ডায়াবেটিস নিয়ে জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের। এ বয়সে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষিপ্রতা হারায় মানুষের শরীর। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, পঞ্চাশের পর ডায়াবেটিস নিয়েও সুস্থ থাকা সম্ভব। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য সুসংবাদটি হচ্ছে, জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এনে স্বাস্থ্য ভালো রাখার মাধ্যমে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারেন রোগীরা।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হিসেবে ধরে নেয়া হয়। এটি নিয়ন্ত্রেণে না থাকলে দেহের হৃদরোগ, কিডনির ক্ষতি, স্নায়ুর ব্যথা ও দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে আনা’সহ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে ডায়াবেটিস।
ঝুঁকি কমাতে করণীয়ঃ
১.প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপটি হচ্ছে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। রক্তে শর্করার উচ্চ মাত্রা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কারো দেহের রক্তনালী ও অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ল্যানসেট’-এর ‘ডায়াবেটিস অ্যান্ড এন্ডোক্রিনোলজি’ গবেষণাপত্রে দেখা গেছে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে শারীরিক জটিলতার ঝুঁকি কমে আসতে পারে। ফলে নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা, ওষুধ খাওয়া, ইনসুলিন গ্রহণ ও প্রয়োজনে চিকিৎসা পরিকল্পনা সমন্বয়ের জন্য ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে।
২.ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ সুষম খাদ্যাভাস। রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে এমন চিনি দেয়া খাবার ও পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। পাশাপাশি গুরুত্ব দিতে হবে শাকসবজি, শস্য দানা, চর্বিহীন প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বি জাতীয় খাবারের ওপর।
৩.আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা। রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এটি এবং দেহের ইনসুলিন ব্যবহারের পদ্ধতিকেও উন্নত করে ব্যায়াম। হার্টের স্বাস্থ্যকেও ভালো রাখে ব্যায়াম, যা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি থাকে।
সপ্তাহের বেশিরভাগ দিন ৩০ মিনিটের জন্য হাঁটাচলা, সাঁতার কাটা বা সাইকেল চালানোর মতো ব্যায়াম কার্যকর উপায় হতে পারে ডাঢাবেটিস নিয়ন্ত্রণে।পরিমিত ব্যায়াম স্নায়ুর ক্ষতি ও দুর্বল রক্ত সঞ্চালনের মতো জটিলতার ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রাও ডায়াবেটিসের জটিলতা প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখে। কারণ, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল দেহের রক্তনালীর ক্ষতি করে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তচাপ ১৪০/৯০ মিমিএইচজির নীচে ও কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাস্থ্যকর পরিসরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে ‘আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন’। এক্ষেত্রে জীবনযাত্রার পরিবর্তন যেমন লবণ কম খাওয়া, চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা ও ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বেশিরভাগ সময় তাদের পায়ের যত্ন নেয়ার বিষয়টি উপেক্ষা করেন। পায়ের যত্ন নেওয়া তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রার কারণে স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ে আঘাত বা সংক্রমণ বিষয়টিকে সহজ করে তোলে। ফলে দুর্বল রক্ত সঞ্চালনের কারণে ক্ষত নিরাময়ও কঠিন হয়ে পড়ে। এসব জটিলতা রোধে পায়ে ভালভাবে ফিট করে এমন আরামদায়ক জুতা পরতে হবে। নিয়মিত পায়ের যত্ন নিলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ৫০ শতাংশেরও বেশি কমানো যেতে পারে।
ডায়াবেটিসের কারণে চোখের স্বাস্থ্যও ঝুঁকির মধ্যে থাকে। রক্তে শর্করার উচ্চ মাত্রা চোখের ক্ষুদ্র রক্তনালীর ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে ডায়াবেটিক রোগীদের দেখা দিতে পারে রেটিনোপ্যাথি বা অন্ধত্বের মতো অবস্থা। তাই চোখ বাঁচাতে বছরে অন্তত একবার চোখ পরীক্ষা করানো উচিত।
ডায়াবেটিকের জটিলতা প্রতিরোধের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ। রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে মানসিক চাপ। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। যোগব্যায়াম, ধ্যান, বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের মতো অভ্যাস ডায়াবেটিক রোগীদের শান্ত ও মনোযোগী থাকতে সাহায্য করে।
পঞ্চাশের পর ডায়াবেটিসের জটিলতা প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম, ভাল খাদ্যাভাস ও সার্বিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখার মতো বিষয়। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে ডায়াবেটিসে জটিলতার ঝুঁকি কমিয়ে এনে স্বাস্থ্যকর জীবন উপভোগ করতে পারেন রোগীরা।
আ. দৈ/ সাম্য