ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ৭টি প্রবেশ পথে বসেছে ব্যারিয়ার এবং সিকিউরিটি সার্ভিলেন্স বক্স। এর মধ্য দিয়ে আজ শুক্রবার যানবাহন নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে ঢাবি ক্যাম্পাসে রিকশা ও বহিরাগত যানবাহন প্রবেশ একেবারেই সীমিত হয়েছে।
এই বিষয়ে ঢাবির প্রক্টর সহযোগী সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল ক্যাম্পাসে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা। ক্যাম্পাসে রাস্তা ব্যবহার করলে দ্রুত সময়ে মানুষ তার গন্তব্যে যেতে পারে দেখে অনেকেই এই রাস্তা ব্যবহার করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, ভিসি চত্বর, শহীদ মিনার এলাকায় অনেক সময় দীর্ঘ জ্যাম লেগে থাকে। অনেক গাড়ির আনাগোনা থাকায় মাঝে-মধ্যে দুর্ঘটনা ও ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে চলাফেরা বিঘ্নিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এটি যেহেতু সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা তাই আমরা একেবারেই তা বন্ধ করে দিতে পারিনা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ বসে আমরা নির্দিষ্ট একটি সময় ঠিক করে দিবো। যে সময়ের মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়িগুলো ক্যাম্পাসের রাস্তা ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবে।
আজ শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, পলাশীর মোড়, নীলক্ষেত মোড়, শহীদ মিনার, শাহবাগ, শহীদুল্লাহ হল, হাইকোর্ট মোড় এবং শিববাড়ি ক্রসিং মোড়ে ব্যারিয়ার বসানো। এসব রাস্তা দিয়ে একেবারেই সীমিত যানবাহন চলাচল করছে। ক্যাম্পাসের স্টিারযুক্ত গাড়ি ছাড়া কোনো যানবাহন প্রবেশ করছে না। সরেজমিন ঘুরে আরও দেখা যায়, টিএসসি, ভিসি চত্বর, শহীদ মিনার ও দোয়েল চত্বর এলাকায় রিকশা চলাচল ও সীমিত। বন্ধের দিনগুলোতে এসব এলাকায় আগে যদিও অনেক রিকশার আনাগোনা ছিল, এদিন তা ছিল না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সজিব ভূঁইয়া বলেন, দীর্ঘদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ভালো লাগছে। মানুষের আনাগোনা ও তীব্র যান চলাচলের কারণে আগে বন্ধের দিনে হল থেকেই বের হতে ইচ্ছে হতো না। কিন্তু আজ এই পরিবেশ দেখে ভালো লাগছে। জানি না কতদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সবসময় এমন কঠোর থাকা।
এদিকে হঠাৎ প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে, যানজটের ভোগান্তিতে অসন্তোষ জানিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারিম্যান রেজাউল করিম বলেন, তিনি একটি পণ্য নীলক্ষেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের আবাসিক এলাকায় পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত তাঁর জানা ছিল না। সে কারণে মোটরসাইকেল নিয়ে তাঁকে দীর্ঘ সময় নীলক্ষেত মোড় এলাকায় আটকে থাকতে হয়। রেজাউল আরও বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার আগে ঘোষণা দেয়া উচিত। এতে মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে না।
সার্বিক বিষয়ে পুলিশ জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বহিরাগত যানবাহন ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এতে শাহবাগ, নীলক্ষেত, বাংলামোটর, মৎস্য ভবন, আজিমপুর-মিরপুর সড়কে যানজট ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মনজুর আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে প্রবেশমুখগুলোতে নিরাপত্তা ও তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে আশপাশের এলাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। সে সময় তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে স্টিকারবিহীন গাড়ি, গণপরিবহন ও ভারি যানবাহন চলাচল এবং বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এসব ব্যারিয়ার এবং সিকিউরিটি অ্যান্ড সার্ভিলেন্স বক্স স্থাপন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করাসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে এসব বেরিয়ার এবং সিকিউরিটি অ্যান্ড সার্ভিলেন্স বক্স কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এই উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
আ.দৈ/এআর