নানা চ্যালেঞ্জের মুখে বিএনপি। দলে এবং দলের বাইরে একাধিক বিষয় চিন্তায় ফেলেছে দলটিকে। তবে ১৮ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি এসব নিয়ে খুব একটা বিচলিত নয়। এই ১৮ বছরে তারা অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এখানে এসেছে। এগুলো কাটিয়ে উঠতে দলটি আরো বেশি কৌশলী হচ্ছে। তাদের কর্মসূচিগুলোয় আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিবর্তন এসেছে। যেগুলো মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে এক সমাবেশে ভার্চুয়াল বক্তব্যে তিনি বলেছেন, অন্যায়-অনিয়ম আর অরাজকতার বিরুদ্ধে গণবিস্ফোরণে মাফিয়া চক্রের প্রধান দেশ ছেড়ে পালানোর পর তাদের শাসন-শোষণের অবসান ঘটেছে। পতিত স্বৈরাচারের পলায়নের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক দেশ গড়ার পথে প্রধান বাধা দূর হয়েছে। তবে বাধা দূর হলেও মাফিয়া চক্রের রেখে যাওয়া ১৫ বছরের জঞ্জাল দূর হয়নি।
এই মুহুর্তে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা সকল মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি, দল গোছানো, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় কুটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো, জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি, তৃণমূলের বিরোধ নিরসনসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে বসে বেশ কয়েকটি জেলার সঙ্গে ভার্চুয়ালি সমাবেশ করেছেন। এই সমাবেশের মধ্যেও একটি জেলায় নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
শেখ হাসিনার পতনের তিন দিন পর শপথ নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপে সন্তুষ্ট হতে পারেনি দলটি। তবুও তাদের কোনো বিষয়ে কোনো দ্বিমত প্রকাশ না করে সব ধরনের সহযোগিতা করবে দলটি। এই সরকারে যাতে ব্যর্থ না হয় সেজন্য বিএনপির পক্ষ থেকে সব ধরনের ইতিবাচক ভূমিকা থাকবে। এদিকে দলের তৃনমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে থাকা গ্রুপিং এবং নানা কর্মকান্ডে বিব্রত দলের হাই কমান্ড।
ছাত্র জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর পরই বিএনপির পালে সুবাতাস লাগতে আর বাঁধা থাকার কথা না। কিন্তু দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে দখল, চাদা, আধিপত্য নিয়ে দন্দে জড়িয়ে পড়ায় বিব্রত দলের হাইকমান্ড। তৃণমূলে বিএনপির কর্মকান্ডে কিছুটা হলেও ইমেজ সংকটে পড়ছে বলে মনে করছেন অনেকে। আগে যেখান থেকে আওয়ামী লীগ চাঁদা তুলতো, এখন সেখান থেকে বিএনপির লোকজন চাঁদা তোলে। চাঁদা তোলা বন্ধ হয়নি। শুধু মানুষ বদলেছে। যে বিষয়টি ভালো ভাবে দেখছে না সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন- তারা আওয়ামী লীগের হাত থেকে মুক্তি চেয়েছিলেন মানে যে সেগুলো বিএনপির দখলে চলে যাবে তা নয়।
তৃণমূলে বিভিন্ন জেলা উপজেলা এমন কি ইউনিয়ন পর্যায়ে দখল, চাঁদা ও আধিপত্য নিয়ে ঘটছে সংঘর্ষের মত ঘটনা। হচ্ছে প্রাণহানীও । যদিও এসব ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে কড়া নির্দেশনা রয়েছে। জেলা পর্যায়ে তালিকাও হচ্ছে- কারা সহিংসতা, দখল চাঁদাসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত। ইতোমধ্যে প্রমাণ পাওয়া সাপেক্ষে অনেককে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে কারো কারো সদস্য পদও ।
নেতারা বলছেন, অন্তর্বতী সরকার তো আর সব সময় ক্ষমতায় থাকবে না। তারা একটা পর্যায়ে নিয়ে তারপর নির্বাচন দিবে। তারপর কোনো রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসবে। সেজন্য বিএনপি এই সরকারকে যথেষ্ট সময় দিবে। আর এই সময়ে তারা তাদের যে সাংগঠনিক দূর্বলতা আছে সেগুলো ঠিক করে দলকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করবে। তবে তারা আশাবাদী যে নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরিতে সরকার খুব বেশি সময়ক্ষেপন করবে না।
সম্প্রতি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্তর্র্বতী সরকারকে সময়-সুযোগ দিতে বিএনপি প্রস্তুত। একইসঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব সংস্কারের কাজ শেষ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্তর্র্বতী সরকার নির্বাচনের দিকে যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের তৎপরতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তৎপরতা পর্যাবেক্ষণ করছে বিএনপি। তবে একটি দলকেই তারা বেশি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বলে জানা শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা। এখনো রাষ্টীয় বিভিন্ন পদে বসে আছে আওয়ামী সরকারের মদদ পুষ্টরা। যাদের এখনো সেভাবে সরানো হচ্ছে না। এটাও বিএপির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। বিএনপির একাধিক নেতা সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে আওয়ামী সরকারের দোসরদের সরানো দাবি জানিয়েছেন।
সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক দলীয় সমাবেশে ভার্চুয়াল বক্তব্যে বলেছেন, দেশের জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হলে, তাদের সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে হলে জনগণের সরকার দরকার। জনগণের অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের ঠিকই পতন হয়েছে; কিন্তু আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য, অর্থাৎ জনগণের রাজনৈতিক অধিকার এখনও অর্জিত হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এতে টুকটাক কিছু সমস্যা থাকবে। তবে সেগুলো উত্তোরণের পথ বের করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া হবে। এখন যে ধরনের কর্মসূচি বিএনপি দিচ্ছে আপনারা দেখবেন অনেক পরিবর্তন এসেছে। যে সকল চ্যালেঞ্জ আছে এগুলো মোকাবেলা করে বিএনপি এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আ. দৈ. /কাশেম/ আরিফ