বাংলাদেশ কর্মাস ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন পদত্যাগ করেছেন। গত বুধবার (৩০ জুলাই) তিনি ব্যাক্তিগত কারণ দেখিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে ব্যাংক ত্যাগ করেন। গত ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে এমডি ও সিইও হিসেবে যোগ দিয়েছেন মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন। এর আগে তিনি ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের এমডি ও সিইও পদে কর্মরত ছিলেন।
কমার্স ব্যাংকের সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড ৫১% সরকারী মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক। গত ১৬ই জানুয়ারী ২০২৫ তারিখে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন যোগদান করেন। যোগদানের সময় তিনি ব্যাংকের ডিপোজিট বৃদ্ধি, ঋণ ও অগ্রীম বাড়ানো, শ্রেণীকরণকৃত ঋণের পরিমান কমানো ও শ্রেণীকরণ ঋণ আদায়ের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন।
গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড এর ৪১২তম বোর্ড সভা ব্যাংকের বোর্ড রুমে অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যগন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন কে তার প্রতিশ্রুত টার্গেটের বিপরীতে অর্জনের ব্যাপারে ব্যর্থতার কারন জানতে চাইলে তিনি কোন কার্যকর কারন উল্লেখ করতে পারেননি। উল্লেখ্য যে তার যোগদানের তারিখ থেকে ০৬ মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও ব্যাংকের ডিপোজিট, ঋণ ও অগ্রীম না বেড়ে কমে গেছে। পাশাপাশি শ্রেণীকৃত ঋণ বেড়ে গেছে, নগদ আদায় বাড়েনি এবং লোকসান বিপুল পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থ্যাৎ সকল সূচকে ঋনাত্বক হওয়ার কারণ পরিচালনা পর্ষদ জানতে চাইলে তিনি তার ব্যর্থতা স্বীকার করে নেন এবং পদত্যাগ করবেন বলে সভা থেকে বের হয়ে আসেন। গতকাল বুধবার (৩০ জুলাই তিনি ব্যাক্তিগত কারণ দেখিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে ব্যাংক ত্যাগ করেন।
বাংক সূত্রে জানায়, গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে ব্যাংকের এম.ডি পদত্যাগের বিষয়ে কতিপয় পত্রিকায় বিভ্রান্তিমূলক ও অসত্য তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে। এরূপ বিভ্রান্তিমূলক ও অসত্য তথ্য পরিবেশনে সর্তক থাকার জন্য সকলকে অনুরোধ করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক কর্তপক্ষ সকল সময় ব্যাংকের স্বার্থের বিষয়ে আপোষহীন।
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক এস আলম গ্রুপের দখলে ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ৩ সেপ্টেম্বর ব্যাংকটিকে এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ পুনর্গঠন করে দেয়। নতুন পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে আছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. আতাউল রহমান, মেঘনা ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মহসিন মিয়া, চার্টার্ড একাউন্টেট শেখ আশ্বফুজ্জামান। এছাড়া দুজন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তারা হলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব কামরুল হক মারুফ; যিনি বর্তমানে সরকারের প্রতিনিধি পরিচালক হিসেবে আছেন এবং জনতা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো গোলাম মরতুজা; যিনি জনতা ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে আছেন ।
কমার্স ব্যাংকের ৫১ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার সরকারি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলো। ২০১৬ সাল থেকে এ ব্যাংকের পুরো নিয়ন্ত্রণ বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের হাতে ছিল।
বাংলাদেশ কর্মাস ব্যাংকের সদ্য পদত্যাগ এমডি মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি। এখানে আমাকে কেউ চাপ প্রয়োগ করেনি পদত্যাগে।