গত ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক অনেকটা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে চলছে। দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ আগের চেয়ে কমেছে। ড. ইউনূস ক্ষমতা নেয়ার পর ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে প্রতিবেশি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সব সময় ভারতের সমঝোতা সাম্যের সঙ্গে বন্ধুত্বের বার্তা দিয়েছে।
এমনি জাতিসংঘ অধিবেশনের ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিপ বৈঠকের প্রস্তাব করা হয়। তাও অগ্রাহ্য করা হয়েছে। সম্পর্কে এই পর্যায়ে এসে অবশ্য দুদেশ সম্পর্ক পুন:প্রতিষ্ঠান ঐক্যমত পোষণ করেছেন। নিউইর্য়র্কে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পরারাষ্ট্র মন্ত্রী জয়শঙ্করের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ওপর একমত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে অন্তবর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে দুই নিকট প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এ তথ্য জানিয়েছে।
নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় অনুযায়ী সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে এস জয়শঙ্করের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্সে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তাঁরা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক্সে লিখেছেন, বিকেলে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে। তাঁদের আলোচনার মূল প্রতিপাদ্য ছিল দুই দেশের সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয়।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়। এর প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ার দুই নিকট প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন দেখা গেছে। সেই টানাপোড়েনের মধ্যে এই প্রথম দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রথম সরাসরি কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।
আওয়ামী লীঅগ সরকারের সঙ্গে ভারত সব সময় বিশেষ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। একটি বিশেষ দলের সঙ্গে সম্পর্কে কারণে পটপরিবর্তনের পর অনেকটা চাপের মধ্যে পড়েছে ভারতের কূটনীতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন কোন দলের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে ভারতের সব সময় উচিত দুই দেশের জনগনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলা। এতে সরকার পরিবর্তন হলেও সম্পর্কেও কোন প্রভাব পড়বে না। কিন্তু গত ১৫ বছরে ভারত সেই সম্পর্ক বজায় রাখেনি।
শেখ হাসিনা পালিয়ে এখন ভারতের আশ্রয়ে রয়েছে। ড. ইউনূস ক্ষমতা গ্রহণের পর এক সাক্ষাতের বলেন, দুদেশের মধ্যে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে শেখ হাসিনা যেন তার মুখ বন্ধ রাখে। এছাড়া ইউনূস সার্ক কার্যকর করা, ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং তিস্তা চুক্তি নিয়ে কথা বলায় ভারত বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি বলে সেদেশে গণমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ অধিবেশনের মোদিও সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার প্রস্তাব করলেও তারা সাড়া দেয়নি।
এদিকে সাড়া না দিলেও মঙ্গবার দু দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। যেখানে উভয় দেশ সম্পর্ক এগিয়ে এক সঙ্গে কাজ করার জন্য সম্মত হয়েছে। এর আগে ড. ইউনূসের ক্ষমতা নেয়ার পর ভারত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না দেখালেও জয়শঙ্কর এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সঙ্গে এক সঙ্গে কাজ করার ঘোষণা দেন। গত ৩০ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতকে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ স্বার্থে কাজ করতে হবে। সেখানে বর্তমানে যে সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, ভারত তার সঙ্গেই কাজ চালিয়ে যাবে। দিল্লিতে রাজীব সিক্রির লেখা ‘স্ট্র্যাটেজিক কনড্রামস ‘রিশেপিং ইন্ডিয়াস ফরেন পলিসি’ বই প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তখন এস জয়শঙ্কও আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় থেকেই আমাদের সম্পর্ক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে এবং এটি স্বাভাবিক, আমরা বর্তমান সরকারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব।’ তবে এ-ও স্বীকার করতে হবে, সেখানে রাজনৈতিক নানা পরিবর্তন হয়েছে। এসব পরিবর্তন অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে পারে। স্পষ্টতই এখানে আমাদের পারস্পরিক স্বার্থ দেখতে হবে।
এর আগে গত ১৭ আগস্ট অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ফোনালাপ হয়েছে। ওই সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেয়া পোস্টে নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের কাছ থেকে ফোন পেয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে। পোস্টে তিনি আরো লেখেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ এবং অগ্রগামী বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থনের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছি। তিনি আমাকে বাংলাদেশে হিন্দুসহ সব সংখ্যালঘুর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছেন।
আ. দৈ. /কাশেম