ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের টানা ১৫ বছর বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের ৩ সদস্যের একটি টিম ডিএসসিসির নগর ভবনে অভিযান পরিচালায়। অভিযানকালে দুদকের কর্মকর্তারা ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আমিনুল ইসলামের সাথে প্রাপ্ত বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে কথা বলেন। দুদক টিমের সদস্যরা একই সাথে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলীকে ওইসব প্রকল্পের যাবতীয় নথিপত্রের ফটোকপি সরবরাহ করতে অনুরোধ জানান।
দুদকের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানান, অভিযানে ঢাকা শহরে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ নির্মাণ প্রকল্পে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছেন। তারা নগর ভবনে স্থাপিত ঢাকা শহরে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে দুদক কর্মকর্তারা দেখতে পান, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বর্তমানে ডিএসসিসির আনসারদের বেডরুম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত।
এছাড়াও, "সাপ্লাই অব জেনসুলিন অ্যাপ থার্মপ্লাস্টিক পেইন্ট" প্রকল্প, "সাপ্লাই অব পোর্টেবল এয়ার কমপ্রেশার-২ নস" এবং "সাপ্লাই অব ব্র্যান্ড নিউ বিটুমিন প্রেসুর ডিস্ট্রিবিউটর" প্রকল্পের শর্ত পূরণ না করেই বিল উত্তোলন করা হয়েছে বলে অভিযানকালে টিম প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল এবং সারুলিয়ার সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প এবং "ইমপ্রুভমেন্ট অব ইনার সার্কুলার রিং রোড ফ্রম রায়েরবাজার সুইচ গেট টু লোহার ব্রিজ" শীর্ষক প্রকল্প নিয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রকল্পসমূহের রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছে এনফোর্সমেন্ট টিম। সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আমিনুল ইসলাম দুদক কর্মকর্তাদের জানান, মাত্র দুই মাস আগে তিনি এই পদে যোগদান করেছেন। তিনি দুদক টিমকে চাহিদা মাফিক তথ্য উপাত্ত দিয়ে সাধ্যমতো অফিসিয়ালভাবে সহযোগি করবেন এবং তিনি এই বিষয়ে সময় নিতে চান। একই সাথে ২০০৯ সালে থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কে প্রাপ্ত অভিযোগ নিয়ে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করবেন এবং প্রাপ্ত তদন্ত প্রতিবেদন দুদক কর্মকর্তাদের সরবরাহ করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা শহরে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন ও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ নির্মাণ প্রকল্প ২০০৯ সালের। এরপর ২০১১ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্ত হবার পর বাকী প্রকল্প গ্রহণ করা হয় বলে জানান ডিএসসিসির কর্মকর্তারা। এরমধ্যে ৩ বছর ছিল প্রশাসকদের আমল। এরপর সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের ৫ বছর এবং সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপসের আমলের। তবে সাবেক ওই দুই মেয়রের আমলে 'টপ টু বটম' ডিএসসিসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চাকরি করেছেন। বিশেষ করে প্রকৌশল ও ক্রয় বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা মেয়র দপ্তরের অধিকাংশ সময় মৌখিক নির্দেশনা কার্যকর করতে বাধ্য ছিলেন। এর বাইরে কোন কিছু করার সাহস পাননি বলেও জানান একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তবে বর্তমানে তারা স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করছেন এবং কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
আ. দৈ. /কাশেম