রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫,
১ আষাঢ় ১৪৩২
ই-পেপার

রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫
অর্থ-বাণিজ্য
রিসেল বিজনেস : সময়ের সেরা অয়ের উৎসঃ মাহতাব ফারাহী
মাহতাব ফারাহী
Publish: Saturday, 8 February, 2025, 6:04 PM  (ভিজিট : 181)

তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে আয় বা উপার্জনের উৎসধারায় আধুনিকতা ও বহুমাত্রিকতার ছোঁয়া লেগেছে অনেক আগেই। প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি নতুন নতুন ব্যবসা পদ্ধতি ও উপার্জন- উৎসের সন্ধান মিলছে প্রায় প্রতিদিনই।

এর মধ্যে রিসেল বিজনেস  সময়ের অন্যতম ইনোভেটিভ, আধুনিক ও সেরা আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে পৃথিবীব্যাপী।

লক্ষ লক্ষ মানুষ এই ব্যবসার মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন ইতোমধ্যেই। আরো অগণন  মানুষ দিন দিন ব্যবসাটির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন এর সহজতা, অধিকতর মুনাফা ও বিনিয়োগের নিরাপত্তার কারণে।

চলুন, জেনে নেয়া যাক, রিসেল বিজনেস মূলত কি, কিভাবে এটি এত সহজ, নিরাপদ ও অধিক লাভজনক এবং কেনই বা আপনি এই ব্যবসাটি করবেন? 


রিসেল বিজনেস কি?

ইংরেজি শব্দ Resell এর বাংলা অর্থ হলো পুনঃবিক্রয়। অর্থাৎ কোথাও থেকে কোন পণ্য ক্রয় করে পুন: বিক্রয় করাকে রিসেল বলা হয়। ই-কমার্সের পরিভাষাতেও রিসেল এর অনুরূপ ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। যেমন ই-কমার্স ভিত্তিক ওয়েবসাইট junglescout.com এ বলা হয়েছে, Reselling is an ecommerce business model where you obtain products from various sources and sell them directly to customers. 

অর্থাৎ রিসেল হল একটি ইকমার্স ব্যবসায়িক মডেল যেখানে আপনি বিভিন্ন উৎস থেকে পণ্য সংগ্রহ করে পরবর্তীতে সরাসরি গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করেন।

রিসেল বিজনেস কিভাবে তুলনামূলক সহজ, নিরাপদ ও অধিক লাভজনক?

আবহমানকাল থেকেই বাণিজ্যের বড় অংশজুড়ে বিরাজ করছে রিসেল সিস্টেম। প্রাচীন কালে এক দেশ থেকে পণ্য কিনে অন্য দেশে বিক্রি (রিসেল) করাকেই মূলত ব্যবসা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। সময়ের সাথে সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যের নানা ক্ষেত্র এবং নয়া দিগন্ত উন্মোচিত হলেও 'রিসেল' রয়ে গিয়েছে তার স্বীয় অবস্থানে। এখনো এক স্থান থেকে পণ্য ক্রয় করে অন্যত্র বিক্রীর ব্যবসা (রিসেল) তুমুল ব্যবহারিক ও জনপ্রিয়। তবে ব্যবসাটিতে বিনিয়োগের সহজতা, ঝুঁকিহীনতা ও তুলনামূলক অধিক মুনাফা অর্জনের বিষয়টি হাল আমলে এসে পরিপূর্ণতা পেয়েছে ই-কমার্সের কল্যাণে।

