দেশের বহুল আলোচিত ও হ্নদয়বিদায়ক ঘটনা বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে পাশবিক নির্যাতনের শিকার মাগুরার শিশু আছিয়াকে আর বাঁচানো গেলো না। টানা ৮দিন বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে অবশেষে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশু আছিয়ার মৃত্যু হয়েছে। এখানে শিশুটিকে বাচাঁনোর জন্য আপ্রান্ত চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের আন্তরিক চেষ্টার পর শিশু আছিয়াকে আর বাচাঁনো গেলো না।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। সিএমএইচের প্রধান সার্জনকে প্রধান করে ৮জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডে রয়েছেন সার্জিক্যাল বিশেষজ্ঞ, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, প্লাস্টিক সার্জন, শিশু নিউরোলজি বিভাগ, অ্যানেসথেসিয়া, শিশু হৃদ্রোগ বিভাগ, শিশু বিভাগের সার্জন, ইউরোলজি বিভাগ ও থোরাসিক সার্জন বিভাগের চিকিৎসকেরা চেষ্টা চালিয়েছেন শিশুটি বাচাঁনোর জন্য। কিন্তু তাদের এতো চেষ্টার পরও শিশুটিকে আর বাচাঁনো গেলো না।
তবে নির্যাতিত শিশু আছিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন, প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা,সেনাবাহিনী প্রধান, বিএনপি মহাসচিব, জামায়াতের আমিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও পেশাজীবী নেতৃতবৃন্দ। তারা এই ঘটনায় জড়িতদের বিচার দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ৬ মার্চ মাগুরা শহরে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে শিশু আছিয়া। ওইদিন বেলা ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যান তার বোনের শাশুড়ি। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ওইদিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ৭ মার্চ রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর ৮ মার্চ রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
কিন্তু সংকটাপন্ন শিশুটিকে পরদিন ৯ মার্চ সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিআইসিইউ) থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ১০ মার্চ শিশু আছিয়াকে সিএমএইচে পেডিয়াট্রিক আইসিইউতে নেওয়া হয়। গতকাল সকালে দুই দফায় শিশুটির কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। সিপিআর দেওয়ার পর তার হৃৎস্পন্দন ফিরে আসে। কিন্তু বেলা ১২টায় তার আবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। এই দফায় সিপিআর দেওয়ার পরও তার হৃৎস্পন্দন আর ফিরে আসেনি। বেলা ১টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এ ঘটনায় গত ৮ মার্চ ওই শিশুর মা বাদী হয়ে মাগুরা সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন। আসামিরা হলেন- শিশুটির ভগ্নিপতি সজিব হোসেন (১৮), বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৪২), অপ্রাপ্তবয়স্ক এক কিশোর (১৭) এবং তাদের মা জাবেদা বেগম (৪০)। আসামিদের সবাই বর্তমানে কারাগারে আছেন।
এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে শিশুটির মৃত্যুতে দু:খ প্রকাশ করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানানো হয়েছে যে, মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটি গতকাল দুপুর ১টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। সিএমএইচের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক কর্নেল নাজমুল হামিদ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সেই সঙ্গে বাহিনীটি শিশুটির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।
সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে,সিএমএইচের সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শিশুটির আজ সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। দুইবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃৎস্পন্দন ফিরে আসেনি। গত ৮ মার্চ শিশুটিকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি করা হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শিশুটির শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে এবং যেকোনো প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শিশুটির বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে।
অপরদিকে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম গণমাধ্যমকে বলেছেন, মাগুরায় যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুটি মারা গেছে। এই শিশুটির মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করা হবে।
আ. দৈ. /কাশেম