শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫,
৫ মাঘ ১৪৩১
ই-পেপার

শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
স্বাস্থ্য
নারীদের শরীরের চামড়া ঝুলে যায় কেন?
ডেস্ক রিপোর্ট
Publish: Wednesday, 25 December, 2024, 8:01 PM  (ভিজিট : 42)

লাইপেডিমা একটা অপরিচিত রোগ, যেটিকে প্রায়ই স্থূলতার (ওবেসিটি) সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়। প্রধানত নারীদেরই এই রোগ হয়ে থাকে। এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা হিসেবে তাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেয়া হয়। যদিও লাইপেডিমা স্থূলতার থেকেও অনেক বেশি গুরুতর রোগ।

শুধুমাত্র ওজন কমিয়ে এই রোগ থেকে মুক্তি মেলে না। এই রোগ সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত আমরা কী জানি? কীভাবে এই রোগ মোকাবেলা করা সম্ভব?

রোগবিদ্যা বা প্যাথলজিতে এটি লাইপোডিসট্রফিস নামে পরিচিত। লাইপেডিমায় শরীরের চর্বির ভারসাম্য পরিবর্তন হয়। একইভাবে তা ফ্যাটি টিস্যুর ব্যাপক অসামঞ্জস্যপূর্ণ বৃদ্ধি ঘটায়।

যদিও এটা সচরাচর পায়ে হয়, এ রোগে নিতম্ব এবং বাহুও আক্রান্ত হতে পারে। এর ফলে কোমর এবং অন্যান্য অঙ্গের মধ্যে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়।

বর্তমানে এই রোগ নির্ণয়ের জন্য কোন অভ্রান্ত পরীক্ষা নেই। অর্থাৎ, এই রোগ নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা যাবে এমন কোনো পরীক্ষা নেই।

রোগীর চিকিৎসার ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষার ফলাফল, যে কোনো ধরনের ক্লিনিক্যাল উপসর্গ এবং একইসঙ্গে রোগীর শরীরে একটি বা দুইটি রোগের উপস্থিতি অথবা এর সঙ্গে জড়িত যে কোনো উপসর্গ- সব কিছুর ওপর ভিত্তি করে এই রোগ নির্ণয়ের জন্য একটি মূল্যায়ন করতে হয়।


২০১৮ সাল পর্যন্ত চিহ্নিতই করা হয়নি
১৯৪০ সালে এই রোগটি সম্পর্কে প্রথম জানা যায়। কিন্তু তারপরও বিগত দশকগুলোতে এই রোগটি সবার অগোচরে রয়ে গেছে। সত্যিকার অর্থে ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই রোগটিকে রোগের আন্তর্জাতিক শ্রেণী বিভাজনে অন্তর্ভুক্ত করেনি। ওই বছরই স্পেনে প্রথম সর্বসম্মতভাবে লাইপেডিমা রোগের নথি তৈরি করা হয়।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল এ রোগের কারণে শরীরে ফ্লুইড তৈরি হয়। অথবা শরীরের টিস্যুতে তরল জমা হয়ে ফুলে ভারী হয়ে যায়, যেটি ফোলা রোগ নামে পরিচিত।

তবে এখনও পর্যন্ত এ রোগের কারণে শরীরের টিস্যুতে তরল জমে ভারি হওয়ার কারণে বিভিন্ন অঙ্গের বৃদ্ধি অথবা ব্যথা বা অন্য উপসর্গ দেখা দেওয়ার কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এই কারণে ‘লাইপেডিমা’ টার্মটিকে ‘লিপালজিয়া সিনড্রোম’-এ (অস্বাভাবিক ফ্যাটি টিস্যু জমে ব্যথা হওয়া) রূপান্তর করার পরামর্শও দেয়া হয়েছে। লাইপেডিমা রোগের একটি বৈশিষ্ট্য হল টিস্যুর যেখানেই স্পর্শ করা হয় সেখানেই ব্যথা বোধ হয়।

স্বাস্থ্যের অন্যান্য সমস্যার সাথেও এই রোগটি হয়। যেমন, শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে অত্যধিক গতিশীলতা, পেশী শক্তি হ্রাস এবং ঘুমের ব্যাঘাত হলেও লাইপেডিমা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। এছাড়াও এ রোগ শিরা, ধমনী বা লসিকা তন্ত্রের (লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম) পরিবর্তনের মতো অবস্থাতেও একইসঙ্গে হতে পারে।


