রাশিয়ার যুদ্ধ ক্যাম্প থেকে পালিয়ে জীবন বাঁচিয়েছে ২৪ বছর বয়সী বাংলাদেশি যুবক মোঃ আকরাম হোসেন। পরিবারকে জানান, প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসার আগে ও পরের গল্প।
জানান, এই চক্রের সদস্যরা রাশিয়ায় মাসিক দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতনে চকলেট ফ্যাক্টরি, ক্লিনার অথবা বাবুর্চির কাজের আশায় সে সহ ১০ জনকে প্রথমে সৌদি আরব ওমরাহ ভিসায় পাঠায়। সেখানে তাদের রাশিয়ায় বিক্রি করে দেয়া হয় এক সুলতানের কাছে দাস হিসেবে। সেই দাসদের রাশিয়ার সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেন ঐ সুলতান। সেখানে শুরু হয় সামরিক প্রশিক্ষণ, লক্ষ্য তাদের দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে করানো। যুদ্ধে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানালে চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। বন্ধ করে দেওয়া হয় খাবার। এতে বাধ্য হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তারা।
এমনি তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার রাতে নেপালে পালিয়ে যাওয়ার সময় মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য ফাবিহা জেরিন তামান্নাকে সিআইডি’র টিএইচবি শাখার একটি টিম শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে।গ্রেফতারকৃত ফাবিহা ‘তামান্না ড্রীম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডে’র অংশীদার।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী উক্ত ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে।
সিআইডি’র তথ্য মতে একইভাবে ১০ জনের আরেকটি দল সৌদি আরবে অবস্থান করছে। তারা রাশিয়া নিয়ে জোর করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করানো বিষয়ে জানতে পেরে রাশিয়া যেতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়। একারণে তারা সৌদি আরবে কোনো কাজ করতে পারছে না এমনকি দেশে ফিরতেও পারছে না। ভুক্তভোগিদের যুদ্ধে পাঠাতে মদদ যুগিয়েছে গ্রেফতারকৃতের ভাই তুহিন। সে রাশিয়ায় অবস্থান করছে।
সিআইডি বলছে, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধে নাটোরের সিংড়া থানার হুমায়ুন কবির নিহত এবং ঢাকা কেরানীগঞ্জের আমিনুল নামক একজন গুরুতর আহত হয়েছেন ।
রাশিয়া থেকে পালিয়ে বেঁচে আসা নরসিংদীর পলাশ থানার আকরাম হোসেন (২৪) গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে এসে অন্যান্য ভিকটিমের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন। তার নিকট তথ্য পেয়ে যুদ্ধাহত আমিনুলের স্ত্রী (ঝুমু আক্তার) বনানী থানা (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ) এর মামলা নং ০৪ তারিখ- ০৪/০২/২৫, ধারা- ২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ৬/৭/৮/৯ রুজু করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি তদন্ত শুরু করে এবং পরবর্তীতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফাবিহা জেরিন তামান্নাকে গ্রেফতার করে।
সিআইডি, ভুক্তভোগীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। একই সঙ্গে মানব পাচারের এই নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি জোর তদন্ত এবং গ্রেফতার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হয়েছে।
এমআই