সন্ত্রাসীদের নির্মম আঘাতে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মাঝেই বাড়ির উঠানে টাঙানো হয়েছে ত্রিপলে আছেন পাড়া-প্রতিবেশীরা। নিহতের বৃদ্ধ বাবা-মার বুকফাটা কান্না।
তারা অজোরে কেঁদে কেঁদে বলছেন, ‘আমার ছেলেডারে কেন এভাবে মারল, কী অপরাধ আছিন আমার ছেলের?’ ওই আর্তনাদ গাজীপুরে হত্যাকাণ্ডের শিকার সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের বাবা হাসান জামালের। নিহত তুহিনের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামে। শুক্রবার (৮ আগস্ট) তাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল এই দৃশ্য।
আজ শুক্রবার (৮ আগস্ট) গ্রামের বাড়িতে নিহত ছেলে তুহিনের শোকে কাতর হাসান জামাল বলেন, ‘গত পরশু আমার ছেলে আমার ওষুধ কিনতে এক হাজার টাকা পাঠিয়েছে। এখন কে আমার জন্য ওষুধের টাকা পাঠাবে। কেন ছেলেটাকে তারা মেরে ফেলল?’ আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, ‘কী অপরাধ করেছিল আমার ছেলে? কী অন্যায় করেছিল সে? কেন এমন হলো? আমি কারো ক্ষতি চাই না, তোমরা আমার ছেলেকে এনে দাও।’
তুহিনের গ্রামের বাড়ি ভাটিপাড়ায় দেখা যায়, বাড়ির সামনে দাফনের জন্য বাঁশ কাটছিলেন কয়েকজন। বাড়ির কাছেই কবর খোঁড়া হয়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। কবরে যেন বৃষ্টির পানি না জমে, সে জন্য ত্রিপল টানানো হয়েছে। বাড়িতে স্বজনেরা আহাজারি করছেন। বৃদ্ধ বাবা-মা সন্তানের শোকে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন।
তুহিনের মা সাহাবিয়া খাতুন বকুল বলেন, গত পরশু আমার ছেলে মোবাইলে কল করে আমার দুই নাতির সঙ্গে কথা বলিয়ে দিয়েছে। এরপর আর কোনো কথা হয়নি। আমার বাবারে কারা মারল, কী দোষ তার?
স্থানীয়রা জানান, হাসান জামাল ও সাহাবিয়া খাতুন দম্পতির সন্তান তুহিন। ৭ ভাইবোনের মধ্যে তুহিন সবার ছোট। তুহিন স্থানীয় আল-হেরা একাডেমি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০০২ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের এম সাইফুর রহমান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় বসবাস শুরু করেন। সেখানে তার বড় ভাই জসিম উদ্দিন গাজীপুর চৌরাস্তায় ব্যবসা করতেন।
২০০৯ সালে বড় ভাই জসিম ক্যন্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর তুহিন ও তার আরেক ভাই সেলিম একসঙ্গে গাজীপুরেই বসবাস শুরু করেন। সেলিম পরিবহন শ্রমিকের কাজ করেন। তাদের আরেক ভাই জাহাঙ্গীর আলম কক্সবাজারের টেকনাফে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন এবং এক ভাই শাজাহান মিয়া সিলেটে থাকেন। দুই বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় বতর্মানে গ্রামের বাড়িতে কেবল বৃদ্ধ বাবা-মা বসবাস করেন। তারা বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত। ছেলেরাই তাদের দেখভাল করে আসছিলেন।
অন্যদিকে গাজীপুরে তুহিনের স্ত্রী মুক্তা বেগম ও দুই ছেলেসন্তানও থাকতেন একইসঙ্গে। পাশাপাশি প্রতিদিনের কাগজ নামের একটি পত্রিকায় সাড়ে তিন বছর ধরে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পত্রিকাটির সম্পাদক খায়রুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, পরিকল্পিতভাবে আমাদের সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। একজনকে আক্রমণের ভিডিও ধারণ করায় তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো। এ ঘটনার ন্যায়বিচার চাই। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে গাজীপুর নগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে। পরে হত্যার সেই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। অভিযোগ ওঠে, রাজনৈতিক দলের চাঁদাবাজরা তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
তবে প্রাথমিক তদন্তের পর শুক্রবার সকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ উত্তর) মো. রবিউল ইসলাম জানান চাঁদাবাজি নয়, বাদশা নামে এক যুবকের ওপর হামলার ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় তুহিনকে হত্যা করা হয়েছে।
আ. দৈ./কাশেম