রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫,
১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ই-পেপার

রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
জাতীয়
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার মুখোমুখি হচ্ছেন ডিএনসিসির প্রশাসক
‘ট্রেড লাইসেন্সে’অতিমাত্রায় ডিজিটালের নামে সরকারের আইনকে ওপনে চ্যালেঞ্জ ডিএনসিসির
আবুল কাশেম:
Publish: Thursday, 13 March, 2025, 5:36 AM  (ভিজিট : 396)

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার গণআন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের সমর্থিত চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও হাজার কোটি টাকা লোপাটকারী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক মেয়র মো.আতিকুল ইসলাম কারাগারে থাকলেও তার রেখে যাওয়া সিন্ডিকেটের সদস্যরা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন।  
ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো.মনিরুজ্জাম,ভারপ্রাপ্ত সচিব মামুন উল হাসানসহ কয়েকজন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার সিন্ডিকেট ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগে অতিমাত্রায় ‘ডিজিটাল’পদ্ধতি চালু করতে গিয়ে ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। 

শুধু তাই নয়, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের এই সিন্ডিকেট পরিকল্পিতভাবে অত্যন্ত ক্লিন ইমেজের পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি বর্তমান প্রশাসক মোহাম¥দ এজাজকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার মুখোমুখি দাড় করানো পাশাপাশি আদালতের কাঠগড়া দাড় করানো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএনসিসির একাধিক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে জানান, ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগের দাঁয়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিষ্ক্রীয় করার পাশাপাশি সরকারের আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘন করে মনগড়া আদেশ জারির মাধ্যমে নগরীতে ঢালাওভাবে অনলাইনে আবেদন সাপেক্ষে ‘ট্রেড লাইসেন্স’ দেওয়া শুরু করেছে। ভুয়া ঠিকানায় যাছাই বাছাই ছাড়াই এখন আবাসিক এবং বাণিজ্যিক এলাকায় পাইকারী হারে ‘ট্রেড লাইসেন্স’ দেওয়া হচ্ছে।

এই সুযোগে গত ৯ মার্চ ডিএনসিসিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্পের নামে, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ট্রাম্প অ্যাসোসিয়েশন, ঠিকানা সাতারকুল, ডিএনসিসি ঢাকা এবং গত ৯ মার্চ আরেক মার্কিন ব্যবসায়ি ‘ ইলন মাক্স’ এর নামে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টুইটার, ঠিকানা ভাটারা ঢাকা উল্লেখ করে অনলাইনে আবেদন দায়ের করা হয়েছে। এই দুইটি আবেদন ডিএনসিসির ওয়েভ সাইটে ড্রাফট হিসেবে আছে বলেন জানান ডিএনসিসির  কর্মকর্তারা।

তারা আরো জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ও প্রজ্ঞাপন জারির তোয়াক্কা না করে এবং ডিএনসিসি বোর্ড মিটিংয়ের রেজুলেশন ছাড়াই প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জাম, উপ প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিনসহ কতিপয় কর্মকর্তার হীনউদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যাছাই বাছাই ছাড়াই অনলাইনে আবেদন ও নির্ধারিত ফি এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পরিশোধ করে ব্যবসায়ীদের মূল্যবান সনদ ‘ট্রেড লাইসেন্স’ গণহারে পাবার সুযোগ দিয়েছেন। এই সুযোগে ডিএনসিসিতে আবাসিক,বাণিজ্যিক ও শিল্পাঞ্চলে গণহারে ওইসব এলাকায় কম্পিউটার দোকানে বসেই ভুয়া ঠিকানা এবং ব্যবসার ধরন লিখে আবেদন করার পর দ্রুত ফি প্রদান করে ‘ট্রেড লাইসেন্স’ কপি কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট করে নেয়ার হিরিক পড়েছে। আরো সুযোগ দেওয়া হয়েছে ওইসব কম্পিউটারেই ট্রেডলাইসেন্সের ভুল ত্রুটি সংশোধান ও ঠিকানা পরিবর্তন করা যাচ্ছে।

