মোহাম্মদপুর, রাজধানী ঢাকার সবচাইতে আলোচিত ক্রাইম জোন। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এই এলাকাটি সন্ত্রাসীদের অভারন্যে পরিণত হয়। যার অন্যতম গ্যাং হিসেবে আখ্যা পায় ‘কব্জিকাটা গ্রুপ’। এক যুবকের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে তার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় গ্রুপটি। যার প্রধান একসময়কার পরিবহন শ্রমিক মোঃ আনোয়ার। নিজেকে জাহির করতে গ্রুপের সদস্যরা তার নামের আগে কখনো জুড়ে দেয় শুটার আনোয়ার কখনো আবার কব্জিকাটা আনোয়ার। বয়স মাত্র ৩৬ বছর।
আলোচিত সেই সন্ত্রাসী ‘কব্জিকাটা গ্রুপ’ এর প্রধান মোঃ আনোয়ার@ শুটার আনোয়ার@ কব্জিকাটা আনোয়ার (৩৬)কে কেরানীগঞ্জ থেকে ০২ সহযোগীসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব-২।
র্যাবের অভিযানে আনোয়ারের সাথে আটক হয় তার গ্যাং এর সদস্য মোঃ ইমন (২০) এবং মোঃ ফরিদ (২৭)।
ছবি: র্যাব মিডিয়া উইং
মোঃ ইমন (২০) এবং মোঃ ফরিদ (২৭)
আজ ১৮ ফেব্রেুয়ারি কারওয়ান বাজারের র্যাব সদর দপ্তরের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব দাবি করে গতকাল সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি অভিযান চালিয়ে র্যাব-২ তাদের গ্রেপ্তার করেছে। এসময় তাদের দখল থেকে উদ্ধার করা হয় দেশীয় অস্ত্র সামুরাই ১টি, ছুরি ২টি, গাঁজা ৮ কেজিসহ অন্যান্য আলামত। জব্দ করা হয় ১ টি প্রাইভেট কার ও ১টি হাত ঘড়ি। গ্রেফতারকৃত আনোয়ারের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক হত্যা মামলা, হত্যা চেষ্টা, চাঁদাবাজি, অস্ত্র মামলা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাসহ বিভিন্ন আইনে অসংখ্য মামলা রয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদেআনোয়ার জানায়, বিগত ২০০৫ সালে আনোয়ার জীবিকার সন্ধানে বাগেরহাট জেলা হতে ঢাকায় তার বাবার কাছে চলে আসে। ঢাকায় এসে বিশুদ্ধ খাবার পানি পরিবহন করত। প্রথম পর্যায়ে আনোয়ার অপরাধ জগতে ছিনতাই ও বাস স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি শুরু করলেও বিগত ২০২৪ সালে মানুষের কব্জি কেটে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে নিজেকে কব্জিকাটা গ্রুপের প্রধান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে এবং কব্জি কাটা ভিডিওটি টিকটক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। উক্ত ঘটনায় আনোয়ার ও তার সহযোগীদের কুখ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পরে। পরবর্তীতে বিষয়টি আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে আসলে ধারাবাহিক অভিযানের মুখে বাহিনীর অন্যতম সদস্য ভাগ্নে বিল্লালসহ আরো অনেকে গ্রেফতার হলে আনোয়ার নিজের পরিচয় পাল্টে আত্মগোপনে থেকে কব্জিকাটা গ্রুপের নামে বাহিনী গড়ে তোলে। আত্ম গোপনে থেকে সে একাধারে নিয়ন্ত্রণ করতো মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান, নবী নগর হাউজিং, চন্দ্রিমা হাউজিং ও আদাবরের শ্যামলী হাউজিং, শেখেরটেক, নবোদয় হাউজিং এলাকায় হত্যা, অস্ত্র-গুলি, মাদক কেনাবেচা, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ।
ছবি: সংগৃহীত
‘কব্জি কাঁটা’ আনোয়ার
কিশোরদের মাদক, অস্ত্র ও অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে ব্যবহার করে উপার্জিত টাকায় বিপুল পরিমান অবৈধ সম্পদের মালিক বনে যায় সে।
সে জানায়, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে বাহিনীর সদস্যরা প্রথমে টার্গেটের উপড় হামলা চালাতো। এসময় আরেক গ্রুপ স্তার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের আদলে যানজট নিয়ন্ত্রণের নাটক সাজিয়েরাস্তায় যানজট তৈরি করতো। সিসি ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলা ও নজরদারির কাজ করতো আরেক গ্রুপ। মূল গ্রুপটি ফিল্মি স্টাইলে ভুক্তভোগীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে হাতের কব্জি কেটে সবার সামনে দিয়ে হেঁটে চলে যেতো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে গ্রেফতারকৃত আনোয়ারের হাতেই ৭/৮ জন হামলার শিকার হয়েছেন। কেউ হারিয়েছেন পা, কেউ হাত আবার কেউ পঙ্গু হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। তার হামলার শিকার ব্যক্তিদের বেশিরভাগই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। তার ভয়ে মামলাও করেন না অনেকে। আবার কেউ মামলা করলে তাকে নানা ভয়ভীতি দেখায় আনোয়ারের কব্জিকাটা গ্রুপের সদস্যরা।
আনোয়ারের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে প্রথম আদিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংগঠিত সংঘর্ষে আদাবর থানায় মামলা দায়ের হয়। গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যা চেষ্টা, মারপিট, চাঁদাবাজি, জোরপূর্বক ভূমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে অসংখ্য মামলা হলেও জামিনে মুক্ত হয়েই সে পুনরায় অন্ধকার জগতে ফিরে আসে এবং পূর্বের তুলনায় অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অ