এখন আর পণ্য ক্রয় করার জন্য দেশে দেশে ঘুরে বেড়ানো বা সরেজমিনে হোলসেল মার্কেটে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস গুলোতেই আপনি পৃথিবীর সব দেশের, সব ধরণের পণ্য সরাসরি উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ক্রয় করতে পারছেন মাত্র কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমে,যা একেবারেই সিম্পল এবং সহজ। এরপর পণ্য পুনঃবিক্রয়ের (Resell) কথা ভাবছেন? আপনার জন্য ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস তো আছেই। ইতোমধ্যে কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমে যেমন পণ্য ক্রয় করেছেন, ঠিক তেমনি কয়েকটি ক্লিকের মাধ্যমেই আবার পণ্যগুলি সংশ্লিষ্ট ই-কমার্স কম্পানিতে বিক্রির জন্য দিয়ে দিতে পারবেন। ই-কমার্স কোম্পানিটি আপনার হয়ে উৎপাদনকারী/সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে আপনার ক্রয়কৃত পণ্য সরেজমিনে সংগ্রহ করে তার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে তা সংরক্ষণ করবে, বাজারজাত করবে, ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার গ্রহণ করবে, ডেলিভার করবে, নস্ট পণ্য ফেরত গ্রহণ ও দেওয়া সহ এক কথায় বিক্রি সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ তারাই সম্পাদন করবে এবং নির্ধারিত নিয়মে বিক্রয়লব্ধ টাকা (বিনিয়োগ + মুনাফা) আপনাকে পরিশোধ করবে। ই-কমার্সের পরিভাষায় এই পদ্ধতিকে Resell এর পাশাপাশি বলা হয় Fulfilment। বিশ্ব বিখ্যাত ই-কমার্স কোম্পানি এ্যামাজনও(Amazon) এই পদ্ধতিতে লক্ষ লক্ষ ব্যবসায়ীকে 'বিক্রয় সেবা' দিয়ে আসছে।

junglescout.com এ এ্যামাজনের 'ফুলফিলমেন্ট' সম্পর্কে এভাবে বলা হয়েছে যে, Fulfillment by Amazon, or FBA is a service provided by Amazon that takes care of inventory storage, order fulfillment, returns, and even customer service for Amazon sellers. FBA allows sellers to focus on other aspects of their business while having Amazon handle storage, picking, packing, and shipping out orders. It’s a favored business model: 86% of third-party sellers use FBA. অর্থাৎ Amazon Fulfillment, বা সংক্ষেপে FBA হলো এ্যামাজন দ্বারা প্রদত্ত একটি পরিষেবা যা পণ্য সংগ্রহপূর্বক সংরক্ষণ, অর্ডার গ্রহণ, রিটার্ন, এমনকি বিক্রেতাদের জন্য গ্রাহক পরিষেবার দায়িত্ব গ্রহণ করে । FBA বিক্রেতারা তাদের ব্যবসার অন্যান্য দিকগুলিতে ফোকাস করতে পারে যেহেতু  Amazon নিজেই স্টোরেজ হ্যান্ডেল, পিকিং, প্যাকিং এবং অর্ডার আউট করার কাজ করে থাকে। এটি একটি পছন্দের ব্যবসায়িক মডেল। থার্ড পার্টি  বিক্রেতাদের প্রায় ৮৬% এ্যামাজনের এই ব্যবসায়িক মডেলটি ব্যবহার করে।

বলা বাহুল্য, পৃথিবীব্যাপী লক্ষ লক্ষ ব্যবসায়ী  উপরোক্ত মডেলটি পছন্দ করেন এ কারণে যে, তাদেরকে বিক্রির ঝুঁকি নিতে হয়না এবং কোন লজিস্টিক খরচও তাদের নেই। ফলে বিনিয়োগ থাকে সুরক্ষিত এবং খরচ কম হওয়ার কারণে মুনাফাও পাওয়া যায় তুলনামূলক অধিক।

একই কারণে বাংলাদেশেও হাজার হাজার ব্যবসায়ী নগদহাট বাংলাদেশ লি: এর মাধ্যমে ইতোমধ্যেই উক্ত রিসেল( বা Fulfilment by Nagadhat -FBN) ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন এবং উল্লেখযোগ্য হারে  দিন দিন এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

কেন রিসেল বিজনেস করবেন?

