সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫,
২৭ শ্রাবণ ১৪৩২
ই-পেপার

সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫
সারাদেশ
টক-মিষ্টি জিলাপি, মাসে বিক্রি ২০ লাখ
এনায়েতুর রহমান, ময়মনসিংহ
Publish: Thursday, 6 March, 2025, 7:14 PM  (ভিজিট : 164)

ময়মনসিংহে পবিত্র রমজান মাসে ইফতারে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ঐতিহ্যবাহী টক-মিষ্টি জিলাপি। যতই দিন যাচ্ছে, ততই মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই জিলাপি। প্রতিদিন প্রায় লাখ টাকার টক-মিষ্টি জিলাপি বিক্রি হয়। রমজান মাসে অন্তত ২০ লাখ টাকার জিলাপি বিক্রি হবে।

দুপুর দুইটার দিকে নগরীর জিলা স্কুল মোড়ের জাকির হোসেনের 'মেহেরবান' হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, টক মিষ্টি জিলাপি কিনতে মানুষের ভীড় জমেছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে টক-মিষ্টি স্বাদের জিলাপির স্বাদ নিতে অনেকে এসেছেন। জেলার বাইরে থেকে এসেছিলেন, এমন অনেক ব্যক্তিও জিলাপি কিনে নিচ্ছেন। অথচ, তখন অন্যান্য ইফতারের দোকানগুলো মাত্র সাজিয়ে বসতে শুরু করেছে।

জাকির হোসেন জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার বালিয়ান ইউনিয়নের তেলিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট জাকিরের স্কুলের বারান্দায় হাঁটার সৌভাগ্য হয়নি। অভাবের তাড়নায় ১৯৭৩ সালে শহরে এসে মইনুল হোসেনের চায়ের দোকানে কাজ নেন।

স্থানীয়রা জানান, সময়ের ব্যবধানে শহরজুড়ে বহু জিলাপির দোকান গড়ে উঠেছে। রমজান এলে বিভিন্ন জমকালো রেস্তোরাঁসহ অলিগলিতে ইফতারসামগ্রী বিক্রি করা হয়। অনেকে মনের মাধুরি মিশিয়ে তৈরি করেন টক-মিষ্টি জিলাপি। কিন্তু, সেটি জাকির হোসেনের তৈরি টক-মিষ্টি জিলাপির সঙ্গে টেক্কা দিতে পারে না। ফলে এখনো দেদারসে বিক্রি হচ্ছে ঐতিহ্যের এই জিলাপি।

জিলাস্কুল মোড় থেকে জিলাপি কিনতে আসা মাহফুজ বলেন, ২০ থেকে ২৫ বছর যাবত এই জিলাপি কিনে খাচ্ছি। অন্য সব জিলাপি থেকে এ জিলাপির স্বাদ আলাদা। জিলাপি চিবোতে শুরু করলেই পাওয়া যায় মচমচে, রসালো, টক-মিষ্টি একটা স্বাদ। যা খুবই ভালো লাগে। ফলে রমজান এলে এই দোকান থেকে জিলাপি নিয়ে যাই। পরিবারের সবাই একসঙ্গে ইফতারে মজা করে খাওয়া হয়।

বাপ্পী মজুমদার জেলার গৌরীপুর উপজেলা থেকে শহরের কাচিঝুলি এলাকায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। বাপ্পী বলেন, বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম। বাপ-দাদারাও বলে জেলার মধ্যে এই জিলাপি বিখ্যাত। এর আগে কয়েকবার এই দোকানে বসে জিলাপি খেয়েছি। অন্য জিলাপির চেয়ে স্বাদে ভিন্নতা রয়েছে।

১৯৭৪ সালে শহরে এসে চায়ের দোকানে কাজ নেন জাকির হোসেন। এক বছর পর নগরীর জিলা স্কুল মোড়ের হোটেল মেহেরবানে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। তখন দোকানটির মালিক ছিলেন নগরীর বাসিন্দা মইনুল হোসেন। ১৯৯৩ সালের দিকে তিনি হোটেল চালাতে না পেরে জাকির হোসেনকে দায়িত্ব দেন। পরের বছর টক-মিষ্টি জিলাপি তৈরি করেন তিনি। একদিন বৃষ্টির কারণে দোকানে ক্রেতা না আসায় জিলাপির জন্য প্রস্তুত করা ময়দা আর চিনি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়। পরে তিনি ময়দার সঙ্গে তেঁতুলের টক আর মাসকলাই মিশিয়ে তৈরি করেন বিশেষ ধরনের জিলাপি। ক্রেতার অভাবে দোকানের অন্য কর্মচারীদের খেতে দেন সেই জিলাপি।

সেগুলো খেয়ে অনন্য স্বাদ পাওয়া যায়। পরের দিনও এভাবেই জিলাপি বানিয়ে বিক্রি করলে ভোক্তারা জিলাপির প্রশংসা করেন। ধীরে ধীরে এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যা এখনও চলছে। পরে ২০১২ সালে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ও আরও ভাল মানের টক মিষ্টি জিলাপি তৈরী করতে ঘি ব্যবহার করা হয় এবং এতে ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

