জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া- পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে ১৪৪ ধারা করেছে উপজেলা প্রশাসন।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩টা থেকে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা পর্যন্ত ওই ইউনিয়নের পুরো এলাকাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
এদিন বিকালে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইফতেকার রহমানের সই করা এক অফিস আদেশে ১৪৪ ধারা জারির বিষয়টি জানানো হয়।
অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, পুনট বাসস্ট্যান্ড এলাকাসহ সমগ্র পুনট ইউনিয়নে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পক্ষ থেকে পুনট ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ও জনসাধারণের জানমাল ক্ষয়-ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে পুনট বাসস্ট্যান্ড এলাকাসহ সমগ্র পুনট ইউনিয়ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
স্থানীয় ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পুনট ইউনিয়নের বিএনপিতে বিভক্ত রয়েছে। এ কারণে পুনট ইউনিয়নে বিএনপির প্রধান কার্যালয় ছাড়া আরও দুটি কার্যালয় রয়েছে। কালাই থানা বিএনপির আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন পুনট ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের কমিটি গঠনের জন্য আজ রবিবার প্রস্তুতি নেন। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ রেখে এক তরফা পকেট কমিটি দেওয়া হবে বলে অভিযোগ তোলেন আরেকটি পক্ষ জেলা বিএনপির সদস্য আনিছুর রহমান ও তার লোকজন। তারা অগণতান্ত্রিক পন্থায় কমিটি গঠন যেন না করতে পারে সেজন্য তা প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। এ নিয়ে পুনট ইউনিয়নে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। আনিছুর রহমান ও তার লোকজন কালাই পৌর শহর থেকে দলবল নিয়ে পুনট অভিমুখে রওনা দেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুনট বাজারে অবস্থান নেন। এ সময় অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে বিকাল ৩টায় পুনট ইউনিয়ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। ১৪৪ ধারা জারির কথা জানতে পেরে তাৎক্ষণিক ৯টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করেন। ইব্রাহিম হোসেন পক্ষের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করে পুনট বাজারে অবস্থিত বিএনপির আরেকটি পক্ষের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে ভাঙচুর করে। ওই কার্যালয়ে পুনট ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান বসতেন। এ সময় সেখানে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিএনপির দুই পক্ষের লোকজনের কাছে লাঠি-সোটা, ধারাল অস্ত্র ও পেট্রল বোমা ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে।
কালাই থানা বিএনপির আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘জেলা বিএনপি ও কালাই থানা বিএনপির সিদ্ধান্তে কালাইয়ের পুনট ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করার জন্য আজ রবিবার দিন নির্ধারণ করা হয়। এক, দুই ও তিন নম্বর ওয়ার্ড কমিটির জন্য ভূগোল, চার, পাঁচ ও ছয় নম্বর ওয়ার্ডের জন্য পুনট এবং সাত, আট ও নয় নম্বর ওয়ার্ডের জন্য পাঁচগ্রাম এলাকা নির্ধারণ করা হয়। যারা বিএনপির কমিটিতে যারা নাই তারা এই কমিটি গঠন প্রতিহত করতে চায়। আমরা দুপুর আড়াইটার দিকে কণ্ঠ ভোটের মাধ্যমে কমিটি প্রকাশ করেছি। বিকাল ৩টায় উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমি গতকাল শনিবার রাতে জানতে পারি পুনট ইউনিয়নের সবকটি ওয়ার্ডে কমিটি ঘোষণা করা হবে। আমরা চেয়েছিলাম কমিটিগুলো স্বচ্ছ হোক। কিন্তু তারা পকেট কমিটি করার চিন্তা নিয়েছে এবং আওয়ামী লীগের হাইব্রিডদের কমিটিতে নেওয়ার পাঁয়তারা করেছে। আজ আমরা দলবল নিয়ে তা প্রতিহত করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ ও সেনাবহিনী আমাদের যেতে দেননি। তারা আমাদের বসার একটি ব্যক্তিগত অফিস ভাঙচুর করেছে।’
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন বলেন, ‘পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সেনাবাহিনীও টহল দিচ্ছেন।’
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মো. ইফতেকার রহমান বলেন, ‘কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার কারণে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আজ বিকাল ৩টা থেকে আগামীকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে। এই সময়ে সকল প্রকার সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, মাইক ব্যবহার, সকল প্রকার আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্র বহন করাসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির অবস্থান অথবা চলা ফেরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
আ.দৈ/আরএস