বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর মানিকগঞ্জের সিংগাইরে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতা কর্মীরা আত্মগোপনে চলে যায়। তৃনমুল পর্যায়ের নেতা-কর্মী সমর্থকরা এলাকায় অবস্থান করায় থানা-পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের শিকার হচ্ছেন। থানায় রেকর্ড হওয়া একাধিক মামলাকে পুঁজি করে পুলিশ হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী,গণ -অভ্যুত্থান পরবর্তী আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে সিংগাইর থানায় একটি হত্যা মামলাসহ ৪ টি মামলা দায়ের হয়। এতে স্থানীয় সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ ২২৫ জনের নাম উল্লেখপূর্বক হাজারের ওপরে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। গত ৫ আগস্ট বিকেলে ধল্লা পুলিশ ক্যাম্প ভাঙ্চুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনায় থানায় মামলা হয়।
এ ছাড়া বাকি মামলার ঘটনাগুলো আওয়ামী শাসন আমলের হলেও নথিভুক্ত হয় অভ্যুত্থান পরবর্তী। তার মধ্যে ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি গোবিন্দলে সংঘটিত ফোর মার্ডার মামলাটি চাঞ্চল্যকর।
সূত্র জানায়,জুলাই বিপ্লব থেকে শুরু হওয়া ডেভিল হান্ট অভিযানের আগ পর্যন্ত পুলিশ ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকাংশই এজাহারের বাইরের। মামলায় অজ্ঞাত আসামী হিসেবে আটক করা হয় তাদের। এজাহারে তাদের নাম না থাকলেও আটকের পর শুধু আওয়ামীলীগের কর্মী সমর্থক হওয়ায় পুলিশ তাদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবী করেন। দেয়া হয় হত্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি। চাহিদামতো টাকা দিলেই ফাঁড়ি ভাঙ্চুর কিংবা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। না দিলে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়। কঠোর ভাষা ব্যবহার করে কোর্টে আবেদন করা হয় রিমান্ডের।
ভুক্তভোগী একাধিক পরিবারের সঙ্গে কথা বললে বেরিয়ে আসে পুলিশের গ্রেপ্তার ও জমজমাট অর্থ বানিজ্যের চাঞ্চল্যকর তথ্য। এর মধ্যে উপজেলার মাধবপুরের সানোয়ার হোসেনের কাছ থেকে ২ লাখ,চর লক্ষ্মীপুর পোকা সাঈদের ১ লাখ দশ হাজার, আজিমপুরের শাহজাহান মীরের ১ লাখ,নয়াডাঙ্গী আতাউল কন্ট্রাক্টরের ১ লাখ, পূর্ব বান্দাইল ফরমান আলী খানের কাছ থেকে ১ লাখ,জামির্ত্তা রামকান্তপুরের আব্দুস ছামাদের ৭০ হাজার, কিটিংচরের জসিম উদ্দিন পাখির ৬০ হাজার,কাংশার ইসমাইলের কাছ থেকে ৫০ হাজার,আজিমপুর গোলাম রসুলের ৫০ হাজার,গোলাইডাঙ্গা-বাস্তার তারেকের ৫০ হাজার,জামশার সিদ্দিক মোল্লার ৫০ হাজার,তালেবপুর হুমায়ুন মেম্বারের কাছ থেকে ৫০ হাজার,চর লক্ষীপুর জিন্নতের ২৫ হাজার,আজিমপুরের রশিদ মোল্লা থেকে ৩৪ হাজার ও আলমের কাছ থেকে ৩২ হাজার,চর আজিমপুর সামছুলের ৩০ হাজার, জয়মন্টপ মঞ্জুরুল ইসলামের ৩০ হাজার,ইরতা শাহীন বক্সের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ছাড়াও সোহেল,নজরুল ভেন্ডার, আমজাদ হোসেন, রিয়াদ মেম্বারসহ প্রায় সকলের কাছ থেকেই টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া আসামীরা জেল-হাজতে থাকাবস্থায় তাদের পরিবারের কাছ থেকে পুনরায় টাকা দাবী করার অভিযোগ ওঠেছে। চাহিদামতো টাকা না পেলে হাজতি আসামীদের শ্যোন আরেস্ট দেখানোর তথ্য মিলেছে।
জামির্ত্তা ইউনিয়নের আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি খালিদ মাহমুদ খোকনের পরিবার অভিযোগ করে বলেন,খোকনকে গ্রেপ্তারের পর ৫ লাখ টাকা দাবী করা হয়। ওই টাকা না দেয়ায় তাকে গোবিন্দলের হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ড চাওয়া হয়। বর্তমানে সে জামিনে এসে পুলিশের ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছে বলে জানা গেছে । অপরদিকে,মামলার এজাহারভুক্ত নেতাকর্মী থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সিংগাইর থানার পুলিশ উপ-পরিদর্শক মো.মাসুদুর রহমান জানান এটা সম্পূর্ন ভিত্তিহীন। এ রকম কোন তথ্য প্রমান কেউ দিতে পারলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নিবে সেটাই মেনে নিবো।
জুলাই বিপ্লব পরবর্তী ১২ সেপ্টেম্বর সিংগাইর থানার অফিসার ইনচার্জ জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর এ থানায় যোগদান করেন। আর ওসির সেকেন্ড ইন- কমান্ড হিসেবে কাজ করেন থানার দুই এসআই আবদুল মুত্তালিব ও মাসুদুর রহমান। ইতিমধ্যেই এদের থানা থেকে বদলির আদেশ হয়েছে। মুত্তালিব নতুন কর্মস্থলে চলে গেলেও মাসুদ এখনো থানা এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর আর্থিক ক্ষতিসহ হয়রানির দাগ কাটছে না বলেও জানান তারা।
সিংগাইর থানার অফিসার ইনচার্জ জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর টাকা গ্রহণ ও হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ ধরনের কোনো বিষয় কাম্য না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার ( সিংগাইর সার্কেল) নাজমুল হাসান বলেন,অভিযোগ গুরুতর তবে কোনো লিখিত পাইনি। তারপরেও বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আ. দৈ. /কাশেম/রিপন