রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫,
১৪ বৈশাখ ১৪৩২
ই-পেপার

রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
কক্সবাজারে তামাকের আগ্রাসন: বাড়ছে ক্যানসারের ঝুঁকি
বিজন কুমার বিশ্বাস, কক্সবাজার
Publish: Wednesday, 12 March, 2025, 4:21 PM  (ভিজিট : 61)

কক্সবাজারের কৃষকেরা ক্ষতির প্রভাব জেনেও সবজি ছেড়ে তামাক চাষে ঝুঁকছেন। চলতি মৌসুমে চকরিয়া ও রামু উপজেলায় ৬৮০ হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হয়েছে।  তামাক কোম্পানিগুলোর লোভনীয় অফার ও লজিস্টিক সাপোর্টের কারণে কৃষকরা তামাক চাষে উৎসাহ পাচ্ছেন। 

এসব তামাক চাষের ফলে নষ্ট হয় জমির উর্বরতা। তামাকের বিষাক্ত উপাদান শিশু স্বাস্থ্যের  জন্যে ঝুঁকিপূর্ণ, এর ফলে ক্যানসার সহ জটিল রোগের প্রবণতা বাড়ছে। এছাড়া বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহার ও তামাকের নিকোটিনের প্রভাবে দূষিত হচ্ছে  নদীর পানি ও বাতাস। যার কারণে তামাক খেতের পার্শ্ববর্তী নদীগুলোয় মাছের প্রজনন কমে গিয়েছে এবং তামাক চাষের নিকটবর্তী এলাকায় জটিল রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। 

স্থানীয়রা জানান, অসাধু তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে তামাক চাষে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। কৃষকদের আর্থিক সহায়তা, সার, বীজ ও ইত্যাদি মাধ্যমে তামাক কোম্পানিগুলো সুবিধা আদায় করছে। এদিকে পুঁজি ছাড়া ব্যবসা হওয়ায় ও অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের আশায় তামাক চাষে যাচ্ছে অধিকাংশ কৃষক।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কক্সবাজারের রামু রাজারকুল, মৈষকুম, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়ার নাপিতেরচর, কাউয়ারখোপ, মনিরঝিল ও ফাক্রিকাটা এলাকায় বাঁকখালী নদীর দুই তীরে চাষ করা হয়েছে তামাকের। যেখানে এক সময় সবজি চাষাবাদ হতো, সেসব জমিগুলো এখন দখলে নিয়েছে তামাক খেত।

একই চিত্র চকরিয়ায় উপজেলাতেও। এই উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়নে তামাকের চাষ হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি তামাক চাষ হচ্ছে বমু বিলছড়ি, সুরাজপুর মানিকপুর ও কাকারা ইউনিয়নে। এই তিন ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মাতামুহুরী নদীর চর এবং তীরবর্তী জমিতেও তামাকের আবাদ হয়ে আসছে।

বর্ষায় নদীর দু’কূল উপচে ঢলের পানিতে পলি জমে। আর সেই উর্বর জমির বেশির ভাগই তামাকের দখলে চলে যায়। অথচ নদীর আশপাশের স্বল্প উর্বর জমিতে বাদাম, ভুট্টা, সরিষা, শাকসবজি, গোলাপ, সূর্যমুখী ফুল ও বোরোর আবাদ হয়েছে। এখানকার মানুষ প্রাকৃতিক পানি নির্ভর। সেক্ষেত্রে সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাকঁখালী নদী অন্যতম ভরসা। বর্তমানে যা অনিরাপদ হয়ে উঠছে। 

তামাক চাষে ব্যবহৃত অতিমাত্রার সার-কীটনাশক ও তামাকের রাসায়নিক উপাদান ক্রমেই নদী ও জলাশয়ের পানিতে মিশে পানিদূষণ করছে। বিশেষ করে মাছের ডিম পাড়ার মৌসুমে কীটনাশকযুক্ত পানির কারণে মাছ তার বংশ বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ হারাচ্ছে। আরও একটি আশঙ্কার বিষয় হলো, তামাক চাষ ও প্রক্রিয়াকরণ কাজে সম্পৃক্ত থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকায় শিশু-কিশোরদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার দিন দিন কমে আসছে।

