সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫,
১৫ বৈশাখ ১৪৩২
ই-পেপার

সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
অর্থ-বাণিজ্য
তেল-চিনির বাজার অস্থির হওয়ার শঙ্কা
অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
Publish: Sunday, 2 February, 2025, 8:32 PM  (ভিজিট : 69)

রমজানের মাসখানেক আগে ভোজ্য তেল ও চিনির বাজার অস্থির হওয়ার আশঙ্কা করছেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। এরমধ্যে ছোলা ও চিনিসহ অন্যান্য পণ্যের পর্যাপ্ত আমদানির খবর এলেও বাজার নিয়ে আস্থা রাখতে পারছেন না অনেকে। তাই সংকটের আগেভাগে দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কঠোর পদক্ষেপ চান সংশ্লিষ্টরা। 
   
রাজধানীর পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা আসছে রমজানে বাড়তি চাহিদার প্রস্তুতি হিসেবে চিনির মজুত করেছেন। পাইকারিতে ১১৪ টাকা কেজিতে চিনি বিক্রি করলেও খুচরায় যা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ২৫ টাকা। সরবারহ সংকট না থাকলেও সব কোম্পানির চিনি পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন তারা। চিনির পাশাপাশি রমজানের মাস খানেক আগে ভোজ্য তেলেরও মজুতের প্রস্তুতি চলছে। তবে অনেক মুদি দোকানে মিলছে না রান্নার এ জরুরি উপকরণটি। এতে খুচরা পর্যায়ে দামের প্রভাব পড়ছে। 

খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে, রমজানের আগেই দাম বাড়াতে চান ব্যবসায়ীরা। রোজার আগে বা শুরুতে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর ঘটনা ভোক্তাদের কাছে নতুন নয়। ২০২৪ সালেও রোজা শুরু হওয়ার আগে এপ্রিল মাসে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দাবি ওঠে। তখন সরকার মূল্য সমন্বয় করে। ওই বছর ?জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অক্টোবরে আমদানি পর্যায়ে ভোজ্য তেলের মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ৫ শতাংশ কমানোর পাশাপাশি উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ের ভ্যাট পুরোপুরি প্রত্যাহার করে সরকার। 

সর্বশেষ ৯ই ডিসেম্বর ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানো হয়। তখনো দাম বাড়ানোর আগ দিয়ে বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলের সয়াবিন তেল। তখন খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার বোতলের সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ ৮ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ১৭৫ টাকা। দুই লিটারের বোতলে তা ৩৮০ টাকা এবং ৫ লিটার ৮৫২ টাকা। খোলা সয়াবিনের খুচরা বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৫৭ টাকা। তার আগে বোতলের সয়াবিনের দাম ১৬৭ টাকা এবং খোলা তেল ১৪৯ টাকা ছিল।

সূত্র বলছে, রমজানের আগে আরেক দফা সয়াবিন তেলের দাম বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়েছে ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। হিসাব করে ১১ টাকা বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি-তর্ক চলছে।

সর্বশেষ ২৩শে জানুয়ারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশীরউদ্দিনের বৈঠক হয়। তবে সে বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। 
ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের মতামত চেয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ভোজ্য তেল পরিশোধন কারখানার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ মুস্তাফা হায়দার বলেন, ২০১১ সালে সরকার একটি নীতিমালা করে।

সয়াবিন তেলের দাম সময়ে সময়ে বৈশ্বিক বাজার ও অভ্যন্তরীণ খরচের সঙ্গে সমন্বয় করার কথা। এখন তা ১৫ দিন পর পর সমন্বয় করার কথা। ডলারসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ার যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, আমরা শুধু বলেছি সরকারের নীতিমালা মেনেই দর সমন্বয় করতে। তবে সরকার রোজায় পণ্যটির দাম বাড়াতে চাইছে না। সেজন্য রোজা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভ্যাট ছাড় অব্যাহত রেখেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, দাম বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেই। বর্তমান দরেই বিক্রি করতে হবে।

রামপুরা ভাই ভাই স্টোরের জামাল হোসেন বলেন, কোম্পানিগুলো ঠিকঠাক মতো তেল দিচ্ছে না। মাঝে মাঝে দু-এক কার্টন তেল দিচ্ছে, যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

কাওরান বাজার কিচেন মার্কেটের আব্দুর রব এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক একরামুল হক নাঈম বলেন, সাপ্লাই কম। তেল এক গাড়ি করে পাই। দিনেই শেষ হয়। বেশি চাচ্ছি, কিন্তু কোম্পানি দিচ্ছে না। ভোজ্য তেল আমদানিকারক ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের পরিচালক (রেগুলেটরি অ্যান্ড কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, তেল সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। প্রতিদিন কোন ডিলারকে কতো পরিমাণ তেল দিলাম তা সরকারের অফিসগুলোতে জানিয়ে দিচ্ছি।

এদিকে অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের আমদানি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি এবার এসেছে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৯৯৪ টন। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এসেছিল ৬ লাখ ৯ হাজার ৫৩২ টন। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত ভোজ্য তেল আমদানি হয়েছে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৮১৪ টন। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১১ লাখ ৩ হাজার ৯০ টন। 

শুল্ক কমানোর প্রভাব পড়েছে চিনির বাজারে। এক মাসে দাম কমেছে সাড়ে তিন শতাংশ পর্যন্ত। পাশাপাশি রমজান সামনে রেখে প্যাকেট চিনি বিক্রি করছে সরকারি মিলগুলো। টিসিবিও কম দামে চিনি বিক্রি করছে। তবে রোজায় কেউ যাতে কারসাজি করতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকার তাগিদ দিয়েছেন ভোক্তারা। চিনির দাম স্থিতিশীল থাকলেও কতোদিন থাকবে? রমজান পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে কিনা তা নিশ্চিত হতে পারছেন কেউ।

কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, বাজারে একাধিক সংস্থা তদারকি করে। কিন্তু ভোক্তা এ থেকে কোনো সুফল পাচ্ছে না। এক্ষেত্রে সরকারের সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীলতার যথাযথ গ্যাপ রয়েছে। তিনি বলেন, পণ্যের দাম বাড়লেই কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু যে স্তরে কারসাজি হয়েছে, সেই স্তরে মনিটরিং হয় না। 

আ. দৈ/এএস



 
   বিষয়:  তেল-চিনির   বাজার অস্থির   শঙ্কা  
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

টঙ্গীতে পোশাক কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
টঙ্গীতে ঝুটের গুদামে ভয়াবহ আগুন, আধাঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে
ইউনিয়ন ব্যাংকেরও শীর্ষ খেলাপি দেশবন্ধু গ্রুপ
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির ৮৯৬তম সভা অনুষ্ঠিত
ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দলের সভা
ঢাকা দুই সিটিতে আওয়ামী দোসর ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষায় বিএনপির ব্যাপক তদবির
পদত্যাগ করলেন আটাবের সবুজ মুন্সী
রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১২ বছর , তবু মেলেনি বিচার, নিশ্চিত হয়নি ক্ষতিপূরণ
শিগগিরই ঢাকা শহরে অটোরিকশার ওয়ার্কশপ ও চার্জিং স্টেশন বন্ধে অভিযান: ডিএনসিসি প্রশাসক
অর্থ-বাণিজ্য- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik$gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