ মুন্সী
রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১২ বছর , তবু মেলেনি বিচার, নিশ্চিত হয়নি ক্ষতিপূরণ
শিগগিরই ঢাকা শহরে অটোরিকশার ওয়ার্কশপ ও চার্জিং স্টেশন বন্ধে অভিযান: ডিএনসিসি প্রশাসক
ব্যাংক-বীমা- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik$gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