নারীদের হরমোন পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত
রোগবিদ্যা বলে এই রোগের উৎপত্তি নানা কারণে হতে পারে। এসব কারণের একটি হল হরমোন। প্রধানত নারী সেক্সকে এটি প্রভাবিত করে। বেশ কিছু গবেষণায় এটা দেখা গেছে যে, প্রতি দশজনে একজন নারী এই রোগে আক্রান্ত হন।

যদিও এ রোগ নির্ণয়ের মানদণ্ডের অভাব, লাইপেডিমা সম্পর্কে জ্ঞানের অজ্ঞতা প্রমাণ করে যে প্রকৃত অর্থে কত শতাংশ নারী এই রোগে আক্রান্ত হন, তা আমরা জানতে পারি না। তবে যা জানা যায় সেটি হল, এ রোগের রূপ বা বিকাশ কিভাবে হয় তা মহিলাদের হরমোনের পরিবর্তনের সময়কালের সঙ্গে মিলে যায়।

যেমন: বয়ঃসন্ধিকাল, গর্ভাবস্থা, সন্তান জন্ম দেয়া, মেনোপজ অথবা হরমোনাল গর্ভ-নিরোধক ব্যবহারের সময় এ রোগটির বিকাশ দেখা যায়।

এইসব পরিস্থিতিতে নারীদের হরমোন বিশেষ করে অ্যাস্ট্রোজেন হরমোন ওঠানামা করে। এই বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে অবশ্যই নির্দিষ্ট জিনগত প্রবণতাকেও যুক্ত করতে হবে আমাদের।


কিভাবে মোকাবেলা করতে হবে?
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে লাইপোডিমা রোগের বৈশিষ্ট্যের প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। নিশ্চিতভাবেই সামনের দিনগুলোতেও এটি অব্যাহত থাকবে। এই রোগের চিকিৎসা হিসেবে অস্ত্রোপচার বহুল প্রচলিত। লাইপোসাকশনের মতো কৌশল এই রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

লাইপোসাকশনই অস্ত্রোপচারের একমাত্র কৌশল, যাতে শরীরের নির্দিষ্ট অংশের ফ্যাটি টিস্যু নির্মূল করা হয়। তবে কিছু ‘রক্ষণশীল’ চিকিৎসক এর চিকিৎসায় আরো অনেক কিছু পরামর্শ দেন।

এছাড়াও এর নানা জটিলতার কারণে ২০২০ সালে ইউরোপীয়ান লাইপেডিমা ফোরাম সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই রোগের ‘বহুমাত্রিক ব্যবস্থাপনা’ নিতে হবে। কারণ স্বাস্থ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সঙ্গে এটি জড়িত।


সক্রিয় ভূমিকা
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, রোগীকে নিজের চিকিৎসার জন্য অতি আগ্রহী হতে হবে। যে সব রোগের প্রতিকার নেই এমন অন্যান্য অসুস্থতার জন্য এটা সাধারণ যে রোগী নিজেই অভ্যাস গড়ে তুলবে।

একইসঙ্গে কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন, যাতে দীর্ঘমেয়াদে রোগের লক্ষণ এবং স্বাস্থ্যের অবস্থার উন্নতি হবে।


ফিজিওথেরাপি
এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের স্ট্রেচার প্রয়োজন হতে পারে। লাইপেডিমায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা যাতে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে সে লক্ষ্যে ফিজিওথেরাপিস্টরা কাজ করেন।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের শিক্ষিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাতে তারা রোগটি সম্পর্কে জানে যে এটা কী এবং কী নয়।

একইসঙ্গে কোন অভ্যাসগুলো উপকারী এটাও জানা তাদের জন্য জরুরি। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে রোগী তার দৈনন্দিন জীবনে ধীরে ধীরে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অভ্যাস গড়ে তোলে।

একইসঙ্গে তাদের বৈশিষ্ট্যের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার মতো ব্যায়ামের নির্দেশিকা তৈরি করা হয়।


