মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে টেন্ডার ড্রপিং নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও সংস্থাটি বলছে কোনো অনিয়ম হয়নি। কিন্তু মহাপরিচালকের কাছের হিসেবে পরিচিত একটি নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার চেষ্টা এখনো চলছে।
এতে টেন্ডার ড্রপিং প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। এছাড়া এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে সংস্থার ডিজির আনুগত্যের কর্মকর্তাদের দিয়ে। তদন্ত প্রতিবেদনেও ডিজির সাফাই গাওয়া হয়েছে।
এদিকে ভুক্তভোগি ঠিকাদাররা বলছেন, গত ১৫ ডিসেম্বর টেন্ডার জমা নেয়ার প্রক্রিয়াই ভুল ছিল। তাছাড়া যে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল সেই সময় তারা ট্রেন্ডার জমা দিতে গেলেও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের বাঁধার মুখে তারা জমা দিতে পারেননি। এ নিয়ে মহাপরিচালকের কাছে অভিযোগ দেয়া হলেও তিনি আমলে নেননি। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ওইদিন (১৫ ডিসেম্বর) আইন মেনেই টেন্ডার জমা নেওয়া হয়েছে। তবে জমা নেয়া নিয়ে একটু বিশৃঙ্খলা হয়েছিল। এ কারণে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটি গত ২৫ ডিসেম্বর প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় ওই প্রতিবেদন যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবে।
জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে আউটসোর্সিংয়ের ৩১৪টি পদে নিয়োগের টেন্ডার ড্রপিং নিয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর প্রকাশ্যে অনিয়মের বিষয় ধরা পড়লেও কারো বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং মহাপরিচালক নিজেই টেন্ডার পাইয়ে দেয়ার জন্য নিজের পছন্দের নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ নেন।
কুমিল্লার তিতাস এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারি মইনুদ্দিন খান তিতাস নামক জনৈক এক বিএনপি নেতার প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য মহাপরিচালকের নির্দেশে মেনে নেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। অতিরিক্ত পরিচালক শওকত এবং সহকারি পরিচালক মেহেদি হাসান এক্ষেত্রে মুখ্য ভুমিকা পালন করেন।
টেন্ডার বঞ্চিত ঠিকাদররা বলছেন, অধিদফতরের পক্ষ থেকে তাদের সময় দেয়া হয়েছিল সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা। তারা যথাসময়ে উপস্থিত হলে তাদের ওপর হামলা চালায় একদল সন্ত্রাসী। তাদের টেন্ডার জমা দিতে দেয়া হয়নি। আগে থেকেই তারা একটি পক্ষকে কাজ দিতে এ কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার রেখে যাওয়া অনুসারীরা রয়ে গেছেন এ সংস্থায়। পতিত সরকারের আস্থাভাজন আমলা হিসেবে পরিচিত মহাপরিচালক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানের এলাকার বাসিন্দা প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান মিলে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট।
শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হওয়ার কারণে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভোলা ও নোয়াখালী জেলায় ডিসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জেলাপর্যায়ে বিরোধী দল এবং ভিন্নমতের জনগণের ওপর স্টিম রোলার চালানোর পুরস্কার হিসেবে শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এই কর্মকর্তাকে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে পদায়ন করা হয়।
জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে কর্মকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলীয়করণ থেকে শুরু করে ভিন্নমতের মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সরকারবিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে তার অধীনস্থ জুনিয়র এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ কর্মকর্তারা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রজনতার আন্দোলনকে নিষ্ঠুরতার সাথে দমন করেন। নোয়াখালী জেলার ডিসি থাকা অবস্থায় তার অত্যাচার, নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র ওই অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে দাগ কেটে রেখেছে।
অভিযোগ রয়েছে, স্বৈরাচারী সরকারের এই কর্মকর্তা শেখ হাসিনার পুরস্কার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের পদ বাগিয়ে নেন। এরপর ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেআইনিভাবে অত্যন্ত লোভনীয় মূল্যবান দুইটি প্লট এবং একটি ফ্ল্যাট বাগিয়ে নিয়েছেন, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২০ (বিশ) কোটি টাকা। সেখান থেকে নিয়োগ পান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক হিসেবে।
এখানে আসতে শেখ হাসিনার আশীর্বাদের পাশাপাশি অঢেল টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে তাকে। স্বৈরচারী সরকারের পতনের সাথে সাথেই ভোল পাল্টে নিজেকে বিএনপি, জামায়াতের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেয়া শুরু করেছেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।
আ. দৈ/ আফরোজা