রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের পাশে পোষ্য কোটার প্রতীকী 'কবর' নির্মাণ করেন তারা। ওই কবর ইট দিয়ে বাঁধাই করে শিক্ষার্থীরা কোটার প্রতি নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
জানা গেছে, ১৯৭৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা চালু হয়েছিল। সেই বছরের প্রতীক হিসেবে শিক্ষার্থীরা কবরটি ৭৭টি ইট দিয়ে পাকা করেছেন। শিক্ষার্থীরা জানান, এই কবরটি পোষ্য কোটার অবসানের বার্তা বহন করবে।
প্রতিবাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। সোমবার রাতে 'কবর' পাকা করার সময় তিনি ফেসবুকে ৪ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শেয়ার করেন।
ভিডিওতে সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, "বাংলাদেশে প্রথম অযৌক্তিক পোষ্য কোটার সমাধি এখানে রচনা করেছি। এটি সিনেট ভবন ও উপাচার্যের বাসভবনের মাঝামাঝি স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। ১৯৭৭ সালে তৎকালীন উপাচার্য আব্দুল বারী তার সন্তানকে পোষ্য কোটায় সুযোগ দিতে এই কোটা চালু করেছিলেন। এই সমাধি চিরস্থায়ী থাকবে। প্রতিদিন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এখানে আসা-যাওয়ার সময় এটি দেখতে পাবেন। আশা করি, এটি দেখে তাদের বিবেকবোধ জাগ্রত হবে এবং তারা নিজেদের এই কোটা থেকে সরে আসবেন। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করে দিতে চাই, এই প্রতীকী সমাধিস্থলে কোনো আক্রমণ হলে তার ফল ভয়াবহ হবে।"
শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকালে প্রতীকী কবরের পাশে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি শুরু করেন। ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচির আওতায় পোষ্য কোটার প্রতীকী কবরের পাশে বাঁশ দিয়ে টাঙানো ব্যানারে বড় করে লেখা হয়, "জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি।" সেখানে শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানানো হয়, "পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ জানাতে এখানে জুতা নিক্ষেপ করুন।"
প্রতিবাদে অংশ নিতে শিক্ষার্থীরা দলে দলে এসে ব্যানারের দিকে জুতা নিক্ষেপ করেন। কেউ কেউ প্রতীকী কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং স্মৃতি হিসেবে ছবি তোলেন।
পোষ্য কোটা বিরোধী এই কর্মসূচি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তিনি এক ফেসবুক পোস্টে লিখেন, "শিক্ষার্থীরা তাদের যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করতে পারে। এটি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে জুতা নিক্ষেপের মতো কর্মসূচি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মর্যাদা এবং ভাবমূর্তির সঙ্গে যায় না। আন্দোলনের ভাষা রুচিসম্মত এবং শালীন হওয়া প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, তারা যেন এমন নিম্নমানের কর্মসূচি এড়িয়ে চলে।"
পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের এই অভিনব প্রতিবাদ ক্যাম্পাসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
আ. দৈ./ সাধ