রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫,
১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ই-পেপার

রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
জাতীয়
২.১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি চীনের
ড. ইউনূসের ৪দিনের সফর বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হচ্ছে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Publish: Friday, 28 March, 2025, 9:35 PM  (ভিজিট : 42)

এবার প্রমাণ হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আর্ন্তজাতিক পরিমন্ডলে জনপ্রিয়তার বিষয়টি।  চীনে ৪ দিনের ঐতিহাসিক সফরের ফলস্বরূপ এ প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে অনেক।  সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চীনা সরকার ও কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উভয় দেশ। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে ঐতিহাসিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।  শুক্রবার (২৮ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপল-এ অনুষ্ঠিত দুই নেতার বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কর্মসূচির প্রশংসা করেন।

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে বিরল সম্মান প্রদর্শন করে প্রেসিডেন্ট শি নিজ কার্যালয় থেকে বেরিয়ে এসে তাকে স্বাগত জানান। ড. ইউনূস দুই উপদেষ্টাসহ হলে প্রবেশ করলে চীনা প্রেসিডেন্ট তাকে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানান।  পরে দুই নেতা নিজ নিজ দেশের পক্ষ থেকে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় নেতৃত্ব দেন, যেখানে উষ্ণতা ও সৌহার্দ্যের পরিবেশ বজায় ছিল। এটি ছিল প্রধান উপদেষ্টার প্রথম দ্বিপাক্ষিক বিদেশ সফর।  বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট শি বাংলাদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য চীনের উন্নয়ন অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার প্রস্তাব দেন।

তিনি জানান, চীন বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শূন্য শুল্ক সুবিধা ২০২৮ সালের শেষ পর্যন্ত বজায় রাখবে, যা বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের পরও দুই বছর বাড়ানো হলো।  বাংলাদেশ-চীন মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) ও বিনিয়োগ চুক্তির জন্য আলোচনার প্রস্তাব দেন প্রেসিডেন্ট শি, যা বাংলাদেশের প্রতি চীনা বিনিয়োগ বাড়ানোর পথ সুগম করবে।

ড. ইউনূসের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে চীনা প্রেসিডেন্ট তার দেশের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে সরাসরি বিনিয়োগ ও উৎপাদনকেন্দ্র স্থানান্তরের বিষয়ে উৎসাহিত করবেন বলে জানান।  চীন বাংলাদেশে একটি বিশেষ চীনা শিল্পাঞ্চল ও শিল্প পার্ক নির্মাণে সমর্থন দেবে বলে জানান প্রেসিডেন্ট শি। তিনি বাংলাদেশের পণ্য আমদানি বাড়ানো, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বি আর আই) প্রকল্পে উন্নতমানের সহযোগিতা এবং ডিজিটাল ও সামুদ্রিক অর্থনীতিতে সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেন।

স্বাস্থ্য ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে চীনা প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের নাগরিকদের চীনের ইউনান ও অন্য প্রদেশগুলোতে চিকিৎসার জন্য স্বাগত জানান এবং বাংলাদেশে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা দেন।  রোহিঙ্গা সংকট ও কৌশলগত সহযোগিতার বিষয়ে ড. ইউনূস বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের সহযোগিতা কামনা করেন।  প্রেসিডেন্ট শি মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত জনগণের বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে চীনের সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।

অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টা চীনের কাছে বাংলাদেশি তরুণদের স্বপ্নপূরণে সহায়তা চেয়ে একটি চীন সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপনের অনুরোধ করেন। তিনি চীনা প্রকল্প ঋণের সুদের হার কমানো এবং প্রতিশ্রুত অর্থের জন্য আরোপিত প্রতিশ্রুতি ফি মওকুফের অনুরোধ জানান।

প্রেসিডেন্ট শি জানান, তিনি ড. ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণের ধারণা গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছেন, যখন তিনি ফুজিয়ান প্রদেশের গভর্নর ছিলেন। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ থেকে আম আমদানি করতে চীন প্রস্তুত। তিনি নিজেও বাংলাদেশি আম ও কাঁঠালের স্বাদ উপভোগ করেছেন বলেন। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তিস্তা নদী প্রকল্পে চীনের সহযোগিতা, মাল্টিপারপাস কমব্যাট এয়ারক্রাফট কেনা এবং কুনমিং থেকে বাংলাদেশের বন্দরগুলো পর্যন্ত মাল্টিমোডাল পরিবহন সংযোগ স্থাপনের বিষয়েও আলোচনা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান বলেন, আজ আমরা ইতিহাসের নির্মাণ প্রত্যক্ষ করলাম। এটি একটি রূপান্তরমূলক সফর, যেখানে দুই নেতা ভবিষ্যতের কৌশলগত সম্পর্কের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছেন, যা আগামী কয়েক দশক টিকে থাকবে।
বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ঝেং শানজি এবং উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইডং উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি ও পরিবহন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান অংশ নেন।

