ঢাকার উপকণ্ঠে কেরানীগঞ্জে বুড়গঙ্গা নদীর নিকটবর্তী ৩৮১ দশমিক ১৯ একর জমিতে ও বিশাল এলাকা নিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপকের (রাজউক) উদ্যোগে বাস্তবায়িত হচ্ছে সরকারের ‘ঝিলমিল আবাসন প্রকল্পটি’। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এবং আধুনিক নাগরিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বৃহৎ পরিসরের আবাসিক এলাকা নিয়ে এই প্রকল্পটি। সরকারের সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থার সমন্বয়ে রাজউকের পক্ষ থেকে সব ধরনের নাগরিক সুযোগ সুবিধা সহ বাস্তবায়িত হচ্ছে ‘ঝিলমিল প্রকল্পটি’। কিন্তু এই প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ প্রাপ্তদের মধ্যে অনেকেই এখনো ভবন নির্মানের কার্যক্রম শুরু করেননি। ফলে সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্তার পক্ষ থেকেও কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। আর এইসব বিষয় নিয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম অত্যন্ত আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেছেন, ঢাকার কেরানীগঞ্জে সব ধরনের নাগরিক সুযোগ সুবিধা সহ ‘ঝিলমিল প্রকল্পটি’বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এবং নাগরিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বৃহৎ পরিসরের আবাসিক এলাকা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুব কম আছে। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ প্রাপ্তদের ভবন নির্মাণের কাজ দ্রুত শুরু করা উচিত। দ্রুত কাজ শুরুা না করলে ওয়াসা , বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য সেবা সংস্থা সমূহের কাজ শুরু করতে পারছেন না। অথচ তারা সর্বদা এই প্রকল্পে নাগরিক সুবিধা প্রদানের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তারাও কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গরূপে শুরু করতে পারছে না।রাজউকের চেয়ারম্যান সকল বরাদ্দগ্রহীতাদের আহবান জানিয়ে বলেন, আপনারা পুরোদমে ব্যক্তিগত ভবনসমূহ নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করুন। এ জন্য যে কোন ধরনের সেবা প্রদানে রাজউক সদা সচেষ্ট রয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) কেরানীগঞ্জে রাজউকের বাস্তবায়িতব্য ‘ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্প’ এলাকায় একটি মসজিদ ও একটি স্কুলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ঝিলমিল সোসাইটির প্রতিনিধিবৃন্দের সাথে মতবিনিময়কালে এইসব কথা বলেন তিনি। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ নুরুল ইসলাম, রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) মো.হারুন-অর-রশীদ,ঝিলমিল আবাসিক এলাকা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোঃ আমিনুর রহমান, সংশ্লিষ্ট জোনের পরিচালক রাজিয়া সুলতানা, ঝিলমিল সোসাইটির সভাপতি বিচারপতি (অবঃ) কে এম জহিরুল হক, সোসাইটির সেক্রেটারি ও সাংবাদিক নেতা সাজ্জাদ আলম খান তপু ,রাজউকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা বৃন্দ এবং ওই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকল স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীসহ ঝিলমিল সোসাইটির প্রতিনিধিবৃন্দ।
উক্ত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) মো.হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘ঝিলমিল প্রকল্পের সকল নির্মিতব্য স্থাপনা রাজউকের নিয়ম মেনে করতে হবে। ভবন নির্মানে যে কোন ধরনের ব্যত্যয় ঘটলে তার বিরুদ্ধে আইনানুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মতবিনিময় সভায় ঝিলমিল সোসাইটির সভাপতি বিচারপতি (অবঃ) কে এম জহিরুল হক এবং সংগঠনের সেক্রেটারি সাজ্জাদ আলম খান তপু প্রকল্পের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করণের জন্য বরাদ্দগ্রহীতাদের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। যার প্রেক্ষিতে রাজউক চেয়ারম্যান তাদের অবহিত করেন।দ্রুত ঝিলমিল আবাসিক এলাকাকে জনবহুল এবং নাগরিক সুযোগ সুবিধা সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও রাস্তা আলোকিত করণের জন্য স্ট্রীট লাইটের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়াও আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে একটি মডেল পুলিশ থানা স্থাপিত হবে যার জন্য ইতিমধ্যে জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। একইসাথে প্রবেশ গেট সমূহে অধিক সংখ্যক আনসার সদস্য মোতায়েন সহ নিয়ম মাফিক বন্ধ ও খোলা রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে আলোচনার এক পর্যায়ে ঝিলমিল আবাসিক এলাকার ভবিষ্যত বাসিন্দাদের কাছে নাগরিক সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রকল্পের ২ নং সেক্টরে ০.৭৪ একর জমিতে নির্মিতব্য চারতলা একটি মসজিদ এবং ০.৯৪ একর জমির উপর নির্মিতব্য ৬ তলা ঝিলমিল স্কুল ও কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাজউক চেয়ারম্যান। এ সময় তিনি মসজিদ ও স্কুলের সামগ্রিক নির্মাণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, সকল ধরনের নাগরিক সুযোগ সুবিধা সহ ঢাকার কেরানীগঞ্জে রাজউক কর্তৃক বাস্তবায়িতব্য ৩৮১.১৯ একর জায়গা নিয়ে ঝিলমিল আবাসিক এলাকা গড়ে উঠছে। যেখানে রয়েছে ১৭০০ এর অধিক প্লট। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতকরণে ইতিমধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ২ টি উপকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ এবং ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও প্রকল্পের ২২ কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে।
প্রকল্প এলাকায় ৬তলা বিশিষ্ট আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের দাপ্তরিক কার্যক্রম ইতিমধ্যে চালু হয়েছে। অচিরেই বরাদ্দকৃত জমিতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল ভবন নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হবে। সর্বোপরি, শিগগিরই সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দিয়ে ঝিলমিল আবাসিক এলাকাকে একটি নান্দনিক আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে রাজউক বদ্ধপরিকর।
আ. দৈ./ কাশেম