বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সাম্প্রতিক রাজধানীসহ সারাদেশের ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে, আমরা কি বুঝি আমাদের আতঙ্কটা কোথায়? আমরা কি বুঝি আততায়ী কোথায় ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে? বুঝি না। বুঝলে এত দ্বায়িত্বহীন কথাবার্তা বের হতো না আমাদের মুখ দিয়ে। ভয়াবহ উদ্বিগ্ন আমি। ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করবেন, যারা আমাদের বিভেদের দিকে নিয়ে অনৈক্য করতে চাচ্ছেন, তারা আমাদের শত্রু না মিত্র?
আজ বুধবার (২৭ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত ‘স্বৈরাচারের পতন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও রাষ্ট্র গঠনে চিকিৎসক সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এক ফ্যাসিস্ট আমাদের গলা চেপে ধরেছিল, এখন আপনারা একে নিশ্চিহ্ন করতে চান, ওকে ধরতে চান। তাহলে সাধারণ মানুষ কোন দিকে যাবে? তাদের বিভ্রান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন কেন? এভাবে একটি সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিবারই বাংলাদেশের কিছু তরুণ যুবক প্রাণ দিচ্ছেন, স্বাধীনতা গণতন্ত্র ভোটাধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য। ৫ আগস্টের বিজয় রক্ত ও প্রাণের মধ্য দিয়ে, রক্ত রঞ্জিত রাজপথ দিয়ে। একবার ভাবুন, কিভাবে একটা মানুষ নিস্বার্থভাবে দেশের জন্য প্রাণ দিতে পারে। আমরা বার বার এমনটি দেখি, দেশ মাতৃকার টানে প্রাণ দিচ্ছে।
সাম্প্রতিক দেশে পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, এখনো স্বৈরাচার পতনে তিন মাস শেষ হয়নি। কী অদ্ভুত! একের পর এক মাঠে নামছে বিভেদ নিয়ে, সবাই পত্রিকা অফিসে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছি, আমরা কি এমন দেশ চেয়েছিলাম? কেন এত বিভাজন? কেন এত হিংস্রতা? আর কতবার বাংলাদেশকে উপরে তোলার চেষ্টা করব?
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা শহীদ ডাক্তার মিলনের আত্মত্যাগের মূল্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারিনি। মিলন প্রাণ দিয়েছে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে নিতে, এই ভোটাধিকার ফিরিয়ে নিতে কেন বার বার জীবন দিতে হবে?
দেশে দুই তিন দিনের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি ভয়াবহভাবে উদ্বিগ্ন। ধর্ম নিয়ে কী উন্মাদনা তৈরি হয়েছে দেশে! তিন মাসের মধ্যে আমাদের আসল চেহারা বের হতে শুরু হয়েছে।তিনি আরো বলেন, জানি আপনারাও আমাকে অনেক কিছু বলেন। স্পষ্ট কথা আমি লিবারেল ডেমোক্রেসি পক্ষের লোক, আমার দলও তাই। আপনার ভিন্ন মত একজনের সাথে থাকতে পারে, তাই বলে কি তাকে কথা বলতে দিবেন না?
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এই ’২৪ এ আমাকে ভোটের অধিকারের জন্য চিৎকার করতে হচ্ছে। কোন জাতি আমরা! এই কথাগুলো কী কখনো আপনারা জিজ্ঞেস করেন? এবার তো একটা সুযোগ এসেছিল সবাই মিলে একযোগে দেশের একটা পরিবর্তন নিয়ে আসার। ছেলেরাও ছিল সামনে, আমরাও ছিলাম। সবাই মিলে আমরা পরিবর্তনের কাজটা করতে পারি। তিনটা মাস হয়নি এখনো, এর মধ্যেই আমাদের আসল চেহারা বের হয়ে এসেছে। এরকম চেহারা নিয়ে কোনদিনই সাফল্য অর্জন করা যায় না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যতই বড় বড় কথা বলি, বক্তৃতা করি, সবাইকে এক করার চেষ্টা করি; হয় না। আমার নিজের ঘরেই যদি বিভাজন থেকে যায়, বিভেদ থেকে যায়, আমি সেটা কখনোই ঠিক করতে পারব না। আমরা কয়েকটা দিন ধরেই খুবই চিন্তিত, খুবই উদ্বিগ্ন ভয়াবহ ভাবে। আপনারা চিন্তা করতে পারেন ধর্মকে কেন্দ্র করে যে উন্মাদনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। আমরা মুক্ত স্বাধীন মিডিয়ার জন্য, প্রেসের জন্য, সভা করার জন্য এতদিন লড়াই করলাম; তারা উড়িয়ে দিচ্ছে। এই বাংলাদেশ তো আমরা দেখতে চাই না। কী উন্মাদনা!
তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক মানুষ আছে, যাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে আতঙ্কিত হই। পুড়িয়ে দাও, জ্বালিয়ে দাও- এই ধরনের কথাবার্তা হচ্ছে সেখানে। চিন্তা করতে পারেন, কোন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে? আমরা কি ভাবি আমাদের ভয়টা কোথায়? আমরা কি বুঝি আমাদের আতঙ্কটা কোথায়? আমরা কি বুঝি আততায়ী কোথায় ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে? বুঝি না। বুঝলে এত দ্বায়িত্বহীন কথাবার্তা বের হতো না আমাদের মুখ দিয়ে। দুর্ভাগ্য, কিছু কিছু মানুষ নিজেকে অত্যন্ত জনপ্রিয় মনে করেন। সবচেয়ে দেশপ্রেমিক মনে করেন। আর গোটা জাতিকে আজকে তারা বিভাজনের দিকে ঠেলে দিয়ে, উসকে দিয়ে একটা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আপনারা গভীরভাবে চিন্তা করবেন, আমি কারো নাম বলব না, বলতে চাই না। ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করবেন, যারা আমাদের বিভেদের দিকে নিয়ে অনৈক্য করতে চাচ্ছেন তারা আমাদের শত্রু না মিত্র?
পত্রিকা অফিসে আক্রমণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান মির্জা ফখরুল। ১৫ বছর ধরে গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছি। আপনার সাথে আমার মতের অমিল থাকতে পারে, তবে আপনার কথা বলার স্বাধীনতার জন্য আমরা জীবন দিয়ে হলেও লড়ব।
আ. দৈ. /কাশেম