এসব বিষয়ে নিয়ে কথা বলতে ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামের সাথে তার মুঠো ফোনে এবং হোযাটঅ্যাপের কল করলে তিনি কল কেটে দেন। পরে উপ প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিনের সাথে ফোনে কথা হয়। তিনি জানান, মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেয়া হয়নি এবং  ডিএনসিসির বোর্ডের রেজুলেশন  না নিলেও বর্তমান প্রশাসক স্যার মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। এটা এখন পরীক্ষামূলক কাজ হচ্ছে।

তবে ডিএনসিসির মুখপাত্র জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসেন এই প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্স পুরোপুরি অনলাইনে সরবারাহের জন্য পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলছে। পরীক্ষা নীরিক্ষা করে এই সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধান করা হচ্ছে।’

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং দপ্তরের পক্ষ থেকে প্রায় ১২/১৩ বছর আগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে ঢাকা দুই সিটিতেই আবাসিক এলাকায় ‘ট্রেড লাইসেন্স’ প্রদান এবং নবায়ন বন্ধের নির্দেশনা এখনো বলবৎ রয়েছে। যারফলে এতোদিন আবাসিক এলাকায় লোকজনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলেও তারা বৈধ ‘ট্রেড লাইসেন্স’ পাননি। যদি আবাসিক এলাকায় ১২/১৩ বছর আগে গড়ে উঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বৈধতা দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি, প্রজ্ঞাপন জারি পর এবং ডিএনসিসির বোর্ড মিটিং এর রেজুলেশন করে ‘ট্রেড লাইসেন্স’ দেওয়া হয় এবং একত্রে বকেয়া ফি আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করলে কমপক্ষে ৫/৬ শত কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব পাবার সম্ভাবনা ছিল। একইসাথে ডিএনসিসিতে আবাসিক- অনাবাসিক এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে থাকতো। কিন্তু সেই সুযোগ নষ্ট করার জন্য পরিকল্পিতভাবে রাজস্ব বিভাগের একটি চক্র এই কাজটি করছেন।

উল্লেখ্য, সরকারের জারি করা আইন ও প্রজ্ঞাপনে ‘ট্রেড লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা তথ্যাদিও কথা বলা আছে। সিটি কর্পোরেশন কর বিধি, ২০০৯ এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ট্রেড লাইসেন্সের সূচনা ঘটে। আগের সরকারের আইনে পরিস্কার বলা আছে, অনলাইনে ‘ই ট্রেড লাইসেন্স’ আবেদনটি নিয়ে লাইসেন্স সুপারভাইজার দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে সঙ্গে সঙ্গে একটি ই-ট্রেড লাইসেন্স চলে যাবে সেবাগ্রহীতার ই-মেইলে। একটি মেসেজও যাবে তার মোবাইল ফোনে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ তিন দিন। গ্রাহক একদিনের মধ্যে সবকিছু শেষ করতে পারলে দু’দিনের মধ্যেও তা হয়ে যেতে পারে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কোথাও কোনও তথ্য বা কাগজপত্রের ঘাটতি বা কোনও ভুল থাকলে সঙ্গে সঙ্গে সেবাগ্রহীতার মোবাইল ফোন ও ই-মেইলে মেসেজ যাবে। তিনি সেটা সংশোধন করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একইভাবে কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

সাধারণ ট্রেড লাইসেন্স: ভাড়ার রশিদ অথবা চুক্তিপত্রের সত্যায়িত কপি এবং হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদের কপি। শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ট্রেড লাইসেন্স: উপরোক্ত সব ডকুমেন্টসমূহ এর সাথে পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র-প্রতিষ্ঠানের অবস্থান চিহ্নিত মানচিত্র-ফায়ার সিকিউরড প্রস্তুতি সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র-ডিসিসি’র নিয়মাবলী মান্য করার শর্তে ৩০০ টাকার জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকার পত্র-১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।

