সদ্য কারামুক্ত জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, ‘দেশকে নিজেরাই পরিশোধন করার সুযোগ পাচ্ছি আমরা। আধিপত্য শক্তির হাত থেকে বাংলাদেশ আজ মুক্ত। এই বাংলাদেশকে আমাদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ষড়যন্ত্র হবে। ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুরের তারাগঞ্জে উপজেলার তারাগঞ্জ ও/এ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে শুকরানা সমাবেশে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তারাগঞ্জ উপজেলা শাখার আয়োজনে এ সমাবেশ করা হয়। এতে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘যখন এই মামলা চলে মীর কাসেম আলী সাহেব আমেরিকায় ছিলেন। ওনার অনেক বন্ধুবান্ধব তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, আপনি এই অবস্থায় বাংলাদেশে যাবেন না। আপনাকে গ্রেপ্তার করে, ফাঁসির নাটক সাজাবে। উনি বলেছিলেন হায়াত-মউতের মালিক আল্লাহ। আমি কোনো অপরাধ করি নাই। আমি কেন আমার দেশে যাব না। মৃত্যু হলে আমার দেশেই হবে। তিনি এসেছেন, তাঁর নামে মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে, ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তিনি পালিয়ে যান নাই।’
শহীদ আবু সাঈদকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘যার কারণে বাংলাদেশে বিপ্লব ত্বরান্বিত হয়েছে। সে আমাদেরই রংপুরের সন্তান। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ। গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছে। এ রকম ইতিহাস কোথাও দেখেছেন। কেন? তার নিজের মুক্তির জন্য, না। তার দেশের মুক্তির জন্য, জনগণের মুক্তির জন্য, দেশকে স্বাধীন করার জন্য তার জীবনটাই আজকে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করতে বাধ্য করেছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার প্রতিদান পরকালে তাকে দান করবেন। এ রকমই লোক তৈরি হওয়া দরকার স্বাধীন বাংলাদেশ। শকুনেরা এখনো হাত পেতে আছে দেশটাকে দখল করার জন্য। তারা বিভিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে হবে।’
১৪ বছর পর এসে শুকরিয়া আদায় করে আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘যারা আজকে আমাদের বিরুদ্ধে অনেক কল্পকথা-কাহিনি বানিয়েছেন। তারা আজকে চুরমার হয়ে গেছেন। এর আগে যাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায় বের হলে আমরা দেখতে পাব, তাদের অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা যেখানে যেভাবে জড়িত, আমি আপনাদের মাধ্যমে সরকারকে জানাতে চাই। তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির বিধান করা হোক। না হলে বাংলাদেশে আইনের শাসন থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে অপরাধে আমাকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে। সেই অপরাধে আমি সামান্যতম জড়িত ছিলাম না। অন্যায়ভাবে করা হয়েছে। আমি শুধু আফসোস করি, আমাদের বিরুদ্ধে যাঁরা অভিযোগ গঠন করেছেন, তাঁরা করতেই পারেন। কিন্তু বিচারপতি যাঁরা হবেন, তাঁদের তো বিবেক থাকা দরকার। তিন কিলোমিটার দূর থেকে আমাকে নাকি দেখেছে। তিন কিলোমিটার মাঝখানে নাকি অনেক বাড়িঘর ছিল। তিন কিলোমিটার দূর থেকে চোখ দিয়ে দেখা কি সম্ভব। যাঁরা সাক্ষী দিয়েছেন, তাঁরা মিথ্যে সাক্ষী দিতে পারেন। কিন্তু বিচারপতির বিবেক গেল কোথায়। কারণ, তাঁরা বিবেক বিক্রি করেছিলেন আরেক জায়গায়। বিবেকহীন বিচারপতি যত দিন বাংলাদেশে থাকবে, তত দিন বাংলাদেশের লোকেরা সুবিচার পাবে না। আল্লাহর রহমত ৫ আগস্টের বিপ্লবের পর আমরা সুবাতাস দেখতে পাচ্ছি।’