দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৪২.৭ শতাংশের মধ্যে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে ধূমপান না করেও প্রায় এক কোটি নারী নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনকি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা। দেশের ৩১.১ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজ গৃহে ও ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী জনসমাগমস্থলে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে বাংলাদেশে পরোক্ষ ধূমপান প্রতিরোধে ‘তামাক-ধোঁয়ামুক্ত শহর’ শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ইয়র্কের সহায়তায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘আর্ক ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, ধূমপানের কারণে বাংলাদেশে বছরে প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায়। আর বিশ্বে প্রতিবছর তামাকের কারণে ৮০ লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ১২ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী পরোক্ষ ধূমপান।
পরোক্ষ ধূমপানের ফলে মৃত্যুর দুই-তৃতীয়াংশ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর নারী ও শিশুরা।
আর্ক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. রুমানা হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রকল্পের প্রধান গবেষক যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ইয়র্কের অধ্যাপক হেলেন এলসি বলেন, নগর স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য তামাক-ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। বাংলাদেশে বিদ্যমান তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী পাবলিক প্লেসসমূহ তামাক-ধোঁয়ামুক্ত করার জন্য সকল পর্যায়ের অংশীজনের যৌথ সহযোগিতা প্রয়োজন। এই গবেষণা প্রকল্পের ফলাফল সরকারকে বিভিন্ন পাবলিক প্লেস তামাক-ধোঁয়ামুক্ত করতে সাহায্য করবে।
ঢাকার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, বর্তমানে শহরাঞ্চলে অসংক্রামক রোগের প্রাদূর্ভাব বেড়েই চলেছে। তামাকের ব্যবহার দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ (সংশোধনী ২০১৩) অনুযায়ী পাবলিক প্লেস তথা জনসমাগমের জায়গাগুলোকে ধূমপান মুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণের সেলের প্রোগ্রাম অফিসার ডা. মো. ফরহাদুর রেজা বলেন, তামাক-ধোঁয়ামুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি ভবন শতভাগ তামাকমুক্ত ঘোষণা করতে হবে।
এতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে এর প্রভাব পড়বে এবং তামাক-ধোঁয়ামুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সদিচ্ছার কথা তুলে ধরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহমুদা আলী বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কাজ চলছে। এ খাতে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব বাজেটও রয়েছে। তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কাজের জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
তামাক-ধোঁয়ামুক্ত পাবলিক প্লেস তৈরি করতে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান নীতি বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন। তিনি বলেন, আইনী সীমাবদ্ধতার কারণে ধূমপান নিয়ন্ত্রণে কাঙ্খিত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে। একইসঙ্গে তামাক কোম্পানীর প্রলোভন ও প্রতারণার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
ঢাকা শহরে শিশু ও শিক্ষার্থীদের পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রাথমিক স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক মোরশেদ বিপুল। তিনি বলেন, ঢাকার ৩৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরোক্ষ ধূমপান থেকে মুক্ত করতে ও তামাক-ধোঁয়ামুক্ত পরিবেশ উপহার দিতে তারা কাজ করছেন।
তামাক-ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে গবেষণা কার্যক্রমের অপ্রতুলতার কথা উল্লেখ করে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মীর আলমগীর হোসেন বলেন, তামাক-ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে গবেষণা বৃদ্ধি করতে হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন ট্রেন স্টেশন ধূমপানমুক্ত করা হয়েছে। অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলোকেও তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিতে হবে।
গণপরিবহনে তামাক-ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মো. হেমায়েত উদ্দিন। তিনি বলেন, গণপরিবহনে তামাক-ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।
আ.দৈ/এআর