রাজধানীর পুরনো বিমান বন্দর এলাকায় নভোথিয়েটারের সামনে বিজয় সরণিতে গত বছর ৫ অগাস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার গনআন্দোলনে সফল অভ্যুত্থান হয়। ওইদিনই সংক্ষোব্ধ জনতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ‘মৃত্যুঞ্জয়’ ভেঙ্গে ফেলা হয়। কিন্তু এর আশপাশের স্থাপনা এতোদিন ছিল। অবশেষে ওইসব স্থাপনাও ভেঙে ফেলা হয়েছে।এবার ওই জায়গায় নির্মাণ করা হবে নতুন বাংলাদেশের জুলাই শহীদদের স্মরণে ‘গণমিনার’। আসছে জুলাইয়ে নতুন ভাস্কর্য তৈরির কাজ শুরু হবে। সেজন্য প্রাথমিক প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
এদিকে গত ২৭ জুন ( শুক্রবার) সকাল থেকেই বিজয় সরণির ওই ভাস্কর্য ঘিরে বানানো ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ এর সাতটি দেয়াল ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়, তা চলে দিনভর। জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ৫ অগাস্ট ওই প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হয়। ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ গণমাধ্যমকে বলেন, ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলায় সেটি ‘অগোছালো’ অবস্থায় ছিল। এ কারণে ওই স্থানটি ‘পরিষ্কার’ করা হয়েছে। “মূল ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেদিনের আক্রমণের কারণে বাকি যেগুলো ছিল সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এটা এভাবে ফেলে রেখে কোনো লাভ নাই। সেখানে নতুন কিছু যদি করা যায়। সেজন্য আমরা আগে সেখানে জায়গাটা পরিষ্কার করছি।”
প্রশাসক বলেন, ভাস্কর্যের জায়গায় বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস, জুলাইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে নতুন আরেকটা ভাস্কর্য করার পরিকল্পনা আছে। “জুলাই, বিজয়, বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস সবগুলোকে মিলিয়েই কিছু একটা হবে। এখানে যেমন স্কাল্পচার ছিল সেমনই আরেকটা স্কাল্পচার হবে। আমরা এই জুলাই মাসের মধ্যেই কাজটা করব। কারণ পরিষ্কার করে ফেলে রাখলে লোকজন আবার বলবে, ফেলে রেখে দিয়েছে। মানুষজন রাস্তা দিয়ে আসে যায়, তাদেরও প্রশ্ন এখানে কী হবে তাহলে।”
উল্লেখ্য, ২০২১ ও ২০২২ সালে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে ‘মৃত্যুঞ্জয়’ নামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য প্রদর্শিত হয়। পরে ওই ভাস্কর্য স্থাপন করা হয় ঢাকার বিজয় সরণিতে, ভাস্কর্য ঘিরে গড়ে তোলা হয় ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নির্মিত ওই চত্বরের সাতটি দেয়ালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে অন্যান্য আন্দোলন ও বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান চিত্রিত করা হয়। ২০২৩ সালের ১০ নভেম্বর ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধুর মেয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। সেদিন ঢাকার আরও অনেক ভাস্কর্যের মত বিজয় সরণির মৃত্যুঞ্জয়ও ভেঙে ফেলা হয়।
এদিকে জুলাই অভ্যুত্থানে আত্মত্যাগের স্মৃতিকে ধরে রাখতে সম্প্রতি বিজয় সরণিতে ‘গণমিনার’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। গত ২০ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে মাধ্যমে ‘গণমিনার বাস্তবায়ন কমিটি’ জানায়, এই উদ্যোগে গণমানুষের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে গণচাঁদা সংগ্রহের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জন, আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের স্মরণেই নির্মিত হবে গণমিনার।” আগামী ৫ অগাস্টের মধ্যে এই মিনারের একটি প্রাথমিক দৃশ্যমান রূপ দিতে চায় কমিটি। পুরো বিজয় সরণি ধরেই তাদের এই পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।
আ. দৈ./কাশেম