শীতকাল মানেই ঠাণ্ডা বাতাস আর উষ্ণতার খোঁজে প্রকৃতির সাথে জীবনের তাল মিলিয়ে চলার এক ভিন্ন রূপ। এই ঋতুর সঙ্গী হয়ে আসে হিমেল হাওয়া, কুয়াশার চাদর। শীতকাল ফ্যাশনের জন্যও একটি বিশেষ সময়। শীতের পোষাক শুধু প্রয়োজন মেটানোর জন্য নয়, এখন এটি স্টাইল ও ফ্যাশনের অন্যতম মাধ্যম। শীতের আমেজ শুরু হতেই দেশের বাজার গুলোতে গরম জামার চাহিদা বেড়ে গেছে। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তাদের পোশাকের সংগ্রহে গরম কাপড় যুক্ত করতে শুরু করেছে। একারণে মার্কেটগুলোতে লেগেছে উৎসবমুখর ভিড়।
শীতকালে গরম কাপড়ের চাহিদা বৃদ্ধির মূল কারণ শীতের তীব্রতা। গরম জামা শরীরকে ঠাণ্ডার হাত থেকে রক্ষা করে। শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে শিশু এবং বৃদ্ধদের জন্য উষ্ণ পোশাকের চাহিদাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। সোয়েটার, জ্যাকেট, হুডি, শাল, এবং উলের তৈরি পোষাকের চাহিদা এই সময়ে প্রচুর বেড়ে যায়। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম নতুন ডিজাইন এবং ট্রেন্ডি পোশাকের দিকে বেশি আকৃষ্ট।
ঢাকার নিউমার্কেট, গুলিস্থান, মিরপুর-১ এর ফুটপাতসহ চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার, রাজশাহী এবং সিলেটের আম্বরখানাসহ বিভিন্ন মার্কেট গরম কাপড়ের পসরা সাজিয়ে ক্রেতাদের আকর্ষণ করছে। শুধু বড় বড় শপিংমল নয়, ফুটপাত ও চড়া দামের দোকানগুলোতেও প্রচুর ভিড় দেখা যাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে তৈরি পোষাক যেমন উলের সোয়েটার এবং হাতের বোনা শীতের চাদর অনেক জনপ্রিয়। পাশাপাশি, বিদেশ থেকে আমদানি করা ব্র্যান্ডেড পোষাকও ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। চায়না, থাইল্যান্ড, ভারত থেকে আসা গরম জামার চাহিদা অনেক বেশি।
চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে কিছু মার্কেটে পোশাকের দামও হালকা ঊর্ধবগতি দেখা গেছে। তবে বিভিন্ন স্তরের ক্রেতাদের জন্য ভিন্ন দামের পোশাকও পাওয়া যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ক্রেতারা ফুটপাত এবং কম দামের দোকানের দিকে ঝুঁকছেন, যেখানে উচ্চবিত্তরা ব্র্যান্ডেড শপিং মল থেকে কেনাকাটা করছেন।
ঢাকার নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা উম্মে হাবিবা বলেন, এবছর শীত তুলনামূলক কিছুটা দেরিতে শুরু হলেও মার্কেটে পোষাকের বিভিন্নতা প্রচুর। তবে দোকানগুলোতে প্রায় একই রকমের পোশাক থাকলেও দামের তারতম্য অনেক। একই হুডি একেক দোকানে একেক মূল্য চাচ্ছেন বিক্রেতারা। সাথে ফুটপাতেও অনেক ফ্যাশনেবল গরম কাপড় পাওয়া যাচ্ছে। আরেক তরুণী জান্নাতুল জেমী বলেন, এখন প্রায় সব দোকানেই শীতের পোশাকের যোগান বেড়েছে। দেশীয় পণ্যের সাথে বিদেশী পোশাকগুলোও নজর কারছে। আমি মূলত অনলাইনে কিছু পোশাক দেখে সেগুলোই খুঁজছি।
গুলিস্থানে কেনাকাটা করতে আসা মোঃ কামরুল বলেন, ভেবেছি এখনও বাজারে শীতের কাপড়ের আধিক্য বাড়ে নি, কিন্তু মার্কেটে এসে দেখি চিত্র পুরো উল্টো। শীতের আমেজে মার্কেট জমজমাট। এসেছি নিজের জন্য হুডি কিনতে।
মিরপুর-১ এর ব্যবসায়ী আহম্মদ মাজেদ জানান, প্রতিবারের মত এবারেও শীত শুরু হতে হতেই তার দোকানে গরম কাপড়ের যোগান বাড়ান। মানুষের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে দেশি-বিদেশি সব রকম ডিজাইনের কাপড়ই তিনি বিক্রি করছেন। শীত বাড়ার সাথে সাথে বিক্রিও বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী। ফুটপাতের ব্যবসায়ী আব্দুর জব্বার বলেন, সব বয়সের ও ধরনের মানুষ এখন ফুটপাতে কেনাকাটা করছে। সাথে দামটাও তিনি সাধ্যের মধ্যে রাখার চেষ্টা করেন।
মূলত শীতকাল ও গরম কাপড়ের যুগলবন্দী মানুষের জীবনকে আরামদায়কের পাশাপাশি প্রতিদিনের সাজসজ্জায় আনে নতুনত্ব। শীতের প্রকৃতিকে উপভোগ করতে চাইলে গরম পোশাকের সাথে ফ্যাশনের এই মেলবন্ধন আমাদের ঋতুটিকে আরও উপভোগ্য করে তোলে।
আ. দৈ./ কাশেম/ শাকিলা