শুরু হয়েছে মাহে রমজান। সিয়াম সাধনার এই মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর ইফতার কেন্দ্রিক রাজনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে। এই কর্মসূচীর মাধ্যমে তারা ভোটের আগাম প্রস্তু শুরু করতে চায়। পলাতক আওয়ামীলীগ ও তার সহদররা বাদে বাকী অধিকাংশ দল রাজনৈতির মাঠে সরব রয়েছে। প্রতিদিনই দলগুলোর ইফতারি আয়োজনের কর্মসূচী রয়েছে। বিশেষ করে প্রধান রাজণেতিক দল বিএনপি রমজান ঘিরে বেশকিছু ইফতারি আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে।
প্রতিবারের ন্যায় এবার তারা এতিম ও আলেমদের সম্মানে ইফতারি আয়োজন ছিল গত শনিবার। প্রতিবারের ন্যায় এবারও এতিমদের সম্মানে ইফতারি আয়োজন করা হয়। এছাড়া গতকাল বৃহস্প্রতিবার কূটনীতিকদের সম্মানেও ইফতারি আয়োজন করা হয়। দলটির মহাসচিব বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ। ফলে প্রথম দিকে ইফতার মাহফিলে তিনি অংশ নিতে পারেননি। তবে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। সামন্যের ইফতারি বৈঠকে নিয়মিত উপস্থিতি থেকে নেতাকর্মীদের দিক নির্দেশনা দেবেন। এছাড়া লন্ডন থেকে তারেক রহমানও ইফতার পার্টিতে সরব থাকছেন। দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। জানান গেছে যুক্তরাজ্য বিএনপির পক্ষ থেকে এই রমজানে ইফতারের আয়োজনের কর্মসুচী রয়েছে। সেখানে তারেক রহমানও দিক নির্দেশনা দেবেন। খালেদা জিয়া লন্ডনে থাকায় যুক্তরাজ্য কেন্দ্রীক অনুষ্ঠানের দিকে নজর রয়েছে সাধারণ নেতাকর্মীদের।
সারাদেশে তৃণমুলের নেতাকর্মীরাও ইফতার কেন্দ্রিক রাজনীতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এসব ইফতার আয়োজনের মুল আলচ্য বিষয় আগামী নির্বাচন এবং দলীয় মনোনয়ন। এই কর্মসুচীর মাধ্যমে তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। এ কারণে রমজানে সময়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজ এলাকায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। নেতাকর্মী ছাড়াও তারা সাধারণ মানুষের দোয়া নিচ্ছেন। সবার জন্য ইফতার আয়োজনের প্রস্তুতি সারছেন। এর মাধ্যমে তৃণমুলে সমর্থন যেমন আদায় করছেন। তেমনি কেন্দ্রেও নানাভাবে লবিং করার চেষ্টা করছেন। বিএনপির সুত্রে জানা গেছে আগামী ৯ মার্চ রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মানে বিএনপির ইফতার পার্টির আয়োজন রয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকী অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতকর্মীরা উপিস্থিত থাকবেন। এমনকি নবগঠিত এনসিপির নেতারাও সেখানে উপস্থিত থাকবেন। দলের পক্ষ থেকে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়ে বলে জানা গেছে।
এদিকে দলের নেতাকর্মীরা বলছেন কিছুটা অষ্পতা থাকলেও তারা ডিসেম্বর ধরেই আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। তবে নির্বাচনী রোডম্যাপ আরও স্পষ্ট করতে সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করছে বিএনপি। ডিসেম্বরের নির্র্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে বিএনপি মধ্যে এখনও কিছুটা সন্দেহ রয়েছে। তবে ড. ইউনূসের কথা উপর বিশ্বাস রেখে দলটি নির্বচনে প্রস্তুতি শুরু করেছে। যদিও সরকারি পৃষ্টপোষকতায় দল গঠনে নিয়ে দলের মধ্যে সন্দেহ অবিশ্বাস বাড়ছে। বিএনপি আগে জাতীয় নির্বাচনের দাবী করছে। তারা বলছে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন মানবে না। সরকারের কোন কোন উপদেষ্টা আগে স্থানীয় নির্বাচনের কথা বলছেন। ফলে নির্বাচন নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মনে সন্দেহ বাড়ছে। বিএনপি নেতারা বারবারই যৌক্তিক সংস্কার শেষে সরকারকে নির্বাচনের চাপ দিয়ে আসছে।