ডাকসু’র সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিবাদের পতন হয়নি। ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশে পুনরায় ফ্যাসিস্টদের কায়দায় দখল ও চাঁদাবাজি চলছে। তিনি বলেন, এই ফ্যাসিবাদ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত গণঅধিকার পরিষদের আন্দোলন চলবে। গণঅধিকার পরিষদের নেতা কর্মীরা ঘরে ফিরবে না। ফ্যাসিবাদ নির্মূলে আজ থেকে গণঅধিকার পরিষদের প্রতিরোধ শুরু হয়েছে। নুরুল হক নুর গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার রাজনৈতিক দলগুলোকে আওয়ামী লীগ প্রশ্নে অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জুলাইয়ের বীর-জনতাকে আরেকটু ধাক্কা দিয়ে ফ্যাসিবাদ নির্মূল করতে হবে।
আজ শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে পঞ্চগড়ে শেরে বাংলা মোড়ে এক গণসমাবেশে নুরুল হক নুর এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি মাহাফুজার রহমান। এতে কেন্দ্রীয় শ্রমিক অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর আসাদ, গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য হানিফ খান সজিব, গণঅধিকার পরিষদ রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ মুন্নাফ, গণসংহতি আন্দোলনের পঞ্চগড়ের আহ্বায়ক সাজেদার রহমান সাজু, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার বিপ্লব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বিসহ গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
ভিপি নুর বলেন, আমরা আর আওয়ামী জামানার ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাই না। সময় এসেছে, এবার যদি পরিবর্তন করতে না পারেন, পরে আফসোস করবেন। আমি বলবো না যে, আমার দলের লোককে ভোট দেন। যারা ভালো, তাদের আপনারা ভোট দিয়ে সংসদে পাঠাবেন। তিনি বলেন, গণঅধিকার পরিষদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে দুর্নীতি, লুটপাট ও দখলের অভিযোগ নেই। এজন্য তারুণ্যের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে এই তরুণদের বিশ্বাস করতে পারেন। সুযোগ দিয়ে দেখতে পারেন। সুযোগ পেলে আমরা দেশকে বদলে দিতে চাই, আমরা আমৃত্যু চেষ্টা চালিয়ে যাবো। ভিপি নুর বলেন, আমরা বুকের রক্ত দিয়ে দেশ থেকে চাঁদাবাজদের হটিয়েছি, দখলদারদের আমরা জীবন দিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছি। এখন কি দখল আর চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে? এখন চাঁদাবাজ দখলদার কারা? আমরা একটা পরিবর্তনের রাজনীতির কথা বলি।
ভিপি নুর রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের স্বভাব-চরিত্র যদি আওয়ামী লীগের মতো হয়, ভোট কিন্তু হয়নি, সামনে আছে। জনগণ ভোটের মাধ্যমে তার জবাব দেবে। তিনি ভারতের উদ্দেশে বলেন, তারা বাংলাদেশ দখলের কথা বলে। বাংলাদেশ দখল করা সহজ নয়। আপনাদের একদিক থেকে চীন গুঁতা দেয়, একদিক থেকে পাকিস্তান দেয়। চীন-পাকিস্তান সামলাতে আপনাদের জান শেষ। আপনারা বাংলাদেশের সঙ্গে লাগতে আইসেন না। তিনদিক থেকে গুঁতা শুরু হলে আপনারা টিকতে পাবেন না। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে আমরা চাই ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হবে।
এদিকে গত শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বসিলা বাসস্ট্যান্ডের পাশে গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত গণসমাবেশে ‘জুলাই-আগস্টের’ গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানান ভিপি নুর। তিনি আক্ষেপ কওে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের ৮ মাসেও গণহত্যার বিচার ও গণহত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত ও আধিপত্য কায়েমে ব্যস্ত হয়ে গেছে। যে কারণে আওয়ামী ফ্যাসিবাদীরা রাজপথে নেমে হুঙ্কার দিচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের পর দলগুলো নিজেদের সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। যে কারণে অভ্যুত্থানের ৮ মাস পার হলেও নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর যারা হামলা চালিয়েছে, গুলি চালিয়েছে তাদের বিচার করা সম্ভব হয়নি।
‘প্রশাসন আগের মতো দলবাজি শুরু করছে। ২/১টি দলের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তাদের কাজ চালাতে চাইছে। প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যারা দলবাজি করবে তাদের পরিণতি হারুন-বেনজীরদের মতো হবে।’
তিনি বলেন, সড়ক-পরিবহন, কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন এলাকায় এখনো চাঁদাবাজি-দখলবাজি চলছে। কিশোর গ্যাং, মাদক ব্যবসায়ীসহ অপরাধীদের রাজনৈতিক নেতারা শেল্টার দিচ্ছে, জনগণ এগুলো পছন্দ করছে না। এদের বিরুদ্ধে জনগণকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এ দেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম, অধিকার আদায়ে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ, কৃষক-শ্রমিক জীবন দেয় আর সুযোগ-সুবিধা ভোগ ভাঁওতাবাজ ও ভণ্ড নেতারা, ওপর তলার কিছু লোকেরা। তাই সাধারণ এখন নেতৃত্ব এগিয়ে আসতে হবে। স্বৈরতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের সংস্কার করে গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে।
নুরুল হক নুর বলেন, ফ্যাসিবাদ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত গণঅধিকার পরিষদ ঘরে ফিরবে না। ফ্যাসিবাদ নির্মূলে আজ থেকে গণঅধিকার পরিষদের প্রতিরোধ শুরু হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার রাজনৈতিক দলগুলোকে আওয়ামী লীগ প্রশ্নে অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানাই। জুলাইয়ের বীর-জনতাকে আরেকটু ধাক্কা দিয়ে ফ্যাসিবাদ নির্মূল করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে ফ্যাসিবাদকে চিরতরে উৎখাত করতে জুলাই আন্দোলনের সব অংশীজনকে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানাই।
আ. দৈ./ কাশেম