রাজধানীর উত্তরা এলাকায় মেহেবুল হাসান (৩৭) ও তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার ইপ্তি (২৮) কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি হামলার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জড়িত পুরো চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মোঃ মোবারক হোসেন (২৫), রবি রায় (২২), মো. আলফাজ মিয়া ওরফে শিশির (২২), সজীব (২০) ও মেহেদী হাসান সাইফ (২৪)।
বুধবার মিন্টো রোডের ডিএমপি, মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি উত্তরা বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনার রওনক জাহান জানান, সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাত আনুমানিক সোয়া ৯টায় উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ সংবাদ পায় উত্তরা ০৭ নং সেক্টরের ০৯ নং রোডের বাসা নং-১০ এর সামনে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এক দম্পতিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের একটি টহল টিম তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জনগণের সহায়তায় ঘটনায় জড়িত মোঃ মোবারক হোসেন ও রবি রায়কে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় ভিকটিম নাসরিন আক্তার ইপ্তি বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সোমবার আমির কমপ্লেক্স থেকে কেনাকাটা করে বাসায় ফেরার সময় উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ০৭ নং সেক্টরের ০৯ নং রোডের বাসা নং-১০ এর সামনে পৌঁছে। এসময় উক্ত স্থানে তিন ব্যক্তি দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে বিকট শব্দ করে দ্রুত গতিতে এলোমেলোভাবে চালিয়ে যাওয়ার সময় একটি মোটরসাইকেল সামনে থাকা একটি রিকশাকে ধাক্কা দেয়। সে সময় রিকশায় চার বছরের একটি শিশু তার মায়ের সাথে ছিল। শিশুটির বাবা রিকশা থেকে নেমে মোটরসাইকেল চালক গ্রেফতারকৃত আসামি মোঃ মোবারক হোসেনের সাথে বাকবিতন্ডা শুরু করে। ঐ সময় রিকশার পিছনে থাকা ভিকটিম দম্পতি তাদের ঝামেলা করতে নিষেধ করে। সেসময় রিকশার যাত্রীরা চলে যায়। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলে থাকা তিনজন মেহেবুল হাসানের সাথে তর্ক শুরু করে এবং এক পর্যায়ে তাকে মারপিট শুরু করে। এ সময় তারা বলতে থাকে “আমাদের চিনিস? আমরা কে?”। সে সময় ভিকটিম দম্পতি আশেপাশের লোকজনের সহযোগিতায় আক্রমণকারী একজনকে ধরে ফেলে ও তার মোটরসাইকেল আটক করে। এ সময় ফোন করে সে তার আরও কয়েকজন সহযোগীদের ডেকে নিয়ে আসে। তারা দেশীয় অস্ত্র রামদাসহ ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত জনসাধারণের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে রামদা দিয়ে মেহেবুল হাসানকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এ সময় নাসরিন আক্তার ইপ্তি তার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাকেও রামদা দিয়ে আঘাত করে। এতে উক্ত দম্পতি শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয়।
সংবাদ পেয়ে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের টহল টিম দ্রুততম সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জনগণের সহায়তায় মোবারক হোসেন ও রবি রায়কে গ্রেপ্তাতর করে। পুলিশ আহত দম্পতিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে তারা সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তিনি আরো জানান, উত্তরা পশ্চিম থানার একটি চৌকস টিম গতকাল মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি ) বিকেল ৪টায় আব্দুল্লাহপুর পশ্চিম পাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে রামদা দিয়ে ভিকটিমদের কুপিয়ে আহত করা আসামি আলফাজ মিয়া ওরফে শিশিরকে গ্রেপ্তার করে।আলফাজের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ০২টায় গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকা থেকে সজিবকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভিকটিমদের এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করা অপর এক আসামি মেহেদী হাসান সাঈফকে গাজীপুরের টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন মাজার বস্তি এলাকা থেকে আজ ভোর ৫টায় গ্রেপ্তার করা হয়। সাঈফের হেফাজত থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল ও ঘটনার সময় তার পরিহিত একটি শার্ট জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আলফাজ মিয়া ওরফে শিশির ও মেহেদী হাসান সাইফের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তুরাগ নদীর পাড় থেকে আজ বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ টার সময় ঘটনায় ব্যবহৃত দুটি রামদা উদ্ধার করা হয় বলে জানান এই পুলিশ কর্তা।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান পুলিশের উপ-কমিশনার রওনক জাহান ।
এমআই