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির বর্ধিত সভায়। সভায় তৃণমুল নেকার্মীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়। সভা ঘিরে তাদের উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। বর্ধিত সভা অনেক নির্বাচনী সভার আমেজ ধারণ করে। সভায় তৃণমুল নেতাকর্মীদের প্রার্থী হতে মনোনয়ন দৌড় লক্ষ্য করা গেছে। সভায় প্রতিটি থানা ও পৌসভা কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক বক্তৃতার সুযোগ পেয়েছেন। তাদের বক্তৃতা বেশ ধর্য্য সহকারের শোনেন লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান। এ সময় তিনি নেতাকর্মীদের দলের অভ্যন্ত বিভেদ সৃষ্টি না করার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে দলকে প্রস্তুত করারও পরামর্শ দিয়েছে। সেখানে খালেদা জিয়াও হিংসা বিভেদ ভুলে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। নেতাকর্মীরা জানান বর্ধিত সভার পর থেকে দলের নির্বাচন ঘিরে তৎপরতা শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার তারা ইফতারি রাজনীতিতে বেশি মনোননিবেশ করছেন। দলের তৃণমুল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ইফতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক কর্মসুচীতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে।
এদিকে শুধু বিএনপি নয়। অন্য দলগুলোও ইফতার কেন্দ্রিও রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে। এমনকি রাজনীতিতে কোনঠাসা হয়ে পড়া জাতীয় পার্টিও ইফতার নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। নবগঠিত এনসিপিও ইফতার কেন্দ্রিক রাজনৈতিক কর্মসুচীর ঘোষণা করেছে। তারা জানিয়েছে পুরো রজমান মাস জুড়েই তারা গণইফতার করাবে। দলগঠনের পর থেকেব তারা রাজনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে ইতোমধ্যে দলটি ঘোষণা করেছে তারা কোন জোটে যাবে না। তিনশ’ আসনে প্রার্থী দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে। দল ঘোষণা করার পর থেকে তারা এখন রজমানে মাসে ইফতার কেন্দ্রিক কর্মসুচীতে ব্যস্ত সময় পার করছে।
বিএনপির কয়েক নেতা জানান, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলের লক্ষ্য নেতাকর্মীকে সক্রিয় ও ঐক্যবদ্ধ রাখা। ইফতারের মাধ্যমে এ কাজটি করা সহজ। এবারও গুম-খুনের শিকার নেতাকর্মীর পরিবারকে রোজার প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও ঈদ উপহার পাঠানো হবে। এ তালিকায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদেরও রেখেছেন বিএনপির হাইকমান্ড।
বিএনপির সূত্র জানায়, রাজনীতিবিদদের সম্মানে আয়োজিত ইফতারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি শেখ হাসিনার পতনের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টিকেও (এনসিপি) আমন্ত্রণ জানাবে বিএনপি। একটা সময় ইফতার মাহফিলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকতেন। কিন্তু কারাবন্দি থাকায় তিনি বিগত ছয় বছর তা পারেননি।
গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মুক্তি পেয়েছেন খালেদা জিয়া। বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডনে ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আছেন। সেখানেই সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন বলে জানা গেছে।
গত বছর ৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এর পর সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি তৃণমূলে সহস্রাধিক ইফতার মাহফিল আয়োজন করে। কিন্তু বেশির ভাগ কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীনরা হামলা ও বাধা দিয়েছিল। এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। নেতাকর্মীরা মনে করছেন, এবার নির্বিঘ্নে রোজা ও ঈদ উদযাপন করতে পারবেন তারা। বাড়তি হিসেবে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের
মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এলাকায় অবস্থান নিয়ে গণসংযোগ করবেন।
ইফতার ও ঈদের মধ্য দিয়ে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নেতাদের বন্ধন আরও দৃঢ় হবে। এ বিষয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘রোজায় মানুষ ধর্মকর্ম নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন। বিগত দিনে বিএনপি নেতাকর্মীকে ইফতার আয়োজনে ফ্যাসিস্টরা অলিখিত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। যেখানে আমরা ইফতার আয়োজন করতাম, সেখানেই বাধা দেওয়া হতো। শেখ হাসিনার পতনের পর পরিস্থিতি ভিন্ন। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত এবার ইফতার আয়োজন করা হবে। নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও এ কর্মসূচিতে যুক্ত করা হবে।
আ.দৈ/আরএস