প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কর্মী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ (২২)। এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ছাত্র রাজনীতি। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সরাসরি অভিযোগ আনা হয়েছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। তবে এই অভিযোগকে ‘ঘৃণ্য মিথ্যাচার’ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে সংগঠনটি।
ছাত্রদলের দাবি, এই ঘটনায় প্রশাসন নিরপেক্ষ নয়। তারা অভিযোগ করে, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা থানায় গিয়ে মামলার আসামির তালিকায় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছে।”
অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধীরা বলছে, “ছাত্রদল বারবার দায় চাপিয়ে প্রকৃত তদন্তকে ভিন্নখাতে নিতে চাইছে। আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে একটিও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ এখনো প্রকাশ্যে আসেনি।”
রোববার (২০ এপ্রিল) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, “পারভেজ হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত। তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে। এই হামলার পেছনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জড়িত।”
তিনি আরও বলেন, “সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পাঁচজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রধান আসামি প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহরাজ ইসলাম এবং অন্যান্যরা হলেন—সোবহান নিয়াজ তুষার, হৃদয় মিয়াজী, আবু জর গিফারি ও মাহাদী হাসান। বনানী থানায় এ বিষয়ে মামলা হয়েছে।”
রাকিবুল ইসলাম অভিযোগ করেন, “ছাত্রদলকে কোণঠাসা করতে একটি চক্রান্তের অংশ হিসেবেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। সরকারের মদদপুষ্ট কিছু সংগঠন প্রশাসনকে ব্যবহার করে আমাদের কর্মীদের টার্গেট করছে। প্রশাসনের একাংশ এখনো আগের সরকারের ‘প্রেতাত্মা’ হিসেবে কাজ করছে।”
এদিকে ছাত্রদলের এ অভিযোগের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। নিজেদের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে সংগঠনটি লিখেছে, “একজন নিহত ছাত্রের লাশ ব্যবহার করে ছাত্রদল যে ধরনের মিথ্যাচার করছে, তা শুধু নিন্দনীয় নয়, রাজনৈতিক অসভ্যতার নিদর্শনও।”
তারা দাবি করে, “সিসিটিভি ফুটেজে যাদের দেখা গেছে, তাদের মধ্যে সোবহান নিয়াজ তুষার ও হৃদয় মিয়াজীর কোনো উপস্থিতি নেই। পুসাব (PUSAB) সহ অন্যান্য নিরপেক্ষ সংগঠন বা গণমাধ্যমেও তাদের নাম উঠে আসেনি। অথচ ছাত্রদল নেতারা বারবার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের নাম জড়িয়ে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছেন।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ছাত্রদল কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই-বাছাই না করেই আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে মব ট্রায়াল চালাচ্ছেন। এতে তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়ছে। প্রকৃত অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে আড়ালে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রশ্ন তোলে, “ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কেন নিজের দলের কর্মীর হত্যাকারীদের আড়াল করতে চাইছেন? এখানে কি অন্য কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছে না?”
অপরদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য যাচাই করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।