ফেনী সদর উপজেলার বালুয়া চৌমুহনী ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার ৩৭ বছরের ঐতিহ্যবাহী কোরবানির গরু-ছাগলের হাট এবার আর তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। তিনগুণ বেশি দর দিয়ে হাটের ইজারা নিয়েছেন স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতা, যার ফলে স্থানীয় জনসাধারণ ও মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এই মাদ্রাসা ও এতিমখানার হেফজখানায় অসংখ্য এতিম ও দরিদ্র শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। প্রতিষ্ঠানটির খরচ নির্বাহ হয় মূলত স্থানীয়দের দান, সদকা এবং দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত কোরবানির হাটের আয় থেকে। মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা আবু তাহের জানান, “আমরা ৩৭ বছর ধরে নিয়মিতভাবে এই হাট পরিচালনা করে আসছি। এবছরও আমরা ১০,২০০ টাকা দিয়ে ইজারা নেওয়ার আবেদন করি। কিন্তু পরে দেখা গেল আবুল বাশার সবুজ নামের একজন ব্যক্তি তিনগুণ অর্থ, ৪১ হাজার টাকা দিয়ে হাটের ইজারা নিয়ে নেন।”
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, আবুল বাশার সবুজ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং তিনি ৮ নম্বর ধলিয়া ইউনিয়ন যুবদলের একজন সক্রিয় কর্মী। তার এই আচরণকে ‘সংবেদনশীল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং এতিম শিক্ষার্থীদের রুজির ওপর হস্তক্ষেপ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন এলাকাবাসী।
হাটের ইজারা ইস্যুতে এলাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ, চলছে হাট বর্জনের ডাক। অনেকেই বলছেন, “স্বৈরাচার আমলেও এতিমদের হক কেউ নেননি, কিন্তু এখন সেটাই হচ্ছে!”মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে বিষয়টি স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জসিমকে জানিয়েছে। তিনি বলেন, “আমি চেষ্টা করছি বিষয়টি সমাধানের জন্য। এ ধরনের একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি সমাজের দায়িত্ব রয়েছে।”
অভিযুক্ত আবুল বাশার সবুজকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “যা ইচ্ছা লিখেন, আমি সামনে ছাড়া কিছু বলব না। আপনি বাজারে এসে দেখা করেন।”এ বিষয়ে বালুয়া চৌমুহনী বাজার কমিটির সেক্রেটারি পল্লী ডাক্তার সবুজ জানান, আমরা বাজার কমিটির দায়িত্বের জায়গা থেকে যে প্রশাসন থেকে ইজারা নিয়ে আসবে তাদেরকে স্বাগত জানানো ছাড়া কোন উপায় নেই। ইজারা দেয়ার ইখতিয়ার একমাত্র প্রশাসনের হাতে।
এলাকাবাসী মনে করছে, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনীতিতে নৈতিকতার যে প্রত্যাশা ছিল, এ ঘটনায় তা চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অনেকে বলছে, “অথচ এতিমদের জন্য নির্ধারিত একটি আয়ের উৎসকে এভাবে দখল করা সমাজের মানবিক মূল্যবোধকেই অবমাননা করা।”
আ. দৈ. /কাশেম