বিনিয়োগের সহজতা, নিরাপত্তা ও অধিক মুনাফার পাশাপাশি রিসেল ব্যবসা একজন মানুষ নিম্নোক্ত আরো কয়েকটি কারণে বেছে নিতে পারেন।

১. সময়ের স্বল্পতা
ইকমার্স ভিত্তিক রিসেল ব্যবসাকে মূলত সেকেন্ডারি বা প্যাসিভ ইনকামের ( যে আয়ে সরাসরি সময় ও শ্রম দিতে হয়না ) উৎস হিসেবেই বেশি বিবেচনা করা হয়। যে সকল মানুষ মৌলিক ইনকামের পাশাপাশি অতিরিক্ত বা এক্সট্রা ইনকাম করতে চান, অথচ হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই, তারা দ্বিতীয় এবং এক্সট্রা ইনকামসোর্স হিসেবে রিসেল ব্যবসাকে বেছে নিতে পারেন। কারণ এখানে তার সরাসরি কোন সময় ও শ্রম দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

২. অভিজ্ঞতার অভাব 
ব্যবসায় অভিজ্ঞতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অভিজ্ঞতা ব্যতিরেকে ব্যবসা শুরু করা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বৈ কিছু নয়। যারা নতুন ব্যবসা শুরু করতে আগ্রহী, অথচ ব্যবসায়ের অভিজ্ঞতা নেই- তাদের জন্য 'রিসেল' একটি চমৎকার ব্যবসা হিসেবে গণ্য হতে পারে। এ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস রিসার্চার ব্রয়ান কনোলি রচিত How to resell  নামক প্রবন্ধের একটি কথা উদ্ধৃত করা যেতে পারে। উক্ত প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন If you want to make some extra money or start a new nusiness reselling can be a great way to do it.
অর্থাৎ আপনি যদি এক্সট্রা ইনকাম করতে চান অথবা একটি নতুন ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে এটি করার জন্য 'রিসেলিং' একটি দুর্দান্ত পথ হতে পারে।

৩. হালাল ব্যবসা
মোটা দাগে নিম্নোক্ত পাঁচ পদ্ধতিতে ব্যবসা করলে তা হালাল হিসেবে ইসলামী শরিয়ত অনুমোদন করে। ১. বায়-ই মুশারাকা ২. বায়-ই সালাম ৩. বায়-ই মুজারাবা ৪. বায়-ই মুরাবাহা 
৫. বায়-ই মুয়াজ্জাল

এর মধ্যে বায়-ই মুয়াজ্জাল হলো  'ভবিষ্যতে নির্ধারিত কোনো সময়ে একসঙ্গে অথবা কিস্তিতে উভয় পক্ষের সম্মতিতে মূল্য পরিশোধের শর্তে ক্রয়-বিক্রয়।' মূলত এই পদ্ধতিতেই ই-কমার্স ভিত্তিক রিসেল ব্যবসা সম্পাদিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ রিসেলরগণ থার্ড পার্টি থেকে পণ্য কিনে তা পুনরায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছে বাকীতে প্রদান বা বিক্রয় করে থাকেন। পরবর্তীতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পণ্য বিক্রির টাকা থেকে এককালীন বা কিস্তিতে মূল্য পরিশোধ করেন।


সুতরাং সব শেষে এক কথায় বলতে গেলে, সার্বিক দিক বিবেচনায় রিসেল বিজনেস অনভিজ্ঞ নবীন ব্যবসায়ী এবং কর্মহীন প্রবীনদের জন্য  সময়ের সবচেয়ে সেরা এবং নিষ্কণ্টক আয়ের উৎস হিসেবে যারপরনাই সুবিবেচিত। যার ফলে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

লেখক: সাংবাদিক, জনবক্তা
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ভারতে ১৫০ পর্যটক নিয়ে ভেঙে পড়ল সেতু, স্রোতে ভেসে গেছেন অনেকে
ডেঙ্গুতে একদিনে আরও ১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ২৪৯
ইসরাইলি আগ্রাসন প্রতিরোধে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান
কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যায় ও দক্ষিণখানের কাওলায় রাজউকের মোবাইল কোর্ট
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন: ইশরাক
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

আগতাড়াইল মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উপহার সামগ্রী বিতরণ
ঢাকা উত্তরের কৃষকদল নেতা রাফেলসহ কয়েকজনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ
‘আমার বুড়ো বাপকেও তুই ছাড়িসনি’ বলে আওয়ামী লীগ নেতাকে গণধোলাই
ডিএনসিসির উত্তরায় দিয়াবাড়ি কোরবানির পশুর হাটের বর্জ্য এখনো পড়ে রয়েছে
বিমান বিধ্বস্তে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেন এক যুবক
অর্থ-বাণিজ্য- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik$gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