‘গরু তো আমরা বিক্রি করবো কিন্তু লাভ লস ও দাম পাওয়াটা পুরাই লটারির মতো। ভাগ্য ভালো হলে ভালো দাম পাবো আর ভাগ্য খারাপ হলে দাম খারাপ পাবো।’ কথাগুলো বলছিলেন নওগাঁর নিয়ামতপুরের গরু ব্যাপারী নুরুল ইসলাম।
শনিবার (৩১ মে) সন্ধ্যার পর বসিলা ৪০ ফিট পশুর হাটের পশ্চিম পাশে নদীর তীর ঘেঁষা শান বাঁধানো পাড়ে কথা হচ্ছিলো তার সঙ্গে। তিনি বসিলা হাটে ১০টি গরু নিয়ে এসেছেন। প্রতি বছর তিনি এ হাটে আসেন। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। তার আরও ৩০ থেকে ৪০ জন ব্যাপারী গরু নিয়ে এসেছেন। তারা প্রতি বছর দল বেধেই আছেন।
এসময় তার কাছে প্রশ্ন ছিল কেন জেলা শহর থেকে এত দূরে গরু নিয়ে আসেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যদি জেলা শহর থেকে গরু নিয়ে না আসি তাহলে ঢাকাবাসীকে ডাবল দামে গরু কিনে কোরবানি করতে হবে। কারণ এখানে যারা গরুর ফার্ম আর যাই বলেন না কেন সেগুলোতে গরু পালতে সব কিছু কিনে খাওয়ায় তারা। ফলে তাদের ব্যয় হয় বেশি। কিন্তু আমরা যারা গ্রাম থেকে আসি তাদের তেমন কোন খরচ নাই বললেই চলে। আমরা খড়টা খাওয়াই বাড়ির, খাস মাঠের, পানি খালবিল ও পুকুর বা নলকূপের। মাঝে আমাদের খইল বা ভুসিটা কিনতে হয়। সঙ্গে আছে পরিশ্রম। এই হলো আমাদের ব্যয়।
নুরুল ব্যাপারী বলেন, আগে ২০ থেকে ২৫ বছর আগে ঢাকায় গরু নিয়ে এসে বিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন ফার্ম বা খামারে পালন করা হয় বলে গরু ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে। এতে তারাও এখন সেগুলো হাটে বিক্রি করার জন্য পালে। পরে হাটে আনলে আমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা হয়। এতে গ্রাহকরা লাভবান হন। আমরা এখন ধরেন দুই টাকা লাভ করি কিন্তু গ্রাম থেকে গরুগুলো না আসলে তারা ১০ টাকা লাভ করতো। এতে গরুর সংকটও তৈরি হতো এবং দাম বাড়তো।
তিনি জানান, এবার তারই গ্রাম থেকে অন্তত ১৪ ব্যাপারী এবং আশপাশের গ্রামগুলো মিলে প্রায় ৪০ ট্রাক গত দুই দিনে এই হাটে এসেছে। প্রতি ট্রাকে অন্তত ৮ থেকে ১০ জন ব্যাপারীর গরু থাকে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, এ হাটে শুধুমাত্র নওগাঁর উপজেলা নিয়ামতপুরের একটি গ্রাম থেকেই অন্তত ১০০ থেকে ১৫০ ব্যাপারী এসেছেন।
নুরুল ইসলামের সঙ্গে এসেছেন তারই গ্রামের স্কুল শিক্ষক সরোয়ার আলম। তিনি তার গ্রামের একটি স্কুলে সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষক। কিন্তু শখের বশে গরু পালন করেন। প্রতি বছর গরুর উসিলায় ঢাকায় ঘুরে যান। বিষয়টিতে তিনি মজা পান বলে তার অভিমত।
তিনি বলছিলেন, আমি শুধু নই এমন অনেক লোক আছেন যারা ব্যাপারী নয় কিন্তু শখের বশে গরু পালন করেন এবং এ হাটে আসেন। গরুতে লাভ করতে হবে বিষয়টি এমনও নয়, আবার লস হবে সেটাও নয়। আসলে লাভ-লস ভাগ্যের ওপর। এই তো কয়েক বছর আগে ব্যাপারীরা এ হাট থেকে গরু বিক্রি না করেই চলে গেছে। এমন ঘটনা তবে প্রতি বছর হয় না।
জেলা থেকে ট্রাক ভাড়া যাবতীয় খরচ করে কেমন লাভ করে প্রতি গরুতে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ঢাকায় গরু নিয়ে আসলে জেলার হাটগুলো থেকে অন্তত ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেশি পাওয়া যায়। তবে এটাও হাট ভেদে। উত্তরার হাটে এক রকম লাভ হয় আবার লালবাগ বা গাবতলী হাটে আরেক রকম। এ হাটে একটা জিনিস ভালো সেটা হলো এখানে হাসিলের বাইরে বাড়তি কিছু দিতে হয় না কিন্তু গাবতলীতে খুঁটি প্রতি ৫ হাজার করে দিতে হয় এমন জুলুমের কথাও শুনেছি। ফলে সেই হাটে আমরা যাই না।
এসময় তাদের সঙ্গে আরও দুই ব্যাপারী ছিলেন। তারাও একই কথা জানালেন, গ্রাম থেকে তারা দুই পয়সা লাভের জন্যই গরু নিয়ে আসেন। তবে এবার ট্রাক প্রতি নওগাঁ সদর থেকে গরু আনতে খরচ হয়েছে ২৯ হাজার টাকা করে। যা গত বছর ছিল মাত্র ২৪ হাজার টাকা।
তারা জানালেন, এবার সীমান্ত বন্ধ। ফলে তারা দেশী গরুর দাম পাবেন এবং গ্রাহকও থাকবে বলে প্রত্যাশা তাদের।আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে নগরীর বিভিন্ন পশুর হাট। যদিও কিছু হাটে আগাম বিক্রি চলেছে। তবে এবার হাটগুলোতে পশুতে এখনো ভরে ওঠেনি। প্রথম দিন কেমন বিক্রি জমবে সেই শঙ্কায় রয়েছে ব্যাপারী থেকে শুরু করে ইজারাদারের মনেও।