‘তোমার আঁচলে যে শান্তির ঘ্রাণ, তা পৃথিবীর কোনো সুগন্ধিত ফুলেও নেই। তুমি যে ভালোবাসায় প্রতিদিন আমাদের জড়িয়ে রাখো, তার কোনো প্রতিদান হয় না তবু একদিন আমরা চেষ্টা করি সেটুকু প্রকাশের, কৃতজ্ঞতা জানানোর।’
আজ বিশ্ব মা দিবস। প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বিশ্ব মা দিবস উদযাপিত হয়, যা মাকে ঘিরে আমাদের সমস্ত ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার এক সার্থক উপলক্ষ হয়ে ওঠে।
একটি শব্দ তবু কত গভীর তার মর্ম। ‘মা’ কথাটির মাঝে লুকিয়ে আছে এক অনন্ত ভালোবাসা, নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ আর অপরিসীম ধৈর্যের প্রতীক। যিনি নিজের হাসি বিসর্জন দিয়ে সন্তানকে হাসাতে জানেন, নিজের স্বপ্নগুলো গুটিয়ে রেখে সন্তানের পথ সহজ করেন, তিনিই মা। মা মানেই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা যেখানে নিজের জন্য কিছু রাখার প্রয়োজন হয় না। মা মানেই এমন একজন, যিনি দিনের পর দিন নিঃশব্দে আমাদের জন্য লড়ে যান। সন্তানের হাসির পেছনে যাঁর চোখের জল লুকানো থাকে, সেই মানুষটিই মা। তাঁর আঁচলের নিচে যেমন আছে নিরাপত্তা, তেমনি আছে পৃথিবীর সবচেয়ে নিখাদ ভালোবাসা।
মা দিবসের সূচনা: মা দিবসের আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটে যুক্তরাষ্ট্রে, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে। ১৯০৮ সালে অ্যানা জার্ভিস নামক এক তরুণী তার প্রয়াত মায়ের স্মৃতিতে এ দিনটি পালন শুরু করেন। দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ, ১৯১৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন এই দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এরপর ধীরে ধীরে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে মা দিবসের আবেদন।
হৃদয়ের প্রতি স্পর্শে মা: মা শুধু একজন মানুষ নন, তিনি এক অনুভব। জীবনের প্রতিটি ধাপে, প্রতিটি সংকটে, প্রতিটি সাফল্যে যিনি নীরবে, নিঃশব্দে পাশে থাকেন, তিনিই তো মা। সন্তান যখন মুখে কিছু বলার আগেই মা বুঝে যান তার প্রয়োজন সেই উপলব্ধি কোনো বিজ্ঞানের পরিধিতে পড়ে না।
আজকের প্রযুক্তিমুখর, দ্রুতগামী জীবনে আমরা হয়তো মাকে সময় দিতে ভুলে যাই। অথচ তার জীবনটাই কেটেছে আমাদের সময় দেওয়ার মধ্য দিয়ে। মা দিবস তাই কেবল একটি দিন নয় এটি আমাদের আত্মস্মরণ, আমাদের দায়িত্ব, আমাদের ভালোবাসার প্রকাশ।
মা মানেই আত্মত্যাগ। সকাল-সন্ধ্যা পরিবারের জন্য যিনি নিজেকে বিলিয়ে দেন, তাঁর প্রশংসা আমরা অনেক সময় মুখে বলি না। মা দিবস সেই অব্যক্ত ভালোবাসাকে শব্দে রূপ দেওয়ার উপলক্ষ।
এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় জীবনের ব্যস্ততার মাঝেও মাকে বলা উচিত:“তুমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ।”
কৃতজ্ঞতার এক ক্ষণিক মুহূর্ত: এই দিনে অনেকেই মাকে উপহার দেন, ছোট্ট এক চিঠি লেখেন, হয়তো একসঙ্গে কিছুটা সময় কাটান। কিন্তু এসব কিছুর চেয়েও মূল্যবান একটি জিনিস আছে সন্তানের অনুভব ও উপস্থিতি।
এক কাপ চায়ের পাশে বসে মায়ের হাত ধরা, তার চোখে চোখ রেখে বলা “তুমি ছাড়া আমি কিছুই নই” এই কথাটিই তো মায়ের জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার।প্রতিদিন হোক মা দিবস: বিশ্ব মা দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় মাকে ভালোবাসার জন্য আলাদা দিনের প্রয়োজন নেই। প্রতিটি সকাল, প্রতিটি সন্ধ্যায় তিনি আছেন আমাদের পাশে, নিঃশব্দে, অদেখা আশীর্বাদের মতো। মা দিবস কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়। এটি আমাদের চেতনায় থাকা উচিত প্রতিদিন, প্রতি মুহূতে।
মা কখনো ক্লান্ত হন না, অভিযোগ করেন না। তাঁর ভালোবাসা ছায়ার মতো শীতল, নরম আর নিরাপদ। আজ এই মা দিবসে, আমরা যেন তাকে শুধু ভালোবাসা নয় সম্মানও দিই। কারণ, “যেখানে মা আছেন, সেখানেই পৃথিবী সবচেয়ে সুন্দর।”
মা দিবস কেবল একটি দিন নয়, এটি ভালোবাসার এক মৌন উৎসব। প্রতিটি সন্তানের মনে থাকা উচিত মায়ের কোনো বিকল্প নেই। তিনি আছেন বলেই আমরা আছি। তাঁর কোলেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নিরাপত্তা।