বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও এলাকায় অনেক বড় বড় নামীদামি বিনোদনমূলক স্পট রয়েছে। কিন্ত টাঙ্গুয়ার হাওর তার মধ্যে অন্যতম। যারফলে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে নানা বয়সী লোকজন ছুটে আসেন টাঙ্গুয়ার হাওরে । এই এলাকাটি বর্তমানে পর্যটন কেন্দ্রিক ও জনপ্রিয় হবার পাশাপাশি রমরমা ব্যবসা বণিজ্যের সুযোগও বাড়ছে। একই সাথে বাড়ছে বয়াবহ প্রতারনা এবং আগত লোকজনের পকেট থেকে নানা কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও।
সুনামগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলায় টাঙ্গুয়ার হাওরের অবস্থান। এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৬৫৫ হেক্টর। হাওরে ছোট–বড় ১০৯টি বিল আছে। হাওরের ভেতরে অসংখ্য খাল ও নালা রয়েছে। বর্ষায় সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। হাওরের উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড়। এই পাহাড় থেকে ৩৮টি ঝরনা নেমে এসে মিশেছে টাঙ্গুয়ার হাওরে।
ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন প্রতারকপক্রের খপ্পর থেকে আগত লোকজনকে সতর্ক থাকার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে্ । টাঙ্গুয়ার হাওরে হাউসবোটে ‘হয়রানি’, পর্যটকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রশাসন থেকে সতর্ক করা হয়েছে, পর্যটকদের যেসব সেবা ও সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়, সেগুলো না থাকাসহ পর্যটকদের হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পর্যটকদের সতর্ক থাকার বার্তা দিয়েছে প্রশাসক।
আজ মঙ্গলবার (১০ জুন) জেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজে এ–সংক্রান্ত একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, পর্যটকবাহী হাউসবোটে সেবা গ্রহণে বিভিন্ন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। হাউসবোটগুলো বিভিন্ন পর্যটন স্পটের বুকিং গ্রহণ করে; কিন্তু যাত্রীদের প্রতিশ্রুত সেবা দেয় না এবং যান্ত্রিক ত্রুটির নাম করে নির্ধারিত পর্যটন স্পটে নিয়ে যায় না। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে চুক্তি লঙ্ঘন করছেন মর্মে প্রতারণার তথ্যও রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লাস ট্রাভেল পরিচালিত ‘হাওরডিঙ্গি’ হাউসবোট পর্যটকদের বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুত সেবা দেয়নি বলে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, হাওরডিঙ্গি সময়মতো যাত্রা শুরু এবং নির্ধারিত আনুষঙ্গিক সেবা যেমন বিদ্যুৎ, আবাসন, স্যানিটেশন সেবা দেয়নি। এমনকি যান্ত্রিক ত্রুটির নামে যাত্রীদের নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রেখেই হাউসবোট কর্তৃপক্ষ অন্যত্র চলে যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে হাওরডিঙ্গি হাউসবোটসহ অন্যান্য হাউসবোটে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য পর্যটকদের অনুরোধ করা জানানো হয়। এ ছাড়া হাউসবোটে কোনো অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে বা প্রতারণার শিকার হলে দ্রুত জেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য উল্লাস ট্রাভেলের ফেসবুক পেজে দেওয়া মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে কেউ ফোন রিসিভ করেনি।
এদিকে আজ মঙ্গলবার টাঙ্গুয়ার হাওরে উচ্চ স্বরে গান বাজানোর দায়ে উপজেলা প্রশাসন একটি পর্যটকবাহী নৌযানকে জরিমানা করেছে। এ প্রসঙ্গে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল হাসেম বলেন, ‘হাউসবোটগুলোকে অবশ্যই নীতিমালা মেনে চলতে হবে। পর্যটকদের প্রতিশ্রুত সেবা ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে হবে। কোনোভাবেই হাওরের প্রকৃতি–পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ করা যাবে না। কোনো অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নেব।’
হাওর, পাহাড়, নদী ও লেকের অপার সৌন্দর্য একসঙ্গে ধরা দেয় সুনামগঞ্জে। হাওর পর্যটনে গত পাঁচ বছরে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে হাউসবোট। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ টাঙ্গুয়ার হাওরে নিবন্ধিত প্রায় ১০০ হাউসবোট আছে। এর বাইরে নানা জায়গা থেকে ছোট-বড় প্রায় ১০০ নৌকা ও বোট আসে টাঙ্গুয়ার হাওরে। পর্যটকেরা এসব বোটে সারা দিন হাওরে ঘুরে বেড়ান, পরে বোটেই রাত কাটান হাওরের টেকেরঘাট এলাকায়। আবার অনেক বোট সারা দিন ঘুরে পর্যটকদের নিয়ে হাওর থেকে ফিরে আসে।
আ. দৈ. /কাশেম