ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোনের মেয়ে অত্যন্ত ধুরন্ধর ও কূটকৌশলী ব্রিটেনের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশানে ভয়াবহ জালিয়াতি এবং প্রতারণার মাধ্যমে ফ্ল্যাট উপহার নেয়ার সুনিদিষ্ট তথ্য উপাত্ত পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পাশাপাশি টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের মন্ত্রীর দাপট দেখিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ২০০০ সালে ‘ইস্টার্ন হাউজিং’ এর কাছ থেকে উপহার হিসেবে রাজধানীর গুলশান-২ এর ৭১ নম্বর রোডের একটি ভবনের একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা ভাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে দুদক।
এই জালিয়াতি ও দুর্নীতির ঘটনায় শিগগিরই অভিযুক্ত ব্রিটেনের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক টিউলিপ ও রাজউকের তৎকালীন দায়িত্ব প্রাপ্ত একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনিদিষ্ট ধারায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছে দুদক। এর বিনিময়ে ব্রিটেনের এমপি,বঙ্গবন্ধুর নাতনী টিউলিপের প্রভাবেই সকল নিয়ম নীতি লঙ্ঘণ করে রাজউকের প্রায় দুই বিঘা জমি দখল ও প্লট-ফ্ল্যাটের অনুমোদন করিয়ে নেয় দেশের শীর্ষস্থানীয় হাউজিং কোম্পানি ‘ইস্টার্ন হাউজিং’।
সম্প্রতি এসব জালিয়াতির সুনিদিষ্ট তথ্য উপাত্ত বেরিয়ে আসছে দুদকের অনুসন্ধানে। ঢাকায় ব্রিটেনের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে এসব জালিয়াতি ও দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর গুলশানে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডকে সরকারি জায়গা হস্তান্তরের বিনিময়ে ফ্ল্যাট উপহার নিয়েছেন ব্রিটেনের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। আর এই বিষয়টি সত্যিই অবাাক করেছে।
অভিযোগে প্রকাশ, ইতোমধ্যে এই জালিয়াতি,ক্ষমতার অপব্যবহার ও ভয়াবহ দুর্নীতির সুনিদিষ্ট অভিযোগে টিউলিপ সিদ্দিক ও রাজউকের একাধিক সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। কি ভাবে রাজধানীর গুলশান-২ এর ৭১ নম্বর রোডের ভবনে একটি ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, সেটিও বেরিয়ে আসছে। গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গত মার্চে দুদক ফ্ল্যাটের সন্ধান পায়। পওে এই বিষয়ে দুদকের পক্ষ থেকে আদালতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই ফ্ল্যাটটি জব্দের আদেশ দেন।
সূত্র মতে, এরপর গুলশানের ওই ফ্ল্যাটের আদ্যোপান্ত খুঁজতে গিয়ে দুদক পেয়েছে পুরো প্রক্রিয়া জুড়েই অভিনব জালিয়াতির নানা ফিরিস্তি। ১৯৬৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি ইমাম হোসেন চৌধুরীর আবেদনে তৎকালীন ঢাকা ইম্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (বর্তমান রাজউক), তাকে প্রায় দুই বিঘা জমি ৯৯ বছরের জন্য হস্তান্তর না করার শর্তে বরাদ্দ দেয়। কিন্তু ১৯৭৪ সালে থেকে দুই হাত ঘুরে সেই সম্পত্তি চলে যায় ইস্টার্ন হাউজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলামের কাছে।
২০০০ সালে টিউলিপ সিদ্দিকের আপন খালা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাব খাটিয়ে ইস্টার্ন হাউজিংকে লিগ্যাল পার্সন হিসেবে আমমোক্তার অনুমোদন ও ৩৬টি ফ্ল্যাটে বিভাজনে তৎকালীন রাজউক সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে অনুমোদন করিয়ে নেন। বিনিময়ে একই প্লটে ২০১ নম্বর ফ্ল্যাটটি গ্রহণ করেন টিউলিপ সিদ্দিক।
এ ঘটনায় জড়িত টিউলিপ সিদ্দিক, সাবেক রাজউক কর্মকর্তা সরদার মোশাররফ হোসেনসহ সংশ্লিষ্টদের আসামি করে মামলা দায়ের করবে দুদক। আর এই অনিয়মের দায় থাকলেও মারা যাওয়ায় আসামি করার সুযোগ নেই ইস্টার্ন হাউজিংয়ের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ও রাজউকের সাবেক কর্মকর্তা ডক্টর মুহাম্মদ সেলিমকে। রাজউকের প্লট বরাদ্দ বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্ট কোনো বিভাগ এর দায় এড়াতে পারে না। এর আগে দুদকের পূর্বাচলে শেখ পরিবারের ৬০ কাঠার প্লট জালিয়াতি মামলায় আসামি করা হয়েছে টিউলিপ সিদ্দিককে।
আ. দৈ./ কাশেম