নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার ৯নং দেওটি ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪০০ অসহায় পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন বাংলাদেশ আমেরিকান কালচারাল অর্গানাইজেশন অফ ডিসি (বাকোডিসি)। গত এক সপ্তাহ ধরে চলমান এই কার্যক্রমের আওতায় নবগ্রাম, নান্দিয়াপাড়া, আন্দিরপাড়, বাগপাঁচরা ও ডুমুরিয়া গ্রামের মানুষদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
৫০ বছরের ভয়াবহতম বন্যা:
সোনাইমুড়ী ও তার আশেপাশের এলাকাগুলোতে এবছরের বন্যাটি ছিল গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে পুরো অঞ্চল পানির নিচে চলে যায়। বহু পরিবার তাদের ঘরবাড়ি ও ফসল হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে। বাসস্থান হারানো পরিবারগুলোকে স্কুল, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছে। এতে এলাকার আর্থিক ও সামাজিক পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খাদ্য সংকট, পানিবাহিত রোগের প্রকোপ এবং কর্মসংস্থানের অভাবে মানুষ কঠিন সময় পার করছে।
প্রবাসীদের উদ্যোগে
এই দুর্যোগময় সময়ে প্রবাসে থাকা বাংলাদেশি আমেরিকানরা, বিশেষ করে বাকোডিসির সদস্যরা, তাদের এলাকা ও দেশের মানুষদের প্রতি দায়বদ্ধতা অনুভব করে এগিয়ে আসেন। প্রবাসে থেকেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সাহায্যে তহবিল সংগ্রহ করেন এবং বাকোডিসির ব্যানারে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে ছিল চাল, ডাল, তেল, লবণ, আলু ও শুকনো খাবার, যা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জীবিকা নির্বাহে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের নেতৃত্বে ছিলেন বাকোডিসির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদ লিটন, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন, কালচারাল সম্পাদক মোহাম্মদ ফারুক এবং সহ-অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ সোহরাব। তারা প্রবাস থেকে সমন্বয় করে স্থানীয়দের মাধ্যমে সঠিকভাবে ত্রাণ বিতরণ নিশ্চিত করেছেন। এছাড়াও, বাকোডিসির অন্যান্য সদস্যরাও এই কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
ত্রাণ বিতরণে স্থানীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন দেওটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দিদার হোসেন, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ইসমাইল হোসেন বাবুল, জামায়াত নেতা মোহাম্মদ সেলিম, বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন বিপু, এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দ শাকিল ও ফয়েজ। তাদের সক্রিয় সহযোগিতায় ত্রাণ কার্যক্রম দ্রুত এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়।
বন্যার ক্ষয়ক্ষতি এবং ত্রাণের প্রভাব:
বন্যার কারণে সোনাইমুড়ী উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। কৃষিজীবী মানুষদের ফসল ও জমি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। যাদের একমাত্র জীবিকা ছিল কৃষি, তারা এখন চরম সংকটে পড়েছেন। এর পাশাপাশি মাছচাষ, গবাদিপশু পালন এবং অন্যান্য স্থানীয় ব্যবসাও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বন্যার পানি সরে গেলেও মাটির উর্বরতা কমে যাওয়ায় পুনরায় ফসল উৎপাদনে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ত্রাণ হিসেবে দেওয়া খাদ্য সামগ্রী বন্যাদুর্গত পরিবারগুলোর জন্য তাৎক্ষণিক সহায়তা হিসেবে কাজ করছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই ত্রাণ সামগ্রী তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে উল্লেখযোগ্য সাহায্য করেছে। বাকোডিসির এই উদ্যোগ এলাকায় অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ বাকোডিসির এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং আশা করছে, ভবিষ্যতে আরও সহায়তা আসবে।
আ. দৈনিক / কাশেম/টি এ সেলিম