সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫,
২৩ আষাঢ় ১৪৩২
ই-পেপার

সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
বিশেষ সংবাদ
সরকার পতনের টার্গেট নিয়েই এনবিআরের ৬১ দিনের আন্দোলন হয়েছে
ডেস্ক নিউজ
Publish: Sunday, 6 July, 2025, 11:04 PM  (ভিজিট : 10)

 টানা ৬১ দিনের এনবিআর আন্দোলনের নেপথ্যে ছিল সরকার উৎখাতের ‘গভীর ষড়যন্ত্র’। এনবিআর সংস্কার অধ্যাদেশের বিরোধিতা করা ছিল নেহায়েত একটা অজুহাত মাত্র। মূলত সুদূরপ্রসারী সূক্ষ্ম পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেশি-বিদেশি চক্রের ইন্ধনে সাধারণ আন্দোলনটাকে ‘কমপ্লিট শাট ডাউনের’ পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়। 

এমনকি এর আগে তারা প্রকাশ্যে সরকারের বদলি আদেশ ছিঁড়ে ফেলার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ পর্যন্ত দেখায়। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও এনবিআরের নিজস্ব অনুসন্ধানে এসব ষড়যন্ত্রের সুস্পষ্ট তথ্য প্রমাণ বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এ আন্দোলনকে অনেকে ঐতিহাসিক ‘কাশিমবাজার কুঠির’ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন। 

এনবিআরের কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা  গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করতে ১৭৫৭ সালের জুন মাসে যেভাবে মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজার কুঠিতে বসে মীর জাফর আর লর্ড ক্লাইভরা গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন, তেমনি আমাদের কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কিছু দলবাজ ও দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা ২০২৫ সালের মে-জুনে সেরকম চক্রান্ত করেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে যাদের সহযোগী হিসেবে হিসেবে কিছু গণমাধ্যমও সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রেখেছে।

এদিকে আন্দোলন-ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে প্রথমে একজন কাস্টমস কমিশনারকে চাকরি থেকে সাময়িক দরখাস্ত করা হয়। এরপর আরও কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া ছাড়াও দুর্নীতির তদন্ত শুরু করতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫ জন কর্মকর্তার নাম দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

ইতোমধ্যে ৮৪৫ পৃষ্ঠার বিশদ তথ্য উপাত্ত পাওয়া গেছে। যেখানে আন্দোলনকারীদের হোয়াটসআপ গ্রুপে লেখা নানান পরিকল্পনার কথা উল্লেখ রয়েছে। এমনকি অর্থ উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে একজন অতিরিক্ত কর কমিশনার বাজে মন্তব্য করেন। যা প্রকাশযোগ্য নয়। তার নাম শামীম বুলবুল। বর্তমানে তিনি ঢাকার কর অঞ্চল-২১- এ কর্মরত। তার বাড়ি বাগেরহাট। গত ২৬ জুন রাত ১০টা ৬ মিনিটে তিনি হোয়াটসআপ গ্রুপে ওই বাজে মন্তব্য করেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোববার রাতে অতিরিক্ত কর কমিশনার শামীম বুলবুল গণমাধ্যমকে বলেন, অভিযোগটি আংশিক সত্য। এটা ছিল আমাদের ব্যাচমেটদের একটা গ্রুপ। সেখানে ওই কথাটি আমি বলেছি- আমার একজন ব্যাচমেটকে। কিন্তু আমার কমেন্টের উপরে যে অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্য সংক্রান্ত একটা পত্রিকার স্ক্রিনশর্ট ছিল সেটি আমি খেয়াল করিনি। এখন শত্রুতাবশত আমার কোনো ব্যাচমেট সেটি স্ক্রিনশর্ট দিয়ে বাইরে কাউকে দিয়েছে। 

সূত্র জানায়, এভাবে হোয়াটসআপ গ্রুপ থেকে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দা সংস্থাসহ এনবিআরের দায়িত্বশীল নীতিনির্ধারক মহল নিশ্চিত হয়েছে, দাবি আদায় তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল- রাজস্ব আদায় তছনছ করে দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। এরমধ্য দিয়ে সারা দেশে সরকারি অফিসে আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে আর একটা গ্রুপ সক্রিয় ছিল। এরা পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের হয়ে প্রশাসনের মধ্যে গোপনে সরকারের নানান তথ্য পাচারসহ অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করতে নানাভাবে তৎপরতা চালিয়ে আসছে। এদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পলাতক অনেক মন্ত্রী ও এমপির সঙ্গে যোগাযোগও রয়েছে।

এসব কারণে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে দাবি-দাওয়ার ৯০ ভাগ পূরণ হওয়া সত্ত্বেও তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উসকানি দিয়ে বহু জুনিয়র কর্মকর্তাকে আন্দোলনে যুক্ত হতে বাধ্য করেছে। যাদের চাকরিও এখন ঝুঁকির মধ্যে। 