কমপ্রেশন থেরাপি
এই কমপ্রেশন থেরাপির মাধ্যমে পায়ে রক্তপ্রবাহ বাড়ানোর জন্য নিয়ন্ত্রিত চাপ প্রবাহের কৌশল ব্যবহার করা হয়। কমপ্রেশন মোজা পরলে এই ফ্যাটি টিস্যু কমবে না। অথবা আপনার ওজন বাড়লেও পায়ে চর্বি বৃদ্ধি রোধ করবে না।

যাইহোক, সুস্থ ব্যক্তিদের ওপর গবেষণায় দেখা গেছে যে ত্বকের নিচের টিস্যুতে প্রদাহজনক প্রক্রিয়ার ওপর এই নিয়ন্ত্রিত চাপ প্রবাহের থেরাপি বেশ উপকারী প্রভাব ফেলে।

এই ধরনের মোজা অবশ্যই চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক পরামর্শ দিলেই কেবল এটি ব্যবহার করা যাবে।


ওজন ব্যবস্থাপনা
যদিও লাইপেডিমা নিজেই একটি রোগ, তবুও এ রোগের একটা বিশাল অংশের রোগীরা এমনিতে আগে থেকেই অনেক মোটা হয়। আরো ওজন বৃদ্ধি হলে লাইপেডিমার খারাপ অবস্থা হয়।

যদিও ওজন কমানো এই রোগের চিকিৎসায় প্রাধান্য পায় না। এটা স্থূলতা বা অন্য গুরুতর রোগের রোগীদের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা উচিত।


মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা
সৌন্দর্যের যে প্রচলিত আদর্শ সেটি অনুযায়ী অনেক রোগীরই তাদের শরীর, শারীরিক গঠন নিয়ে সামাজিক চাপের কারণে হতাশায় ভুগতে পারে। অন্যান্য রোগীরাও অতি মাত্রায় মানসিক চাপে ভুগতে পারে। যেটা ব্যথার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

কোন রোগীরা এই মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে উপকৃত হতে পারে সেটা চিহ্নিত করা স্বাস্থ্যসেবা দানকারী চিকিৎসকদের ওপর নির্ভর করে।


পুষ্টি
এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা জরুরি। একইসঙ্গে তাদের খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। অর্থাৎ প্রদাহজনক ও প্রদাহবিরোধী প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে তাদের।

একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারার জন্য এক্ষেত্রে পুষ্টিবিদদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের পছন্দের জন্য দিক-নির্দেশনা তারা দিয়ে থাকেন।
 
শেষ পর্যন্ত এই রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়া খুবই জটিল। কারণ এখনো অনেক চিকিৎসকই এই লাইপেডিমা রোগ সম্পর্কে জানেন না। অন্য রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিজ্ঞতা ভাগ করা একটি প্রথম ধাপ হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, স্পেনে লাইপেডিমা আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংগঠন ‘এডালাইপে’ অথবা স্প্যানিশ ফেডারেশন অব লিম্ফেডিমা এবং লাইপেডিমা অ্যাসোসিয়েশনে মানুষ অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন।

রোগী সনাক্ত করা এবং তাদের সর্বোত্তম চিকিৎসা দেয়ার জন্য এ রোগের কারণ এবং রোগ নির্ণয়ের জন্য অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়া অবশ্যই বৈজ্ঞানিকদের ওপর নির্ভর করে। সূত্র : বিবিসি


আ.দৈ/এআর 
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

দুদকের মামলায় বিএফআইইউয়ের সেই মাসুদ বিশ্বাস গ্রেফতার
এনসিটিবি’র সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় ৩০০ জনের নামে মামলা
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলেন যারা
বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক চায় ভারত: জয়সওয়াল
বাংলাদেশে নিপীড়ন বন্ধে প্রয়োজন স্থায়ী সংস্কার: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পথে
ফরিদপুরে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নেতারা গন সংযোগে ব্যস্ত
দক্ষতা ও নিষ্টার পুরস্কার, দুদকের মহাপরিচালক-পরিচালক পদে পদোন্নতি
চায়না পোশাকে সয়লাব দেশ
রাজনৈতিক ঐক্যে যাতে ফাটল না ধরে: সালাউদ্দিন
স্বাস্থ্য- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : [email protected]
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