বহু কষ্টে একটি মাছ ধরার নৌকা তৈরি করেছিলেন সামেদ আলী। বছর না গড়াতেই নৌকায় ধরে ভাঙন। চলতি বছরের বন্যায় ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শেষ সম্বল নৌকাটি নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন তিনি। সেই স্বপ্ন আর বাস্তব হয়নি। সামেদ লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত মেঘনা অংশের জেলে। জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় জাল বুনে আর মাছ ধরেই পার করেছেন তিনি। পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করা সামেদের বয়স ষাট ছাড়িয়েছে আরো দুবছর আগে। তবে দীর্ঘ এ সময়েও দুঃখ তার পিছু ছাড়েনি।
মা ইলিশ সংরক্ষণে গত ১২ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে আগামী ৩ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরের মেঘনাসহ দেশের ৬টি অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এসময় ইলিশ শিকার, ক্রয় বিক্রয়, পরিবহন এবং মজুতও নিষিদ্ধ। অবরোধের এই সময়ে নিজের ভাঙা নৌকা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সামেদ। কপালে চিন্তার ভাঁজ আর গালে হাত দিয়ে দুঃখ ভাবনায় দিন কাটিয়ে দেন তিনি। কোনোমতে নিজের নৌকাটি টিকিয়ে রাখতে তিনি বারবার দিয়ে যাচ্ছেন আলকাতরার প্রলেপ।
হাসিনা সরকারের পতনের পর ইউপি কার্যালয়ে আসেন না উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন হাওলাদার। জনপ্রতিনিধি না থাকায় ইউনিয়নটির বাসিন্দা হয়েও নিজের দুঃখ কারো কাছে প্রকাশ করতে পারেন না বলে আক্ষেপ তার। বছরখানেক আগে প্রায় লাখ দুয়েক টাকা ঋণ নিয়ে নৌকা ও জাল বুনেন তিনি। জাল জোড়াতালি দেয়া গেলেও ভাঙা নৌকাটি মেরামত করার সাধ্য হয়নি তার। ঋণও হয়নি পরিশোধ।
সামেদ আলী বলেন, "জীবনের ৬২ বছর পার করেছি। এমন দিন কখনো দেখিনি। একদিকে অবরোধ আরেকদিকে অভাব সংসারে।" টানাপোড়েনের গল্প বলতে বলতে দুচোখ ঝাপসা হয়ে উঠে তার। ফিরে তাকান নৌকার দিকে। মায়াভরা চোখে নৌকাটি দেখে করেন আপসোস। মাঝে মাঝে মন খারাপ করে বসে থাকেন নৌকার পাশে। নিজের কেনা হাতুড়ি ও দা দিয়ে চেষ্টা করেন মেরামতের পথ খুঁজে বের করার। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়না তার।
এমন সামেদ আলীদের সংখ্যা জেলায় কম নয়। সরকারি চালের ভাগ সামেদ পেলেও তার সঙ্গে নদীতে মাছ ধরা মোস্তফা, বেলাল, হানিফ বাওয়া পাননি সরকারি-বেসরকারি কোনো খাদ্য সহায়তা।
নিজে চাল না পেলেও সামেদ আলীর ভাঙা নৌকা দেখে কষ্ট হয় জেলে মোস্তফার। তিনি বলেন, সামেদ আলীর নৌকার জন্য অনুদান দরকার। উপজেলা চেয়ারম্যান নাই, জনপ্রতিনিধিদের কেউ নাই। কার কাছে যাবো তার সাহায্যের জন্য। আমরা সামেদ আলীর জন্য নতুন নৌকা চাই।
আ. দৈ. /কাশেম/জিহাদ