সূত্র বলছে, এ আন্দোলনে মাস্টার মাইন্ড হিসেবে কাজ করেছেন অন্তত ১৫ জন কর্মকর্তা। যারা জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম গ্রুপের বাইরে একটা সুপিরিয়র মিনি গ্রুপ নামে হোয়াটসআপ গ্রুপও পরিচালনা করেন। এছাড়া প্রমোটি কিছু কর্মকর্তাও এ ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন। এক দল তরুণ গোয়েন্দা কর্মকর্তার ব্যাপক অনুসন্ধান ও পরিশ্রমের ফলে এ চক্রের বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে এসেছে। পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে আন্দোলনে কয়েকশ’ কর্মকর্তা যুক্ত থাকলেও মূলহোতাদের মধ্যে অন্তত ৬০ জনের নাম পরিচয় জানা গেছে। এছাড়া কারা লোকজন যোগাড় এবং খাবার সরবরাহ করেছেন তাদের বিষয়েও চমকপদ তথ্য আসছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন ৮ জুলাই যুগান্তরের প্রিন্ট ও অনলাইন ভার্সনে। 


এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ সৃষ্টি করে গত ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। উদ্দেশ্য ছিল- এ দুটি বিভাগের মাধ্যমে করহার নির্ধারণের মতো নীতিগত কাজ এবং কর আদায়ের কাজ পৃথক রাখা। এর ফলে অনিয়ম, দুর্নীতি ও জনহয়রানি কমবে। সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে। দেশের অর্থনীতিবিদ, গবেষক, ব্যবসায়ীরাও দীর্ঘদিন থেকে রাজস্ব খাত সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের একটি শর্তও ছিল- রাজস্ব নীতি ও আদায়ের কাজকে আলাদা করে পৃথক বিভাগ সৃষ্টি করা। 

প্রথম আন্দোলনের ঘোষণা আসে গত ২৯ এপ্রিল। ওইদিন সন্ধ্যায় এনবিআর ভবনে কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের বেশ কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা সভাকক্ষে উপস্থিত হয়ে অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে ক্ষোভ অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এছাড়া পরদিন বুধবার এনবিআরে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এভাবে আন্দোলন চলতে থাকে। 

২৫ মে পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতির কর্মসূচি পালন করেন এনবিআরের অধীন কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা। এর আগে ২৫ মে রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, এনবিআর বিলুপ্ত নয়, বরং এ প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীন ও বিশেষায়িত বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে। এরফলে ২৬ মে কলম বিরতির কর্মসূচি প্রত্যাহার করে আন্দোলনরত ঐক্য পরিষদ। কিন্তু হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ ও চেয়ারমানকে অসহযোগিতা করার ঘোষণা দেয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।

এছাড়া ২৩ জুন থেকে শুরু হয় সকাল ৯টা-দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি কর্মসূচি। এরমধ্যে রহস্যজনককারণে আন্দোলনকারীরা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবির চেয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানের অপসারণ দাবিকে জোরালভাবে সামনে নিয়ে আসে। এ অবস্থায় আন্দোলন সংশ্লিষ্ট ৫ কর্মকর্তাকে ঢাকার বাইরে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়। কিন্তু সে বদলি আদেশকে কোনো পাত্তা না দিয়ে উলটো ২৪ জুন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে বদলি সংক্রান্ত দুটি আদেশ গণমাধ্যমের সামনে ছিঁড়ে ফেলে। মূলত এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে তারা সরকারের প্রতি এক রকম চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন, যা সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণার পর্যায়ে পড়ে।   

এদিকে এনবিআর জুড়ে উত্তপ্ত পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ২৮ জুন ‘শার্টডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি পালন করা হয়। পরদিন ২৯ জুন রোববারও এ কর্মর্সূচি অব্যাহত ছিল। এরপর বাধ্য হয়ে সরকার হার্ডলাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, সংস্কারের বিরোধিতা ছাড়াও অর্থ বছরের শেষ ২ মাসে আন্দোলনকারীরা রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। 

এ তথাকথিত আন্দোলন পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক, যা জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক অধিকারের চরম পরিপন্থি। এ অবস্থায় সরকার এনবিআরের আওতাধীন সব কাস্টমস হাউস, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট এবং শুল্ক স্টেশনসমূহের সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস হিসাবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার আশা করছে, অনতিবিলম্বে সবাই কর্মস্থলে ফিরে যাবে। অন্যথায় সরকার কঠোর হতে বাধ্য হবে। 

টানা ৬১ দিনের আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যে এপ্রিল মাসে ১ দিন ছিল ৩০ এপ্রিল, মে মাসের ৩১ দিন এবং জুন মাসের ২৯ দিন। এনবিআরের মধ্যে যেসব কর্মকর্তারা কথিত এ আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছিলেন তারা সরকার পতনের এ চক্রান্তকে ‘কাশিমবাজার কুঠি’ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

আ. দৈ./কাশেম
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

সরকার পতনের টার্গেট নিয়েই এনবিআরের ৬১ দিনের আন্দোলন হয়েছে
২০১৩ সালে শাহবাগে বড় রাজনৈতিক মব হয়েছে
জামায়াত যেনতেন নির্বাচন চায় না: আবদুল্লাহ তাহের
শেখ হাসিনা.রেহানা ও জয়সহসহ ১০০ জনকে আদালতে হাজির হতে গেজেট প্রকাশ
ইসলামিক এনজিওগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

ইবিতে স্মার্ট আইডি কার্ড প্রদান
পিএসটিসি-র ৪৭ বছর পূর্তি উদযাপন
কুমিল্লায় বাড়ি ঘেরাও করে ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা
বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে নুপুরের ভাঙচুর চেষ্টা, ভাইরাল ভিডিও
সাবধান! ঢাকা.বরিশাল ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গু ভয়াবহতা বাড়ছে
বিশেষ সংবাদ- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik$gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