ই- ট্রেড লাইসেন্স আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ওয়েবভিত্তিক শক্তিশালী ও সুরক্ষিত সফটওয়ারের মাধ্যমে নতুন ট্রেড লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন এবং ট্রেড লাইসেন্সের সকল তথ্য ডাটাবেজের সংরক্ষণ করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ট্রেড লাইসেন্স করা আরো অনেক সহজ এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব। ই-ট্রেড লাইসেন্স আবেদন অনলাইনে করা যাবে এবং ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড বা নগদে ব্যাংকে গিয়ে লাইসেন্স ফি পরিশোধ করা যাবে। ই-ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়মাবলী: সর্বনিম্ন ১৮ বছর বয়সের যেকোনো নাগরিক ই-ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। নতুন ট্রেড লাইসেন্স ও ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা যাবে।

অনলাইনে ই-ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন করতে হলে প্রথমেই অনলাইনে সেখানে নাম, মোবাইল ফোন নম্বর, ই-মেইল, ব্যবসার ধরনসহ কিছু তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। একটি নিবন্ধন নম্বরও পাওয়া যাবে। সেটা সাবমিট করলে আরেকটি ফরম আসবে। সেখানেও চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বা জন্ম নিবন্ধন সনদের নম্বর যুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র স্ক্যান করে যুক্ত করতে হবে। এরপর সেটা সাবমিট করলে একটি মেসেজ যাবে গ্রাহক ও সংশ্লিষ্ট এলাকার রাজস্ব ইন্সপেক্টরের (রাজস্ব পরিদর্শক) মোবাইলে। রাজস্ব পরিদর্শক কাগজপত্র যাচাই করার পর একটি ফিরতি মেসেজ যাবে সেবাগ্রহীতার মোবাইল ফোন ও ই-মেইলে। ফিরতি মেসেজে ফির পরিমাণ ও জমা দেওয়ার বিষয়ে অবহিত করা হবে। সেখানে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর জানিয়ে দেওয়া হবে। 

তবে ক্লিনিক অথবা ব্যক্তিগত হাসপাতালের ক্ষেত্রে: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমোদন। লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে: মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেল-সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন। ছাপাখানা ও আবাসিক হোটেলের ক্ষেত্রে: ডেপুটি কমিশনারের অনুমতি। রিক্রুটিং এজেন্সির ক্ষেত্রে: মানবসম্পদ রপ্তানি ব্যুরো কর্তৃক প্রদত্ত লাইসেন্স। অস্ত্র ও গোলাবারুদের ক্ষেত্রে: অস্ত্রের লাইসেন্স। ঔষধ ও মাদকদ্রব্যের ক্ষেত্রে: ড্রাগ লাইসেন্সের কপি। ট্রাভেলিং এজেন্সির ক্ষেত্রে: সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অনুমতি। লাইসেন্স নবায়ন একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া, যার মেয়াদ এক বছর। এই মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে আবেদন করতে হয়।

আ, দৈ./ কাশেম
   বিষয়:  ট্রেড লাইসেন্স   ’অতিমাত্রায়   ডিজিটাল   সরকারের আইন   ওপনে চ্যালেঞ্জ    ডিএনসিসির  
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

নারী নির্যাতন বন্ধে আইনের সংশোধন প্রয়োজন: মামুনুল হক
৬২ জন পুলিশ সদস্য পাচ্ছেন বিপিএম ও পিপিএম পদক
ভারত-পাকিস্তান সংকট নিরসনের চেষ্টা করছে সৌদি আরব
পাঁচ বছর আগে অপহরণ হওয়া স্কুলছাত্র নিজেই ফিরল বাসায়
রাজনীতির চেয়ারে ঘুণপোকা ধরেছে, এটি সংস্কার করা প্রয়োজন: ব্যারিস্টার ফুয়াদ
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

ডিএনসিসিতে বর্জ্যব্যবস্থাপানা বিভাগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের অভিযান
কাশ্মীরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ভিডিও প্রকাশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দলের সভা
পদত্যাগ করলেন আটাবের সবুজ মুন্সী
ঢাকা দুই সিটিতে আওয়ামী দোসর ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষায় বিএনপির ব্যাপক তদবির
জাতীয়- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik@gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