এদিকে শুক্রবার (২৮ মার্চ) ।প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার গণমাধ্যমকে এর তথ্য জানান।  তিনি আরো জানান, বাংলাদেশি কর্মকর্তারা এবং ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানান, প্রায় ৩০টি চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে এক্সক্লুসিভ চায়না ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের উৎপাদন খাতে বিনিয়োগে চীনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত করার পর এই প্রতিশ্রুতি এসেছে।

চীন মংলা বন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্পের জন্য প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ, চায়না ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনের উন্নয়নে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য ১৫০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। বাকি অর্থ অনুদান ও অন্যান্য ঋণের মাধ্যমে আসবে। প্রধান উপদেষ্টার চারদিনব্যাপী প্রথম দ্বিপাক্ষিক চীন সফর প্রসঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও জয়েন বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক সফর।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, এই সফর বাংলাদেশের প্রতি চীনা বিনিয়োগের নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সময় ড. ইউনূস চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে বাংলাদেশে চীনা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের জন্য সবুজ সংকেত দেওয়ার অনুরোধ করেন।
আশিক চৌধুরী জানান, প্রেসিডেন্ট শি চীনা কোম্পানিগুলোকে তাদের উৎপাদন কেন্দ্র বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে স্থানান্তর করতে উৎসাহিত করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, এই সফর চীনের অনেক কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে রাজি করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটি কেবল সময়ের ব্যাপার। এ পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত ইতিবাচক। শুক্রবার ড. ইউনূস এবং আশিক চৌধুরী বেইজিংয়ে তিনটি ইন্টারঅ্যাকটিভ সেশনে বিশ্বের বৃহত্তম কিছু কোম্পানিসহ ১০০টিরও বেশি চীনা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তারা বাংলাদেশে, বিশেষ করে উন্নত বস্ত্রশিল্প, ওষুধশিল্প, হালকা প্রকৌশল এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সময় ড. ইউনূস চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে বাংলাদেশে চীনা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের জন্য সবুজ সংকেত দেওয়ার অনুরোধ করেন।আশিক চৌধুরী জানান, প্রেসিডেন্ট শি চীনা কোম্পানিগুলোকে তাদের উৎপাদন কেন্দ্র বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে স্থানান্তর করতে উৎসাহিত করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

শুক্রবার ড. ইউনূস এবং আশিক চৌধুরী বেইজিংয়ে তিনটি ইন্টারঅ্যাকটিভ সেশনে বিশ্বের বৃহত্তম কিছু কোম্পানিসহ ১০০টিরও বেশি চীনা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তারা বাংলাদেশে, বিশেষ করে উন্নত বস্ত্রশিল্প, ওষুধশিল্প, হালকা প্রকৌশল এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

আ. দৈ. /কাশেম
   বিষয়:   ড. ইউনূসের ৪দিনের সফর বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হচ্ছে  
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

নারী নির্যাতন বন্ধে আইনের সংশোধন প্রয়োজন: মামুনুল হক
৬২ জন পুলিশ সদস্য পাচ্ছেন বিপিএম ও পিপিএম পদক
ভারত-পাকিস্তান সংকট নিরসনের চেষ্টা করছে সৌদি আরব
পাঁচ বছর আগে অপহরণ হওয়া স্কুলছাত্র নিজেই ফিরল বাসায়
রাজনীতির চেয়ারে ঘুণপোকা ধরেছে, এটি সংস্কার করা প্রয়োজন: ব্যারিস্টার ফুয়াদ
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

ডিএনসিসিতে বর্জ্যব্যবস্থাপানা বিভাগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের অভিযান
কাশ্মীরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ভিডিও প্রকাশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দলের সভা
পদত্যাগ করলেন আটাবের সবুজ মুন্সী
ঢাকা দুই সিটিতে আওয়ামী দোসর ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষায় বিএনপির ব্যাপক তদবির
জাতীয়- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik@gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