প্রথম যেদিন জাকির হোসেন জিলাপি তৈরী করেছিলেন, তখন ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে উপকরণের দাম। ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে বিখ্যাত এই জিলাপির দামও। বর্তমানে টক-মিষ্টি জিলাপি ২২০, আমৃত্তি টক-মিষ্টি জিলাপি ২৬০ ও ঘিয়ে ভাজা স্পেশাল টক-মিষ্টি জিলাপি ৩৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ইফতারি হিসেবে বেগুনি ১০, আলুর চপ ১০, ডিম চপ ১০, চিকেন চপ ২০, শাকের বড়া ৫ টাকা পিস ও পিয়াজু ৫ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া নিমকি ২৪০, বুন্দিয়া ২০০, ছোলা বুট ২০০ ও ঘুগনি ১৬০ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

জাকির হোসেনের ছেলে আশিকুর রহমান বলেন, রমজান এলে জিলাপি বিক্রির ধুম পড়ে। বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী স্পেশাল টক মিষ্টি জিলাপি এক-চেটিয়া বিক্রি হয়। ক্রেতাদের চাপ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। দোকানে ১৫ জন কর্মচারী কাজ করছেন। দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে থেকে জিলাপি কিনে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

বছরের অন্যান্য সময় প্রতিদিন প্রায় দুই মণ বিক্রি হলেও শুধু রমজান মাসে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ মণের বেশি জিলাপি বিক্রি হয়। এরমধ্যে প্রায় সবাই কেনেন ঘিয়ে ভাজা স্পেশাল টক-মিষ্টি জিলাপি। এই জিলাপির প্রতি কেজির মূল্য ৩৬০ টাকা। রোজার প্রথমদিন প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার টাকার জিলাপি বিক্রি হয়েছে। পুরো রমজানে ২০ লক্ষ টাকার জিলাপি বিক্রি হবে বলে আশা করছি।

চালের গুড়া, মাষকলাই ও ময়দা গুলিয়ে পেষ্ট তৈরি করা হয়। কড়াইয়ের গরম তেলে ভেঁজে জিলাপির আকৃতি দেয় কারিগর। ভেঁজে জিলাপিগুলো গাঢ় বাদামি রং করে ভেজে নেয়া হয়। অপর একটি পাত্রে চিনি, পানি, দারুচিনি ও এলাচ দিয়ে সিরা তৈরি করা হয়। জিলাপি ভেজে সঙ্গে সঙ্গেই গরম সিরায় ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর বেশ খানিকক্ষণ জিলাপি সিরার মধ্যেই রেখে দেয়া হয় যাতে জিলাপিগুলোর ভেতরে সিরা প্রবেশ করে। 
এভাবেই তৈরি হয় টক জিলাপি।

জাকির হোসেন বলেন, টক-মিষ্টি জিলাপির প্রধান উপকরণ হলো মাসকলাই ডাল, ময়দা, চালের গুঁড়ার সঙ্গে তেঁতুল। প্রতিবারই জিলাপি ভাজতে নতুন তেল ব্যবহার করা হয়। প্রতিদিন দুপুর থেকেই গরম কড়াই থেকে ভাজা জিলাপি টেবিলের ডালায় সাজানো হয় থরে থরে। ইফতারের আগে নিমিষেই খালি হয়ে যায় জিলাপির ডালা।

তিনি বলেন, আজানের আগ পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড়ের কারণে অনেকে সিরিয়াল না পেয়ে জিলাপি কিনতে পারেন না। তারা আশপাশের বিভিন্ন দোকান থেকে কিনে বাড়ি ফেরেন। সুশৃঙ্খলভাবে বিক্রি করতে আমাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। স্বাদ ধরে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

আ.দৈ/আরএস

   বিষয়:  টক-মিষ্টি   জিলাপি   মাসে   বিক্রি   ২০ লাখ   
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

সরকারি চাকুরিজীবীদের কাজে ফাঁকি দেয়ার সযোগ নেই: দুদক চেয়ারম্যান
জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিসের অনুমোদন বাতিলের আল্টিমেটাম
সেই আনিসার পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই
হারুন-বিপ্লবসহ পলাতক ৪০ পুলিশের পদক প্রত্যাহার
‘নাটক কম করো পিও’, তিশার উদ্দেশে বললেন শাওন
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

আটলা গ্রামের তরুণ যুবকদের উদ্যোগে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা
পানির দাবিতে পল্লবীতে কালশী রাস্তা অবরোধ বিহারী ক্যাম্পবাসীর
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কমিটি, আহ্বায়ক- কিবরিয়া, সদস্য সচিব- ইমরান
অর্থপাচার মামলায় ১০ বছরের সাজা থেকে খালাস পেলেন জি কে শামীম
আবাসিক হোটেলে প্রেমিকের সঙ্গে রিয়া মনি, ভিডিও ফাঁস করলেন হিরো আলম
সারাদেশ- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik@gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