বাড়ছে ক্যানসারের ঝুঁকি, হারাচ্ছে জমির উর্বরতা, নদী দূষণে কমছে মাছের প্রজনন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এই তামাকের ক্ষতিকর প্রভাবে ভূমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। যে জমিতে একবার তামাক চাষ করা হয়, সে জমিতে অন্য ফসল সহজে হয় না। ফসলের জন্যে হুমকিস্বরূপ এই বিষাক্ত তামাক। তামাক কোম্পানিগুলোর প্রলোভনে পড়ে বেশি লাভের আশায় প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে তামাক চাষে জড়িয়ে পড়েন অর্থলোভী কিছু কৃষক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক রোপণ থেকে শুরু করে পাতা কাটা এবং শুকানো পর্যন্ত এর সব প্রক্রিয়াতে রয়েছে বিষাক্ত উপাদান। কৃষকরা ভয়াল এ বিষ সম্পর্কে জানার পরেও অতিরিক্ত লাভের আশায় তামাক চাষে যাচ্ছেন। এর পরিচর্যায় কৃষকরা নিজেদের পাশাপাশি পরিবারের স্ত্রী ও কোমলমতি শিশুদেরও ব্যবহার করছে। ফলে বাড়ছে ক্যানসারসহ তামাকজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। স্বাস্থ্য ও পরিবেশে ঝুঁকি জেনেও অনেকেই অতিরিক্ত লাভের আশায় তামাক চাষ ছাড়তে পারছে না।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ইতোমধ্যে বেশ ক’টি বেসরকারি সংস্থা কক্সবাজার জেলায় কাজ করলেও কৃষকের পক্ষ থেকে তামাক চাষ বন্ধে কোনো ধরনের আগ্রহ নেই। ফলে অনেকটা বিনা বাধায় স্থানীয় কৃষকদের জিম্মি করে নানা প্রলোভন দেখিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো প্রতিবছর তামাক চাষে বিনিয়োগ করে আসছে।

কৃষকরা বলেন, তামাক চাষ আসলেই ক্ষতিকর । কিন্তু সংসারের অভাবের কারণে বাধ্য হয়ে তামাক চাষ করতে হয়। ফসলের চেয়ে তামাক চাষ করলে  টাকা বেশি পাওয়া যায়। তাই অধিকাংশ কৃষক তামাক চাষের ক্ষতিকর সব কারণ জেনেও অতিরিক্ত লাভের আশায় ফসলের পরিবর্তে তামাক চাষ করতে বেশি আগ্রহী হন।

রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া এলাকার সমাজ সেবক জাহাঙ্গীর সেলিম জানান, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি জেনেও কৃষকেরা তামাক কোম্পানিগুলোর ঋণ সহায়তা ও লোভনীয় প্রলোভনে তামাক চাষ ছাড়তে পারছে না। রামুতে দিন দিন তামাক চাষের প্রবণতা বেড়েই চলেছে।
পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, তামাকে অতিরিক্ত কীটনাশক ও সার প্রয়োগের ফলে নদীদূষণ বেড়েছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। পাশাপাশি তামাক পোড়ানোর জন্য সংরক্ষিত বন ও ভিটেবাড়ির গাছ কেটে উজাড় করা হয়।

কক্সবাজার কৃষিসম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশীষ কুমার জানান, তামাক পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই তামাক চাষের কারণে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। যে ভূমিতে একবার তামাক চাষ করা হয়, সেখানে অন্য কোনো ফসল হয় না। কৃষকদের তামাক চাষ থেকে সরে আসতে আমরা নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করে আসছি। যেসব কৃষক তামাক চাষ করেন, তাদের কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হয় না। চলতি মৌসুমে রামু ও চকরিয়া উপজেলায় ৬৮০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। আগের বছর চাষ হয়েছিল ৭৪০ হেক্টর জমিতে।

নানাভাবে প্রচেষ্টায় তামাক চাষ কিছুটা কমে এসেছে। শাক সবজি ও ফলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক কৃষক তামাক চাষ ছেড়ে  ফসলের দিকে ঝুঁকছে। তিনি আরো মনে করেন কৃষকের ধান, সবজি চাষে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা বাড়ালে পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি করলে তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করা সম্ভব।

আ.দৈ/আরএস

   বিষয়:  কক্সবাজারে   তামাকের   আগ্রাসন   বাড়ছে   ক্যানসারের   ঝুঁকি  
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

মেট্রোরেল-বিদ্যুৎ-সড়ক-রেলে সেবা বিঘ্নিত হলে দুঃখ প্রকাশ বাধ্যতামূলক
রোম থেকে দেশের পথে প্রধান উপদেষ্টা
নির্বাচনে প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা চায় জামায়াত
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি
আড়াই মাসেও সন্ধান মেলেনি জগন্নাথ বিশ্ব. সাবেক ছাত্র লিখনের
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

ডিএনসিসিতে বর্জ্যব্যবস্থাপানা বিভাগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের অভিযান
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে জাতীয়তাবাদী কর্মজীবী দলের সভা
পদত্যাগ করলেন আটাবের সবুজ মুন্সী
ঢাকা দুই সিটিতে আওয়ামী দোসর ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষায় বিএনপির ব্যাপক তদবির
রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১২ বছর , তবু মেলেনি বিচার, নিশ্চিত হয়নি ক্ষতিপূরণ
- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik@gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